স্পোর্টস ডেস্কঃ তীব্র দূষণে ভারী হয়ে উঠেছে দিল্লির বাতাস। সেই বাতাসেও নাকি স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পারছেন টাইগারদের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো! তার শিষ্যরাও কি তা পারছেন? পারারই কথা। বিগত কিছুদিন বাংলাদেশের ক্রিকেটে যা ঘটে গেল, ওই অস্থিরতায় বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়া ছিল কঠিন। ক্রিকেটারদের আন্দোলন শেষ হতে না হতেই সাকিব আল হাসানের ওপর আইসিসির নিষেধাজ্ঞা মাঠের বাইরের এই ইস্যুগুলোতে পরিস্থিতি ছিল রীতিমতো ঝঞ্ছা বিক্ষুব্ধ, দম বন্ধ করা, অস্বস্তিকর। সবকিছু মিলিয়ে স্বাভাবিক প্রাণচাঞ্চল্য হারিয়েছে দেশের ক্রিকেট। সেই প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসতেও বোধকরি খুব বেশি সময় লাগবে না, যদি মাঠের ক্রিকেটে প্রাণের সঞ্চার করতে পারে টিম বাংলাদেশ। টাইগাররা এখন ভারত সফরে, সেখানে তারা স্বাগতিক দলের বিপক্ষে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলবে। যার শুরুটা হবে আজ, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি
সিরিজের প্রথমটি দিয়ে। পারিবারিক কারণে দলের সঙ্গে যাননি তারকা ওপেনার তামিম ইকবাল। তরুণ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন কাটা পড়েছেন ইনজুরির খড়গে। নিষেধাজ্ঞার কারণে নেই সাকিব। দেশের ক্রিকেটে প্রাণ ফেরানোর এই সিরিজে টাইগাররা তাই পূর্ণশক্তির নয়। শেষ মুহূর্তে এসে নিয়মিত অধিনায়ক সাকিবকে হারানো, বড় এক ধাক্কাই দিয়েছে সতীর্থদের। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠার পর্যাপ্ত সময়ও মেলেনি, তারমধ্যে দিল্লির তীব্র বায়ুদূষণ অনাকাক্সিক্ষত আঘাতে আঘাতে ‘আহত’ টাইগারদের চ্যালেঞ্জটা তাই বড্ড কঠিন।
প্রতিপক্ষ ভারত বরাবরই কঠিন। নিজেদের আঙিনায় রোহিত-রাহুলরা প্রবল শক্তিধর। ঘরের মাঠে সবশেষ ১১টি টেস্ট সিরিজে তারা বিজয়ী। ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করছে নিয়মিত। তাদের বিপক্ষে খর্বশক্তির টিম বাংলাদেশ কতটা কি করতে পারবে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে যথেষ্টই। প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে টি-টোয়েন্টিতে আটবার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ, প্রতিবারই মাঠ ছাড়তে হয়েছে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে। আজকের ম্যাচেও যদি হারের পুনরাবৃত্তি ঘটে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে যদি লাল-সবুজের বিজয়কেতন উড়ে বলার অপেক্ষা রাখে না, সব অস্বস্তি কাটিয়ে ক্রিকেট উৎসবে মাতবে বাংলাদেশ।
ক্রিকেটের কোনো ফরম্যাটেই বাংলাদেশ-ভারত সমকক্ষ নয়। তবে সাম্প্রতিক অতীতে সব ফরম্যাটেই ভারতের সঙ্গে যেভাবে লড়াই গড়েছে টাইগাররা, যেভাবে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে প্রবল প্রতিপক্ষকে তাতে নতুন এক দ্বৈরথের জন্ম হয়েছে। নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলির অনুপস্থিতিতে এই সিরিজে স্বাগতিকদের নেতৃত্ব দিতে যাওয়া রোহিত শর্মার কণ্ঠে তাই সমীহের সুর বাজে। প্রতিপক্ষ শিবিরে সাকিব-তামিমের মতো শীর্ষ ক্রিকেটার না থাকার পরও সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান অবলীলায় বলে দিলেন, ‘বাংলাদেশ খুব ভালো একটি দল। কয়েক বছর ধরে দেখছি তারা কেমন পারফর্ম করছে। শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও। বিশেষ করে আমাদের বিপক্ষে, তারা সব সময় আমাদের চাপে রাখে। তাই এই দলকে ভিন্নভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
প্রতিপক্ষ জানে টিম বাংলাদেশের সক্ষমতার কথা। নিজেদের সক্ষমতা জানে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দলও। সাকিব-তামিমের অনুপস্থিতিতে এগিয়ে চলার পথ কঠিন, তবে সামর্থ্যরে সবটুকু নিংড়ে দিতে পারলে সেই কঠিন পথটাও পাড়ি দেওয়া সম্ভব। শুরুর হতবিহ্বল অবস্থা কাটিয়ে ধীরে ধীরে এই সত্যটা উপলব্ধি করতে পারছে টাইগাররা। তাই অনুশীলনে বেশ চনমনেই দেখাচ্ছে তাদের। ৩০ অক্টোবর দিল্লিতে পৌঁছানোর পরদিন থেকেই ময়দানি লড়াইয়ের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে টিম বাংলাদেশ। শনিবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। সেই অনুশীলনে চওড়া হাসি দেখা গেছে অধিনায়ক মাহমুদউল্লার মুখে। সেই হাসিটা নিসন্দেহে আরও প্রাণবন্ত হবে, যদি মাঠে আজ তার দল নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করতে পারে।
সাকিবের অনুপস্থিতি দলের বোলিং বিভাগে বড় শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। তবে মোস্তাফিজুর রহমান, আল-আমিন হোসেন, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, আরফাত সানিদের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখছেন মাহমুদউল্লাহ। তবে একই সঙ্গে ব্যাটিং বিভাগে সাকিব আর তামিমের অনুপস্থিতি কিছুটা হলেও মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে টাইগার অধিনায়কের। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে তিনি তো বলেই দিলেন, ‘এই মুহূর্তে বোলিং বিভাগ নিয়ে চিন্তিত নই। আমাদের মনোযোগ ব্যাটিং বিভাগে।’ মাহমুদউল্লাহর এই মনোযোগের কারণ অরুন জেটলি স্টেডিয়ামের ব্যাটিংবান্ধব উইকেট। ঘাসের আড়ালে প্রচর রান দেখতে পাচ্ছেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে আফিফ হোসেন, মোহাম্মদ নাঈমদের মতো তরুণদের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে তাকে। তবে দলের ব্যাটিংয়ে মূল ভরসা মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহ নিজেই।
ইনিংসের সূচনায় ঝড় তোলার জন্য লিটন দাস, সৌম্য সরকাররা আছেন। নিজেদের কাজটা আজ তারা ঠিকঠাক করতে পারলে শুরুটা উড়ন্তই হওয়ার কথা। দেশের ক্রিকেটের অস্থির সময় দূরে ঠেলে দিতে, দেশের ক্রিকেটে প্রাণ ফেরাতে ভারত সফরে এমন উড়ন্ত সূচনারই অপেক্ষায় বাংলাদেশ।
Leave a Reply