প্রথম সেবা ডেস্কঃ দেশে কর্মক্ষম তরুণ যাদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছর, তাদের এক-তৃতীয়াংশ কোন কাজে, শিক্ষায় বা প্রশিক্ষণে নেই। এই তরুণদের ১৭ ভাগ পুরুষ এবং ৮৩ ভাগ নারী। নিষ্ক্রিয় এই তরুণ যারা কিছুই করছে না তাদের সংখ্যা তুলনামূলক সিলেটে বেশি (৩২.৯%)। এর পর বেশি রয়েছে চট্টগ্রাম (২৯%), বরিশাল (২৮.৮%), ঢাকা (২৬.৬%), খুলনা (২৫.৬%), রাজশাহী (২২.৪%) ও রংপুর (২৫.৩%)। তবে ছেলেদের হার তুলনামূলক বরিশালে বেশি (১২.৪%) লক্ষ্য করা গেছে। সবমিলিয়ে এই তরুণদের সংখ্যা প্রায় ৭৪ লাখ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপের পর করা এক বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ‘বাংলাদেশের শ্রম পরিসংখ্যান-একটি গবেষণামূলক বিশ্লেষণ’ শিরোনামে এই প্রতিবেদনে শ্রমশক্তির অঞ্চল ভিত্তিক বিশ্লেষণ ছাড়াও, জনতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, শিক্ষার অবস্থান, বয়স ভিত্তিক বিভাজনসহ শহর-গ্রামের চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মহীন এই তরুণ যারা কোন শিক্ষা কার্যক্রম বা প্রশিক্ষণে নেই তারা সামাজিক অন্তর্ভুক্তির বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর আগে গতবছর শুরুর দিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তথ্য নিয়ে শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে এই তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কাজেও নেই, পড়াশোনাও করে না, এমন তরুণ-তরুণীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অথচ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে ২০২০ সালের মধ্যে কাজ ও পড়াশোনা কোনোটিই করেন না, এমন তরুণ-তরুণীর হার ২২ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ রয়েছে। বিশেষ করে যে মেয়েরা শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে চলে গেছে তারা বাল্য বিবাহের ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশে এই কর্মহীন তরুণদের জন্য উদ্বেগ রয়েছে।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, আমরা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট বা জনসংখ্যাগত বোনাসকে কাজে লাগানোর কথা বলছি, অথচ তরুণদের বড় অংশ কাজের বাইরে রয়ে গেছে, এটা উদ্বেগের বিষয়। তাছাড়া এসডিজির লক্ষ্য অর্জন করতে হলে শোভন কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। তরুণদের বড় অংশকে বাইরে রেখে এটা সম্ভব নয়।
তিনি আরো বলেন, আমরা দেখেছি, যেসকল অঞ্চলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশি আসছে সেসব অঞ্চলের তরুণদের মাঝে এই প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এজন্য পরিকল্পিত ভাবে তরুণদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন সরকার বিভিন্ন এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে, সেসব স্থানে তরুণদের কীভাবে আরো কর্মসংস্থান তৈরি করা যায় সে বিষয়টি দেখতে হবে।
উল্লেখ্য, প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে ১৫ বছরের উপরে জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ১১ কোটি। এর মাত্র ৫৮ ভাগ কর্মে নিয়োজিত রয়েছে। অর্থাত্ ৬ কোটি মানুষ কর্মে নিয়োজিত। এর ৮৫ ভাগই অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মে নিয়োজিত রয়েছে।
সৌজন্যেঃ দৈনিক ইত্তেফাক
Leave a Reply