শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:০৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
নবীগঞ্জে সেনাবাহিনীর অভিযান বিপুল পরিমাণ দেশী-বিদেশী মদসহ ২ যুবক গ্রেফতার উবাহাটায় ৪০ কেজি গাঁজাসহ ২ মাদক কারবারি গ্রেফতার শায়েস্তাগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় বাস ও প্রাইভেটকার খালে ॥ আহত ১৫ নবীগঞ্জের বোয়ালজুর গ্রামে কৃষকের সবজি বাগান কর্তন করে লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি মাধবপুরে ৫০ কেজি গাঁজাসহ যুবক গ্রেপ্তার হবিগঞ্জ-বানিয়াচং সড়কে দুই সিএনজি অটোরিকশার সংঘর্ষে একজন নিহত চুনারুঘাটে বাড়ির রাস্তা নিয়ে বিরোধ ॥ একই পরিবারে বৃদ্ধসহ ৭ জনকে কুপিয়ে জখম কমলগঞ্জে ডাকাতি করতে গিয়ে হবিগঞ্জের ৪ যুবক আটক মাধবপুরে গ্রাহকের আমানত নিয়ে নিশান’র পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অফিসে কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ চুনারুঘাট সীমান্তে বিজিবির অভিযানে ৮ বস্তা গাঁজা উদ্ধার

মাধবপুরে গ্রাহকের আমানত নিয়ে নিশান’র পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অফিসে কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ

Reporter Name
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৬ বার পঠিত

স্টাফ রিপোর্টার॥ মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়ায় নিশান নামে একটি এনজিও শতকোটি টাকা আমানত নিয়ে গোপন বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। খবর পেয়ে আমানতকারিরা তাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে। বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সাধারণ মানুষকে প্রতি মাসে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা মুনাফার প্রলোভন দিয়ে সারাদেশ শত শত ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা বিদেশ পালিয়ে যাবে এমন খবর পেয়ে শনিবার রাতে শত শত আমানতকরিরা টাকা ফেরত পেতে নিশান তেলিয়াপাড়া সদর দপ্তরে নিশানের চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন বেলাল, পরিচালক জালাল উদ্দিনকে অফিসে রোববার পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রাখে। এক পর্যায়ে গ্রাহকরা নিশানের পরিচালক জালাল উদ্দিনের পাসপোর্ট জমা নিয়ে নেয়। পরে শনিবার রাতে ঘোষণা দেয় তিন মাসের মধ্যে তারা আমানতের টাকা ফেরত দিবেন। কিন্তু তার এ ঘোষণায় আমানতকারিরা ভরসা করতে পারছেনা। ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, বিগত সরকারের আমলে প্রশাসনের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া অতি মুনাফার অফার দিয়ে প্রায় হাজার কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে। নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংক বা ডাকঘর আমানত জমা রাখলে প্রতি লাখে মাসে মুনাফা দেয় ভ্যাট বাদে ৭শ বা ৮শ টাকা। কিন্তু নিশান এনজিওর অতি মুনাফার ফাঁদে পড়ে মাধবপুর উপজেলাসহ হবিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার মানুষ টাকা জমা রাখতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এ সুযোগে নিশানের চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন বেলাল, তার শ্যালক জালাল উদ্দিন, মাসুদ রানা, আমেনা বেগম, সায়েম, গোবিন্দ কৈরি, গোলাপ খা গ্রামে গ্রামে, হাট বাজারে গিয়ে শত শত কোটি কোটি টাকা জমা নিয়েছে। বিশেষ করে যাদের জমি বিভিন্ন শিল্প কারখানায় বিক্রি করেছে তারা বেশি লাভের আশায় লাখ লাখ টাকা জমা করেছে। মাধবপুর ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তারা জানান, নিশান আমানত সংগ্রহ করার বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত আর্থিক কোন প্রতিষ্ঠান নয়। নিশান সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে টাকা জমা নিয়েছে। তাদের কারনে মাধবপুরে ব্যাংককে আমানতকারিরা সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এ সুযোগে অনেক কালো টাকার মালিক সরকারকে ভ্যাট ট্যাক্স ফাঁকি দিতে গোপনে কোটি টাকা জমা করেছে। মাধবপুর সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তা সোলায়মান মজুমদার বলেন, নিশান পরিবেশ, স্বাস্থ্য সমবায় সমিতির অনুমোদন নিয়ে গত ১৫ বছর গোপনে চুনারুঘাট শ্রীমঙ্গলে কর্ম এলাকার বাইরে গিয়ে এনজিওর আদলে ঋন বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেন। তখন নিশানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। পরে মাধবপুর সমবায় সমিতি থেকে সমবায় সমিতির আড়ালে ব্যাংক কার্যক্রমের মত মানুষকে লোভে ফেলে কোটি কোটি টাকা নিয়ে গেছে। এরপর নিশান গত কয়েক বছর ধরে অতি মুনাফার লোভ শত কোটি টাকা নিয়ে গেছে। স্থানীয় ভুক্তভোগী রমেশ কৈরি, রানি বেগম নুর ইসলাম, সাইফুল রাখাল, হৃদয় মিয়া, জায়েদ মিয়াসহ শত শত আমানতকারিরা জানান, নিশানের চেয়ারম্যান বেলাল ২৫ বছর আগে তেলিয়াপাড়ায় প্রতিভা নামে একটি এনজিওর কর্মচারী ছিল। তার শ্যালক জালাল উদ্দিন চাকুরি করতো। পরে বাড়িতে চলে আসে। শ্যালক, দুলাভাই, মাসুদ, গোবিন্দ, গোলাফ খাঁ মিলে পরিবেশ স্বাস্থ্য সোসাইটি নাম দিয়ে আমানত সংগ্রহ করতে থাকে। এখন বেলাল, জালাল, মাসুদ, আমেনা ও তাদের ছেলেদের নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। যাদের বৈধ আয়ের কোন উৎস নেই। তাদের সবার রয়েছে নামিদামি একাধিক গাড়ি, জমিজমা, দেশেবিদেশে ব্যাংক ব্যালেন্স। মাধবপুরে সবকটি ব্যাংক থেকে তারা কোটি কোটি টাকা লেনদেন করেছে। জনগনের টাকা তারা দেশে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছে। স্থানীয়দের দাবি বিগত ১৮ বছর ধরে হবিগঞ্জ শহরের প্রভাবশালী তৎকালীন সরকার দলের এক নেতার ছত্রছায়ায় বেলাল, জালালরা মানুষের টাকা হাতিয়ে নিযেছে। বেলালের মুল বাড়ি হবিগঞ্জ শহরের চরহামুয়া গ্রামে। সেখানে আমানতকারিদের টাকা দিয়ে অনেক জমি কিনেছেন। জগদীশপুর নিশান টাওয়ার নামে বিশাল ভবন তৈরি করেছে। এটি তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ বলে প্রচার করছে। কিন্তু গত এক বছর ধরে আমানতকারিরা পড়েছে মহা চিন্তায়। টাকা ফেরত পেতে প্রতিদিন তেলিয়াপাড়া অফিসে লোকজন জড়ো হয়ে দেনদরবার করছে কিন্তু টাকা ফেরত পাচ্ছেনা। জনতার তোপের মুখে পড়ে নিশানের পরিচালক জালাল উদ্দিন বলেন, তারা মানুষের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা নিয়েছেন। বিভিন্ন ব্যবসায় তারা টাকা বিনিয়োগ করেছেন। ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারনে তারা মানুষের টাকা ফেরত দিতে পারছেনা। টাকা ফেরত দিতে তারা গ্রাহকের কাছে সময় চেয়েছেন। রোববার সকালে তেলিয়াপাড়া নিশান অফিসে গিয়ে দেখা যায় শতাধিক আমানতকারিরা অফিস ঘিরে দাড়িয়ে আছে।
নিশানের চেয়ারম্যান বেলাল, পরিচালক জালাল উদ্দিন পুলিশ প্রহরায় ৪ তলায় আটক রাখা হয়েছে। মাধবপুর থানার তেলিয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বুলবুল আহমেদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ কাজ করছে। যাতে কোন বিশৃঙ্খলা না ঘটে। মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ বিন কাসিম বলেন,আমানত সংগ্রহ করা নিশানের বৈধ কোন সরকারি অনুমোদন নেই। ঘটনা খতিয়ে দেখা দেশের আইন অনুযায়ী প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2019 Prothomsheba
Theme Developed BY ThemesBazar.Com