নুর উদ্দিন সুমন :দেশের চলমান পরিস্থিতি করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরুধে মানুষজনকে ঘরে রাখতে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন জেলার প্রত্যেক নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ। জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাদের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে জনসাধারণকে সচেতন করতে এবং জনসমাঘমরোধে সকাল থেকে রাত অবধি বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে থাকা প্রায় সকল কর্মকর্তাদের ভাষ্য- আপনারা ঘরে থাকুন । আপনাদের নিরাপত্তা দিতে আমরা বাইরে আছি। তারা বলছেন করোনা সংক্রমণের এই সময়টাতে বাড়তি দায়িত্ব পালন করেও মানুষের সুস্থতা নিশ্চিত করা যায়। তবেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে। ইউএনও ওসির পাশাপাশি দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত আছেন উপজেলা ভুমি কর্মকর্তারাও (সহকারী কমিশনার ) জণগণকে সচেতনতার পাশাপাশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় ও দায়িত্ব পালন করছেন তারা।
দায়িত্ব পালনে ছুটছেন নিজ নিজ উপজেরার এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে । বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যেনো ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য ২৫ মার্চ থেকে সারাদেশের মতো হবিগঞ্জ জেলায়ও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। বন্ধ রয়েছে সব ধরনের দোকানপাট। প্রয়োজন ছাড়া মানুষজনকেও ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। এ নিষেধ করারপর থেকে ভাড়তি দায়িত্ব পারন করতে হচ্ছে জেলার বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরুধে মানুষজনকে সতর্ক করা , ঘরে থাকার প্রয়োজনীয়তা ,বাজার মনিটরিং, কিংবা হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকাদের খোজ-খবর রাখতে একটানা দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে তাদের। তবে এসব নির্দেশনা পালনে বেশ তৎপর ও আন্তরিকতা দেখা গেছে জেলার বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নিগ্ধা তালুকদারকে ।
বাহুবল উপজেলার জনগণকে করুনার সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে সচেতন করা, হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষের খোঁজ-খবর রাখছেন তিনি। এরই মধ্যে তাঁর এসব কর্মকান্ডের কারণে সাহসী নারী হয়েও’ ইউএনও হিসেবে আখ্যা পেয়েছেন উপজেলাবাসীর কাছে। উপজেলার সব মহলে তিনি এক সাহসী ও সৎ নারী হিসেবে পরিচিত। প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর কর্মকান্ড প্রশংসনীয় এবং দৃশ্যমান।
কোথাও কোন রকম আইনের ব্যত্যয় ঘটলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইন অমাণ্যকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানাও করছেন তিনি। করোনা ভাইরাসকে পুঁজি করে অসাধু ক্রেতারা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। এ জন্য উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাজার নজরদারি করে জরিমানাও করেছেন অসাধু দোকানীদের বিরুদ্ধে। তাঁর এসব কর্মকান্ডের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। অনেকের মতে, প্রশাসনিক অন্যান্য পুরুষ কর্মকর্তার চেয়ে নারী কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর কর্মকান্ড প্রশংসনীয় এবং দৃশ্যমান।জানা গেছে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে জনগণকে সচেতন এবং হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উপজেলার বিভিন্নস্থানে ছুটে চলছেন তিনি। এদিকে, ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে হাট বাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন বন্ধ রাখর ঘোষণা দেয় সরকার। এতে বিপাকে পড়ে নিন্ম আয়ের মানুষ। তাদের কথা চিন্তা করে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন এ কর্মকর্তা। নিজ উদ্যোগে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। রাতের বেলা ঝুঁকি নিয়ে নিজ হাতে অসহায়দের মাঝে তুলে দিয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী। এ সময় তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, হাট-বাজার বন্ধ হওয়ায় সবচেয়ে বেশি খেটে খাওয়া ও অসহায় মানুষগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাদের একজনের রোজগারে পুরো পরিবার চলতো। এখন তাদের উপার্জন বন্ধ। এ জন্য সাধ্য অনুযায়ী আমি তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। এছাড়া, সচেতনতার পাশাপাশি অসহায় মানুষদেরকে মাস্ক বিতরণ ও বৃদ্ধা নারীদের মাস্ক পড়িয়ে দিচ্ছেন।
অন্যদিকে, মরনব্যাধী এ অদৃশ্য ঘাতকের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন থাকতে তাঁর অফিশিয়াল ফেইসবুক পেজেও বিভিন্ন পরামর্শ দেন তিনি। প্রশাসন কর্তৃক্ষ নির্দেশনা মেনে চলে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের কল্যাণার্থেই কাজ করে যাচ্ছি। সকাল অবধি রাত পর্যন্ত বাহিরেই কাটাচ্ছি আপনাদেরই জন্য। চাইলেই ঘরে থাকতে পারছিনা। বাহুবল উত্তর প্রান্ত থেকে ফোন আসেতো দক্ষিণ প্রান্ত থেকে মিনিটেই। আমার একজনের পক্ষে পুরোটা কাভার করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। আপনারা যে যার অবস্থান থেকে কাজ না করলে এ অঞ্চলকে সুরক্ষিত রাখা অসম্ভব হবে। কোনো ঝামেলা থাকলে অবশ্যই আপনার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, মেম্বারকে আগে জানাবেন। আমাদের প্রদত্ত নির্দেশনাসমূহ মেনে চলুন, এটাই হবে আপনাদের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সহযোগিতা। একান্ত অত্যাবশকীয় না হলে ঘর থেকে বের হবেননা। নির্দেশনার ব্যত্যয় হলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply