অনলাইন ডেস্কঃ ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভার নাম লোকসভা। দিন দুয়েক আগে ঘোষণা হয়েছে লোকসভা নির্বাচনের তফসিল। আর এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের দুজন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী মিমি ও নুসরাতকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে বেশ শোরগোলই বাঁধিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তিনি তার দলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেন।
জানা গেছে, লোকসভার প্রার্থী তালিকায় মমতার তৃণমূল কংগ্রেস দল থেকে তারকার সংখ্যা কমিয়ে রাজনৈতিক মুখের সংখ্যা বাড়ানোর গুঞ্জন চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। সে গুঞ্জনটা সত্যি হল। তৃণমূলের যে প্রার্থী তালিকা মঙ্গলবার ঘোষিত হল, তা থেকে স্পষ্ট যে, অন্তত দুই তারকা সাংসদের ওপর এবার আর ভরসা রাখেননি মমতা। এক তারকাকে জেতা আসন থেকে পাঠিয়ে দিয়েছেন হারা কেন্দ্রে। তবে তারকা-তালিকায় সবচেয়ে বড় চমক মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরাত জাহান।
উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে অভিনেত্রী নুসরাত জাহানকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। বসিরহাটের বিদায়ী সাংসদ ইদ্রিস আলিকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। বসিরহাট মূলত গ্রামীণ এলাকা। সংখ্যালঘু প্রধানও। গ্রামীণ এলাকায় সেলিব্রিটি প্রার্থীদের ঘিরে উন্মাদনা তৈরি হয় অপেক্ষাকৃত বেশি। তার পাশাপাশি নুসরাত সংখ্যালঘু মুখও। ফলে বসিরহাটে নুসরতের সম্ভাব্য সাফল্য নিয়ে ইতোমধ্যেই চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে তৃণমূলের ভিতরে।
তবে নুসরাত জাহানের চেয়েও বড় চমক নায়িকা মিমি চক্রবর্তী। নুসরাত যে প্রার্থী হতে পারেন, সে জল্পনা রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরে বেশ কিছু দিন ধরেই চলছিল। কিন্তু মিমি চক্রবর্তীর নাম সেভাবে আলোচনায় আসেনি। যাদবপুরের মতো আসনে সেই মিমিকে প্রার্থী করে বেশ চমকে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মিমিকে মনোনয়ন দেয়া আসন যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের গুরুত্ব ঐতিহাসিক ভাবেই বেশি তৃণমূলের কাছে। ১৯৮৪ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য হয়েছিলেন এই যাদবপুর থেকেই। তখন অবশ্য তিনি কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু তৃণমূল তৈরি হওয়ার পরে প্রথম লোকসভা নির্বাচনে অর্থাৎ ১৯৯৮ সালেই যাদবপুর তৃণমূলের কৃষ্ণা বসুর দখলে গিয়েছিল। ১৯৯৯ সালেও তাই। ২০০৪ সালে সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীর কাছে হারেন কৃষ্ণা।
তবে ২০০৯ সালে ফের তৃণমূলের কবীর সুমন এবং ২০১৪ সালে তৃণমূলেরই সুগত বসু যাদবপুর থেকে জিতে সংসদে গিয়েছেন। মিমির মতো তরুণ এবং প্রায় সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক কোনও মুখ সেই যাদবপুরে তৃণমূলের প্রার্থী হবেন, এমনটা অনেকেই ভাবতে পারেননি।
মেদিনীপুরের সংসদ সদস্য সন্ধ্যা রায় এবং আরেক তারকা অভিনেতা কৃষ্ণনগরের সংসদ সদস্য তাপস পাল যে মনোনয়ন দৌড়ে হারবেন, সে জল্পনা আগে থেকেই ছিল। এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে সন্ধ্যা রায়কে পাশে নিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান যে, তাকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে না এবং দল তাকে অন্য রকম কাজে লাগাবে। আর তাপস পাল শারীরিক কারণে মনোনয়ন পেলেন না বলে তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে।
সব মিলিয়ে তৃণমূলের এ বারের প্রার্থী তালিকায় তারকা বা সেলিব্রিটি মুখের সংখ্যা ৭। গত বার কিন্তু সংখ্যাটা অন্তত ১০ ছিল। সে বার বহরমপুরে প্রার্থী করা হয়েছিল গায়ক ইন্দ্রনীল সেনকে, উত্তর মালদহে প্রার্থী করা হয়েছিল আর এক গায়ক সৌমিত্র রায়কে। আর দার্জিলিংয়ে প্রার্থী ছিলেন ফুটবলার ভাইচুং ভুটিয়া।
এ বার ওই সব আসনে রাজনৈতিক মুখের উপরেই ভরসা রেখেছে তৃণমূল। বহরমপুরে অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রার্থী করা হয়েছে এককালে অধীরের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ অনুচর হিসেবে পরিচিত অপূর্ব সরকার ওরফে ডেভিডকে। কান্দি থেকে কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হওয়া বিধায়ক ডেভিড এখন রয়েছেন তৃণমূলে। উত্তর মালদহে বিদায়ী সংসদ সদস্য মৌসম নূর কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন আগেই। সেখানে মৌসমই তৃণমূলের প্রার্থী হলেন। আর দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী করা হল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার টিকিটে দার্জিলিং শহরের বিধায়ক হওয়া অমর সিংহ রাইকে।
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত
Leave a Reply