স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাধবপুর উপজেলার ৫টি চা বাগানসহ লস্করপুর ভ্যালির ২৪ টি চা বাগান দীর্ঘস্থায়ী খরার কবলে পড়েছে। এর আগে চা বাগান দীর্ঘস্থায়ী এমন খরার কবলে পড়েনি। আগে খরার মৌসুমে মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হবার ফলে ফাগুন চৈত্রমাস থেকে সবুজ চা পাতা সংগ্রহ করা গেছে। কিন্তু এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ খরায় চা গাছের শিকড় শুকিয়ে চা গাছ মরে যাচ্ছে। চা গাাছ শিকড় শুকিয়ে মরে গেলে এ গাছ থেকে আর চা পাতা তাড়াতাড়ি সংগ্রহ করা যায়না। হবিগঞ্জের সব কটি চা বাগানের ছড়ায় পানি জমিয়ে রাখা যায়না কারন হচ্ছে পানির স্তর খুব নিচে। তাছাড়া বাগানের মাটি বালুকাময়। মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি হওয়ায় সহজে মাটি গরম হয়ে পড়ে। গত বছর ধরে চা বাগানে চায়ের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় চা বাগান চালানো হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ বছর খরার কারনে বড় ধরনের লোকসানের আশংকা করছেন বাগান সংশ্লিষ্টরা। কারন চা গাছ মরে যাওয়ায় উৎপাদন কমে যাচ্ছে। বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত কৃত্রিমভাবে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। চলতি অর্থ বছরে শুরুতেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে উৎপাদন কমে গেলে অর্থ সংকটে অনেক চা বাগান বন্ধ হওয়া সময়ের ব্যাপার। কারন চা বাগান কৃষি ব্যাংকের ঋনের ওপড় নির্ভরশীল। কিন্তু বাগান মালিকরা বাগানের লোকসানের কারনে ব্যাংকের ঋন পরিশোধ করতে পারেনি। বাগানের দেনার পরিমান এখন বেড়ে গেছে। তাই ব্যাংক এখন অনাদায়ী ঋন রেখে নতুন করে ঋন মনজুর করতে আগ্রহী নন। সবচেয়ে অর্থ সংকটে পড়েছে সরকার মালিকাধীন এনটিসির ১৩ টি বাগান বিগত সরকারের আমলে সরকার মালিকাধীন এনটিসির ১৩টি বাগানে কতিপয় ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার কারনে গত বছর ৮ মাস টাকার অভাবে বাগান বন্ধ ছিল। ৫ আগষ্ট সরকার পরিবর্তনের পর অনেক কর্মকর্তা বাগানের দায়িত্ব থেকে পলায়ন করে। এই ভঙ্গুর পরিস্থিতির মধ্যে কর্তৃপক্ষ বাগান সচল রাখতে কাজ করছেন। এখন খরার কারনে নতুন করে সমস্যার মধ্যে পড়েছেন। বেশি উৎপাদন ও বাজারে ভাল দাম পেলে শ্রমিক কর্মচারী ও ব্যাংকের দায় পরিশোধ করতে পারে। কিন্তু চলতি অর্থ বছরে বড় ধরনের লোকসানের আশংকায় মালিকরা চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া চা-বাগান ও লালচাঁন চা বাগান লোকসানের কারনে গত ৪ বছর ধরে কারখানা বন্ধ রয়েছে। বাগানে কাচা চা পাতা অন্য বাগানে বিক্রি করে যাচ্ছে। এটি প্রথম শ্রেণীর একটি বাগান ছিল। এখন রুগ্ন বাগান হিসেবে পরিচিত। বাগানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, প্রচন্ড তাপদাহ আর অনাবৃষ্টির কারণে বাড়ছে না লস্করপুর ভ্যালির ২৪ টি বাগান লালচে বর্ণ ধারন করেছে। নোয়াপাড়া চা-বাগানে ডেপুটি ম্যানেজার সোহাগ মাহমুদ জানান, এ বছরের মত লম্বা সময় ধরে খরা আগে হয়নি। খরার মাঝেও আগে মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্রমাসে বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বাগানে কচি চা পাতা সংগ্রহের ধুম পড়ে যেত। এখন মাধবপুরে অনেক শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। বায়ুমন্ডলে কারখানার ধুয়া মিশ্রিত হওয়ার কারনে বাগান এলাকায় বৃষ্টির পরিমান কমে গেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এ বছর খরায় চা গাছ লাল হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে বাগানে উৎপাদন কমে যাবে। এমনিতেই চরম সংকটে দেশের চা বাগান। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাগান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কারন উচ্চ সুদে ঋন নিয়ে বাগান চালাতে হয়। কিন্তু সে হারে চায়ের দাম পাওয়া যাচ্ছে না। চা বাগানে গ্যাস, বিদ্যুৎ শ্রমিক মুজুরি সহ সব কিছুর উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সে অনুপাতে চা দাম বাড়ছেনা। তাই বছর শেষে লোকসানের পরিমাণ বাড়ছেই। সুরমা চা বাগানের সিনিয়র ফ্যাক্টরী ম্যানেজার মিরন হোসেন জানান, গত বছর এ সময় বাগানে প্রচুর সবুজ চা পাতা পাওয়া যেত। কিন্তু এখন খরায় চা গাছ টিকিয়ে রাখ কঠিন। কারন সূর্যের খরা তাপ সবুজ চা পাতা সহ্য করতে পারছেনা। চা পাতা লাল হয়ে গোড়ায় শিকড় মরে যাচ্ছে। এখন ফ্যাক্টরীতে অনেক পাতা প্রক্রিয়াজাত করার সময়। কিন্তু সে অনুপাতে কিছুই করা যাচ্ছে না। চা উৎপাদন হলে চা বিক্রি করে শ্রমিকের মুজুরিসহ সব খরচ মেটানোর কথা। কিন্তু উৎপাদন ও বিক্রি কমে গেলে হিসেবে ব্যাপক গরমিল দেখা দেবে। দেশে মোট ১৬৭টি চা বাগান রয়েছে। এনটিসির মহাব্যবস্থাপক কাজী এমদাদুল হক বলেন, চলতি অর্থ বছরে চা বাগানে মানসম্পন্ন ভাল চা পাতা উৎপাদন করতে বাগান সংশ্লিষ্টরা পরিকল্পনা নিয়ে বছরের শুরুতে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু প্রকৃতির বৈরি আচরণের কারনে সব কিছু উল্টাপাল্টা হয়ে যাচ্ছে। চরম খরায় বাগান টিকিয়ে রাখা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। কারন চা শিল্প প্রকৃতির দয়া বৃষ্টির ওপড় নির্ভরশীল। গত কয়েক বছর ধরে চা বাগানে নানা সমস্যা যাচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি হাজারো মানুষের রুটি রুজির অবলম্বন চা বাগান যেন ভালভাবে চলে।
Leave a Reply