বাহুবল সংবাদদাতা: করোনাভাইরাসের প্রকোপে ঠেকাতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। ইতোমধ্যে হবিগঞ্জ জেলায় ১১ জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন বাহুবল উপজেলার বাসিন্দা।
সোমবার দিবাগত রাত ১টা ৭ মিনিট থেকে বাহুবল উপজেলার তিনটি গ্রাম লকডাউন ঘোষনা করেছে উপজেলা প্রশাসন।
বাহুবল উপজেলা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রশাসনের পক্ষ হতে আরোপ করা হয়েছে লকডাউন।
শুধু প্রশাসনই নয়, এলাকাবাসীর উদ্যোগেও শুরু হয়েছে ব্যতিক্রমী লকডাউন। বাহুবলে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরার নির্দেশনা বাস্তবায়নে উপজেলা শহরের বিভিন্ন মহল্লা ছাড়াও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন গ্রামে মূল সড়কের সাথে সংযোগকারী সড়কগুলোর মুখে বাঁশের খুঁটি কিংবা গাছের গুড়ি দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন এলাকাকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহি গ্রাম পশ্চিম জয়পুরের প্রবেশদ্বার মিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের সামনে বাঁশ দিয়ে লকডাউন করে দেয় গ্রামের যুবকরা।
এ ব্যাপারে কথা হয় মিরপুর বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী ও পশ্চিম গ্রামের বাসিন্দা সবুজ মিয়ার সাথে।
তিনি বলেন, ‘দিন যত যাচ্ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি তত বাড়ছে। ইতোমধ্যে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ হতে অনেকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে এসেছেন বলে পরীক্ষায় ধরা পড়েছে। আমরা কোনোরকম ঝুঁকি নিতে রাজি নই। এ জন্য আমাদের গ্রামে কেউ যাতে যানবাহনে চড়ে প্রবেশ করতে না পারেন সে জন্যই এ ব্যবস্থা। এছাড়া অপরিচিতদেরও তাদের গন্তব্যস্থল নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’
বাইরে থেকে আগতদের নিয়ে উদ্বিগ্নতার কথা জানিয়ে একই গ্রামের আরেক বাসিন্দা দুবাই প্রবাসী জয়নাল আবেদিন ফারুক বলেন, ‘এখানাকার অনেকে রাজধানী ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় চাকরি করেন। অনেকের আত্মীয়-স্বজন রয়েছে সেখানে। এ সময়ে তাদের কেউ যাতে আত্মীয়দের বাড়ি বা নিজ বাড়িতেও না আসেন সে জন্য আমাদের এ ব্যবস্থা।’
পশ্চিম জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা ফার্নিচার ব্যবসায়ী রাসেল মিয়া বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার বিনা প্রয়োজনে কাউকে রাস্তায় নামতে নিষেধ করেছে। এমনকি এক এলাকা হতে আরেক এলাকায় চলাচলেও বিধিনিষেধের কথা বলা হয়েছে। এ অবস্থায় অন্য এলাকার মানুষ যেন সহজেই এখানে ঢুকে পড়তে না পরেন সে জন্যই এলাকার সড়কের প্রবেশপথ এভাবে আটকে দেয়া হয়েছে।
পশ্চিম জয়পুর গ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন গ্রামেও এখন এভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। তবে অ্যাম্বুলেন্স কিংবা পুলিশের টহল ছাড়াও জরুরি প্রয়োজনে এসব তুলে নিয়ে যান চলাচলের ব্যবস্থা রাখা আছে, যোগ করেন তিনি।
পশ্চিম জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা ফয়জাবাদ হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক তরুন প্রজন্মের আইডল বেনজির আহমদ শাওন বলেন, নিজের গ্রামকে রক্ষা করতে যা করার প্রয়োজন আমরা তাই করব। আমরা পশ্চিম জয়পুর সমাজ কল্যান পরিষদ নামের একটি গ্রুপের মাধ্যমে গ্রামে কর্মহীন,মধ্যবিত্ত,অসহায় হতদরিদ্রদের পাশে দাড়ানোর ব্যবস্থা করছি, তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছি, রমজানের আগের দিন ওই সমস্ত পরিবারে রমজানের খাবার পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করে যাচ্ছি।
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার শামীম আহমদ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি খুবই খারাপ, আমরা ঘরে থাকি,খাবারের চিন্তা করার দরকার নেই,খাবার পৌঁছে যাবে ঘরে ঘরে। নিজের গ্রামকে নিজেই সুরক্ষিত রাখতে হবে।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী বলেন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের নানা উদ্যোগের পাশাপাশি শহর থেকে শুরু করে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটি করা হয়েছে। মানুষকে ঘরে রাখার জন্য করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটিকে সাথে নিয়ে যদি এমন উদ্যোগ নেয়া হয়, তবে সেটিকে সাধুবাদ জানাই। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মনীতি ও সরকারের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
Leave a Reply