শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন

বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে সেমির আশা জাগিয়ে রাখল ইংল্যান্ড

Reporter Name
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১ জুলাই, ২০১৯
  • ৩২৮ বার পঠিত

স্পোর্টস ডেস্কঃ ভারতকে ৩১ রানে হারিয়ে দারুণ এক জয় তুলে নিয়েছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। প্রথমে ব্যাট করে ইংল্যান্ডের দেয়া ৩৩৮ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য পাড়ি দিতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩০৬ রান করতে সক্ষম হয় ভারত। দলের হয়ে রোহিত শার্মা করেন ১০২ রান। বিরাট কোহলির ব্যাট থেকে আসে (৬৬) রান।

বিশ্বকাপের ৩৮তম ম্যাচে নিজেদের সেমিফাইনালের আশা বাঁচাতে ভারতের বিপক্ষে জয় ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প চিন্তা ইংলিশদের মাথায় নেই। তাই সেমির পথটা প্রশস্ত করতে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩৩৭ রানের বড় পুঁজি সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড। দলের হয়ে জনি বায়েস্ট্রো করেন ১১১ রান। এছাড়া বেন স্টোকস ৭৯ ও জেসন রয়ের ব্যাট থেকে আসে ৬৬ রান।

বিশ্বকাপের শুরুর আগে থেকে আসরে হট ফেভারিট দল ছিলো ইংল্যান্ড। আসর শুরুও করে রাজকীয়ভাবে। কিন্তু হঠাৎ খেই হারিয়ে ফেলে দলটি। প্রথম দিকে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি ম্যাচ পারিজত হলেও পরে আবার ঘুরে দাঁড়ায়; কিন্তু মাঝে এসে তরী ডুবতে শুরু করে ইংলিশদের। শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পর পর দুটি ম্যাচ হেরে সেমির পথ হয়ে যায় অনেকটা কঠিন। তাই সেমিতে উঠতে হলে শেষ দুটি ম্যাচ জয় ছাড়া বিকল্প নেই তাদের। অন্যদিকে ভারতের সেমিফাইনাল অনেকটাই নিশ্চিত করেছে তারা। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি জিততে পারলে পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে যাওয়ার পথে এগিয়ে যাবে তারা। আর পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে উঠতে পারলে সেমিফাইনালে তারা চার নাম্বার দলের মুখোমুখি হবে। এমন সমীকরণ নিয়ে বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড ও ভারত। মুদ্রা নিক্ষেপে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ইয়ান মরগান।

আগে ব্যাট করতে নেমে দুর্দন্ত সূচনা করে ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার জনি বায়েস্ট্রো ও জেসন রয়। শুরু থেকেই ভারতীয় বোলারদেরও পর চড়াও হয় দুই ইংলিশ ওপেনার। ওভার প্রতি সাতের ওপর রান তুলতে থাকেন বেয়ারেস্ট-রয়। ভারতীয় বোলাররা রীতিমতো মাথা ঠুকে মরেছেন উইকেটের জন্য। রয়কে ছাড়া যেন ছন্দ খুজে পাচ্ছিল না ইংল্যান্ডের ব্যাটিং। উদ্বোধনী জুটিও ছিল ছন্নছাড়া। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে মাঠে ফিরে সেটি পুষিয়ে দিয়েছেন বেশ ভালোভাবেই। উদ্বোধনী জুটিতে ২২ ওভারেই ইংল্যান্ড তোলে ১৬০ রান। তখনই রানের পাহাড়ে চড়ার আভাস দেয় ইংলিশরা।

দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর ইনিংসের ২৩তম ওভারে অবশেষে উইকেটের দেখা পায় ভারত। ৫৭ বলে ৬৬ রান করে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনের কাছাকাছি রবীন্দ্র জাদেজার দারুণ এক ক্যাচে ফেরেন জেসন রয়। বোলার ছিলেন কূলদ্বীপ যাদব। ৭ চার আর দুই ছক্কায় এই রান করেন রয়।

উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর রানের গতি কিছুটা কমে আসে । তারপরও ৩০ ওভারে দুইশ ছুঁয়ে ফেলে ইংল্যান্ড। রয় আউট হয়ে গেলেও সঙ্গী বায়েস্ট্রো তাণ্ডব চালিয়ে যেতে থাকেন ভারতীয় বোলারদের ওপর। ৯০ বলেই পূর্ণ করেন নিজের ক্যারিয়ারের ৮ম সেঞ্চুরি। তবে সেঞ্চুরি করার পর খুব বেশিদূর এগোতে পারেননি এই ওপেনার। ১১১ রান করে মাথায় মোহাম্মদ শামির বলে রিশাভ পান্তের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান বায়েস্ট্রো। ১০৯ বলে মোকাবেলা করে ১০ বাউন্ডারি এবং ৬ ছক্কায় এই ইনিংসটি সাজান তিনি।

চারে ব্যাট করতে নেমে অধিনায়ক ইয়ান মরগান ৯ বল খেলে মাত্র ১ রান করে আউট হয়ে যান। মোহাম্মদ শামির বলে কেদার যাদবের তালুবন্দী হন ইংলিশ অধিনায়ক।

ওয়ানডাউনে নামা জো রুট ও বেন স্টোকস মিলে চতুর্থ উইকেট জুটিতে তোলেন ৭০ রান। ৫৪ বলে ৪৪ রান করে মোহাম্মদ শামির বলে হার্দিক পান্ডিয়ার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান জো রুট। পঞ্চম উইকেটে জস বাটলার-স্টোকস জুটিতে ওঠে ৩৩ রান। ৮ বলে ২০ রান করে শামির বলে তার হাতেই তালুবন্দী হয়ে ফেরেন বাটলার। ৫৪ বলে ৭৯ রান করে আউট হন স্টোকস। ৬ বাউন্ডারি এবং ৩ ছক্কায় এই ইনিংসটি সাজান তিনি। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩৩৭ রানের বড় পুঁজি সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড।

ভারতীয় বোলারদের মদ্যে মোহাম্মদ শামি ৫টি, জাসপ্রিত বুমরাহ ও কুলদীপ যাদব একটি করে উইকেট শিকার করেন।

ইংল্যান্ডের দেয়া ৩৩৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ৮ রানের মাথায় ব্যক্তিগত শূন্য রানে লোকেশ রাহুলকে ফেরান ক্রিস ওয়াকস। ওয়ানডাউনে ব্যাট করতে নামেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। লোকেশ আউট হলে বিরাট ও আরেক ওপেনার রোহিত শার্মা দুজনে দেখে-শুনে ধীরগতিতে রান তুলতে থাকেন। যেটা ভারতীয় দুই ব্যাটসম্যানের সাথে যায় না এমন মন্থর ব্যাটিং। পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে ভারত তোলে মাত্র ২৮ রান! তবে ১৫ ওভারের পর রানের চাকা সচল করেন দুজনে। এই ম্যাচে অর্ধশতক তুলে নিয়ে বিশ্বকাপে রেকর্ড করেছেন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। টানা পাঁচ ম্যাচে অর্ধশতক করে বিশ্বকাপে স্টিভেন স্মিথের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ৭৬ বলে ৭ চারে ৬৬ রান করে বিরাট আউট হন লিয়াম প্লাঙ্কেটের শিকার হয়ে। বিরাট-রোহিতের জুটি থেকে আসে ১৩৮ রান। তৃতীয় উইকেটে রোহিত-ঋষভ পান্ত মিলে গড়েন ৫২ রানের জুটি। রোহিত শার্মা তুলে নেন ক্যারিয়ারের ২৫তম সেঞ্চুরি। শতক হাঁকিয়ে থাকতে পারেননি আর বেশিদূর ১০৯ বলে ১৫ চারে ১০২ রান করে ওয়াকসের বলে বাটলারের তালুবন্দী হয়ে ফেরেন। ৩২ রান করে ঋষভ ফেরেন প্লাঙ্কেটের বলে। ৩৩ বলে ৪৫ রান করে হার্দিক পান্ডিয়াকে ফেরান সেই প্লাঙ্কেটই। শেষ দিকে অপরাজিত মহেন্দ্র সিং ধোনির ৩১ বলে ৪২ ও কেদার যাদবের ১৩ বলে ১২ রান শুধু হারের ব্যবধান কমিয়ে আনতে পেরেছে কিন্তু জয় ছিনিয়ে আনতে পারেনি ভারত। বড় কোনো শর্ট খেলতে পারেনি শেষের দিকে। নিথর ব্যাটিংয়ে ম্যাচ টলে যায় ইংল্যান্ডের পক্ষেই। ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩০৬ রানে থেমে যায় কোহলিদের ইনিংস। এই জয়ে সেমির পথ অনেকটা সহজ হয়ে গেলো ইংলিশদের।

ইংলিশ বোলারদের মধ্যে লিয়াম প্লাঙ্কেট ৩টি ও ক্রিস ওয়াকস ২টি করে উইকেট শিকার করেন।

ব্যাট হাতে ১১১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলের বড় পুঁজিতে অবদান রেখে ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন ইংল্যান্ডের ওপেনার ব্যাটসম্যান জনি বায়েস্ট্রো।
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2019 Prothomsheba
Theme Developed BY ThemesBazar.Com