নুর উদ্দিন সুমন ॥ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার রঘুনন্দন সংরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণলয়ের অনুমতি ছাড়া রিজার্ভ ফরেস্টর ভিতর দিয়ে জোড়পুর্বক রাস্তা করা নিয়ে ঠিকাদার ও ফরেস্ট লোকজনের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়েছে। এখবর স্থানীয় লোজনের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান সৃষ্টি হলে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। রঘুনন্দন রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন জানান, গত মঙ্গলবার সকালে উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের সংরক্ষিত রঘুনন্দন রেঞ্জের বনাঞ্চলে ক্ষতিসাধন করে রাস্তা নির্মাণ শুরু করেন স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও ঠিকাদারগণ।
এসময় স্থানীয় বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বনের উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণে বাধা দিলে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অফিসার সত্যজিত রায় দাশ,উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মাসুদ রানা, উপজেলা প্রকৌশলী মিশু কুমার দত্ত, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্লাবন পাল ও অফিসার ইনচার্জ শেখ নাজমুল হকসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় লোকজনদের শান্ত করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, বন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত উল্লেখিত বনের ভিতর কাজ না করার নির্দেশ প্রদান করেছি বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। বন বিভাগ জানিয়েছে, সংরক্ষিত এ বনের মধ্যে জেলার চুনারুঘাটের সবচেয়ে জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ এলাকা রঘুনন্দন। সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির যেমন, চিকরাশি গামার, চাপালিশ আমলকী হরিতকি, অর্জুন, কড়ই,সহ প্রায় ২৫/৩০ প্রজাতির গাছ, ও ৪০/৪৫ প্রজাতির ঔষধী লতাপাতা, গুল্ম এবং শতাধিক প্রজাতির বন্যপ্রাণীর নিরব আশ্রয়স্থল। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হলে তা এ বনে থাকা জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি ডেকে আনবে।
গাছ পাচার অপরাধীদের আনাগোনা বাড়বে। অদুর ভবিষ্যতে বসতি স্থাপন দেখা দিবে। সংরক্ষিত বনাঞ্চল সক্রিয়তা হারাবে। পাশাপাশি অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিগনিত হবে। জীব বৈচিত্র্যের স্বার্থে এ ধরণের প্রকল্প থেকে সরে আসা উচিত। এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে ঠিকাদার উক্ত রাস্তা করছে, সেখানে আমার কিছু নয়। সহকারী বন সংরক্ষক মো: মারুফ হোসেন জানান রঘুনন্দন বনাঞ্চল হুমকির মুখে ফেলে, সংরক্ষিত বনের ১ কিলোমিটার ভেদ করে রাস্তা বানাতে চায় পিআইও অফিস। এতে ধংস হতে পারে বনাঞ্চল, বন বিভাগের আপত্তির পরও বনকে দ্বিখণ্ডিত করে তাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় প্রকল্প সংস্থা । এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঝুঁকিতে পড়বে সেখানে থাকা দুর্লভ প্রজাতির হাজারো উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণি। কাটা পড়তে পারে গাছ। নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে পরিবেশ প্রভাব নিরূপন সমীক্ষা নিকে হয়। কিন্তু এ প্রকল্প কোনো ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই তাদের কাজ এগিয়ে নিতে চাইছে। যা পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্যের জন্য হুমকী।
Leave a Reply