অনলাইন ডেস্কঃ এ শহরের অলিগলি ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভিভিয়ান। খুঁজে চলেছেন জন্মদাত্রী মাকে।
৩৯ বছরের ভিভিয়ান গুইডো জার্মানিতে থাকেন। পেশায় আইনজীবী। বাংলার ‘ব’ জানা নেই। শুধু জানেন, এই কলকাতা শহরের কোনও এক মায়ের কোলে তাঁর জন্ম। সেই মায়ের সন্ধানেই এ শহরে এসেছেন তিনি।
অনেক ঘোরাঘুরির পরে শুক্রবার শুধু জানতে পেরেছেন যে, তাঁর মায়ের নাম পুষ্পা। যে ব্যক্তি ১৯৮০ সালে চার দিনের ভিভিয়ানকে মাদার টেরিজার শিশু ভবনে দিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁরই বাড়ির আশপাশে সেই পুষ্পা নামের মহিলা থাকতে পারেন, এমনটা আশা করে এ দিন দুপুরে ঢুকেছিলেন রয়েড লেনের বস্তিতে। পুষ্পা নামে দুই মহিলার দেখাও পেয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে এক জন জানিয়েছেন, অভাবের তাড়নায় বহু বছর আগে নিজের এক সন্তানকে তিনি শিশু ভবনে দিয়েছিলেন। কিন্তু এই পুষ্পার দাবি, সেই সন্তান ছিল কন্যা। অনেকটা এগিয়ে গিয়েও ধাক্কা খেয়েছেন ভিভিয়ান।
ভিভিয়ানকে দত্তক নিয়েছিল জার্মান গুইডো পরিবার। ঠিক যেমন সোনা মুথুলিঙ্গমকে নিয়েছিল সুইৎজারল্যান্ডের মারান্ডি পরিবার। সেই সোনা জন্মদাত্রীর খোঁজ পেতে ২০১৩ সালের অগস্টে এ শহরে তাঁর দুই প্রতিনিধিকে পাঠিয়েছিলেন। সংবাদপত্রে সোনার কথা পড়ে হরিণঘাটার এক মহিলা নিজেকে সোনার জন্মদাত্রী মা বলে দাবি করেন। কিন্তু সেই মহিলার সঙ্গে সোনার ডিএনএ মেলেনি।
ভিভিয়ান সোনার গল্পটা জানেন। দু’জনের জীবনের অদ্ভুত সমাপতন— দু’জনকেই এ শহর থেকে ১৯৮১ সালে দত্তক নেওয়া হয়েছিল।
ভিভিয়ান জানিয়েছেন, বড় হওয়ার পর থেকেই জন্মদাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের ইচ্ছেটা প্রবল হতে থাকে। ২০০৭ সাল থেকে মাদার টেরিজার শিশু ভবনের সঙ্গে চিঠি চালাচালি করে শুধু ল্যাজারাস পদবির এক ব্যক্তির সন্ধান পান। জানতে পারেন, ১৯৮০ সালের ৮ মার্চ সেই ব্যক্তি ভিভিয়ানকে শিশু ভবনে রেখে যান। এক বছর পরে রেড ক্রস সংস্থার মাধ্যমে জার্মানি। পালক বাবা ছিলেন পুলিশ অফিসার।
গত বছরে বান্ধবীকে নিয়ে কলকাতায় এসেছিলেন ভিভিয়ান। শিশু ভবনে গিয়ে তাঁর জন্মদাত্রীর সম্পর্কে বিশেষ কোনও তথ্য পাননি। সপরিবার আবার ফিরে এসেছেন এ শহরে। সঙ্গে এনেছিলেন পুণের বাসিন্দা, শিশু পাচারের বিরুদ্ধে কাজ করা আইনজীবী অঞ্জলি পওয়ারকে। তাঁরা জানতে পারেন, যে ব্যক্তি ভিভিয়ানকে শিশু ভবনে এনেছিলেন, তাঁর নামও ভিভিয়ান। পুরো নাম ভিভিয়ান ল্যাজারাস। তিনি আর্মেনিয়ান সম্প্রদায়ের। আর্মেনিয়ানদের গির্জায় গিয়ে পূর্ব কলকাতায় ল্যাজারাসদের ঠিকানা খুঁজে বার করেন অঞ্জলিরা। জানা যায়, ১৬ বছর আগে মারা গিয়েছেন সেই ভিভিয়ান। তাঁর পরিবারের কেউ পুষ্পা নামের কাউকে চেনেন না।
এর মাঝে কলকাতায় আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করে দত্তক নেওয়া সংক্রান্ত আদালতের যাবতীয় কাগজপত্র জোগাড়ের চেষ্টা করেন অঞ্জলি। বৃহস্পতিবার অঞ্জলি কলকাতা ছেড়ে চলে গেলে শুক্রবার শিশু ভবন থেকেই পুষ্পার নাম জানতে পারেন ভিভিয়ান। জানতে পারেন ল্যাজারাসেরা এর আগে রয়েড লেনে থাকতেন। পুষ্পা তাঁদের বাড়ির কাছাকাছি কোথাও থাকেন বলে আশা জাগে তাঁর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিফল হয়েই ফিরতে হয়েছে। শিশু ভবনে যোগাযোগ করা হলে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি সিস্টারেরা।
এ দিন সুইৎজারল্যান্ড থেকে সোনা জানিয়েছেন, মাকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। জানান, এ কারণে ভগবানের উপর থেকেও তিনি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছেন। লড়াইটা অবশ্য ছাড়তে চান না ভিভিয়ান। শনিবার শহর ছাড়লেও আবার ফিরে আসবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
সুত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা
Leave a Reply