অনলাইন ডেস্কঃ ভারতের কাছে হেরে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের। পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা জিতে মাথা উঁচু করে বিশ্বকাপের ময়দান ত্যাগ করতে চেয়েছিল মাশরাফিরা। কিন্তু সেটি আর হলো কই! আগের সব হারা ম্যাচগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল এবার তাও হলো না। ব্যাটিংয়ে এক সাকিব আল হাসান ছাড়া পাকিস্তানি বোলারদের কেউই ঠিকঠাক খেলতেই পারলেন না। ৯৪ রানের পরাজয় তো সেটাই সাক্ষ্য দিচ্ছে। পাকিস্তানের ৩১৫ রানের জবাবে বাংলাদেশ ৪১.১ ওভারে ২২১ রানে অলআউট। এই হারে পয়েন্ট টেবিলের যেখানে ছিল বাংলাদেশ অর্থাৎ সেই সাত নম্বরেই শেষ করতে হলো। পক্ষান্তরে পাঁচে থেকেই বিশ্বকাপ শেষ করল পাকিস্তান। বাংলাদেশের ৭ পয়েন্টের বিপরীতে পাকিস্তানের পয়েন্ট ১১।
শুক্রবার জীবনে শেষ বিশ্বকাপে টস করতে নেমে হেরে যান মাশরাফি। কে জানত টস হারের মতো ম্যাচটাও হেরে যাবেন মাশরাফি। এদিন আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩১৫ রান তুলেছে পাকিস্তান। মোস্তাফিজুর রহমান ৭৫ রানে ৫ উইকেট পেয়েছেন। এ নিয়ে পরপর দুই ম্যাচে পাঁচটি করে উইকেট পেলেন কাটার মাস্টার।
বাংলাদেশকে জিততে হলে ৩১৬ রান করতে হতো। এ জন্য টপ অর্ডারকে দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হতো। সেই দায়িত্ব পালনে ফের ব্যর্থ হয়েছেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। পুরো বিশ্বকাপ জুড়েই দু’ওপেনার ছিলেন ব্যর্থ। শেষ ম্যাচেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেন। সৌম্য মেরে খেলে শুরুটা ভালোই করেছিলেন। কিন্তু মোহাম্মদ আমিরের বলে ধরা পড়লেন পয়েন্টে। ২২ বলে ২২ রান করে আউট সৌম্য। এরপর তামিমের সঙ্গে জুটি বাঁধেন এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান। এই জুটি থিতু হওয়ার আগেই শাহিন শাহ আফ্রিদির অসাধারণ এক ডেলিভেরিতে বোল্ড হয়ে গেলেন তামিম। অবশ্য তামিমের খুব বেশি এখানে করার ছিল না। চেষ্টা করেও আরও একবার ব্যর্থ তামিম। ২১ বলে মাত্র ৮ রান করে ফিরলেন।
৪৮ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে বিপদে পড়া বাংলাদেশকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন সাকিব ও মুশফিকুর রহিম। কিন্তু মুশফিক (১৫) ওয়াহাব রিয়াজের বলে ইনসাইডেজ হয়ে বোল্ড হলে আরও বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। সাকিব-লিটন মিলে বড় জুটির পথে যখন এগোচ্ছেন তখনই আঘাত হানলেন শাহিন আফ্রিদি। তার স্লোয়ার বল বুঝতে না পেরে ক্যাচ তুলে দিলেন লিটন (৩২)। দলের রান যখন ১৫৪ তখন শাহিন আফ্রিদির বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাকিব। বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন মুলত তখনেই মিলিয়ে যায়। সাকিব ৭৭ বলে ছয় চারের সাহায্যে করেছেন ৬৪। আট ম্যাচে সাকিবের এটি পঞ্চম ফিফটি। সেঞ্চুরি মেরেছেন দুটি। সাকিবের সর্বনিম্ন ইনিংস ৪১। মাহমুদউল্লাহ (২৯), মোসাদ্দেক হোসেন(১৬) এবং শেষদিকে মাশরাফির ১৪ বলে ১৫ রানের ইনিংস যা একটু পরাজেয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে। বাংলাদেশের আসল সর্বনাশ একহাতে করেছেন শাহিন আফ্রিদি। মাত্র ৩৫ রান দিয়ে ৬ উইকেট তুলে নিয়েছেন তরুণ এই পেসার। এবারের বিশ্বকাপে এটাই সেরা বোলিং ফিগার। ৫৯ রানে ২ উইকেট শাদাব খানের।
এদিন আগে ব্যাট করতে নেমে ২৩ রানে ফখরকে হারিয়ে চাপে পড়া পাকিস্তানকে টেনে তোলেন ইমাম-উল-হক ও বাবর আজম। দ্বিতীয় উইকেটে এই জুটি ১৫৭ রান যোগ করেছে। সেঞ্চুরির পথে হাঁটতে থাকা বাবরকে সেঞ্চুরি বঞ্চিত করেছেন সাইফউদ্দিন। এলবিডব্লু হয়ে গেছেন তিনি ৯৬ রানে। তখন পাকিস্তান স্কোরবোর্ডে তুলে ফেলেছে ১৮০ রান। বাঁচার জন্য রিভিউ নিয়েছিলেন বাবর, কিন্তু বাঁচতে পারেননি। ৯৮ বলে ১১ চারের সৌজন্যে এই ইনিংস খেলেন তিনি।
বাবর সেঞ্চুরি মিস করলেও ইমাম-উল-হক করেননি। তিনি ঠিকই ৯৯ বলে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। তবে সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ইনিংসটাকে প্রলম্বিত করতে পারেননি। ৪২ তম ওভারে মোস্তাফিজের বলে ব্যাট চালিয়েছিলেন ইমাম। রান নিতে যাওয়ার আগে পায়ের গোড়ালির হালকা আঘাতে বেল পড়ে যায়। থার্ড আম্পায়ারের শরণাপন্ন হন মাঠের আম্পায়ার। সেখানে দেখা যায়, পরিস্কার আউট ইমাম। দূর্ভাগ্যজনকভাবে ইমামকে ফিরতে হয়েছে কাটায় কাটায় ১০০ রান করে। ১০০ বলে খেলা তার এই ইনিংসে ছিল সাতটি বাউন্ডারি।
ইমামের বিদায়ের খানিকবাদেই মিরাজের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মোহাম্মদ হাফিজ (২৭)। একই ভাগ্য বরণ করতে হয় হ্যারিস সোহেলকেও (৬)। তিনি মোস্তাফিজের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন সৌম্যর হাতে। পরপর উইকেট হারানোর পরও যে পাকিস্তানের স্কোর ৩১৫-তে পৌঁছাল সেটা ইমাদ ওয়াসিমের কল্যাণে। তিনি মোস্তাফিজের বলে আউট হওয়ার আগে ২৬ বলে ৪৩ করেছেন।
১০ ওভার বল করে ৭৫ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার মোস্তাফিজুর। এর আগে বাংলাদেশের আর কেউই বিশ্বকাপে পরপর দুই ম্যাচে ৫ উইকেট পাননি। সাইফউদ্দিন ৩ উইকেট পেয়েছেন ৭৭ রানে। তবে বল হাতে সবচেয়ে কিপটে বোলিং করেছেন মিরাজ। ১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে মাত্র ৩০ রান দিয়ে পেয়েছেন ১ উইকেট।
সুত্রঃ আলোকিত বাংলাদেশ
Leave a Reply