দুই বন্ধু তারা। কিন্তু মাঠ ছেড়ে বেরুলেন গতকাল একেবারে ভিন্ন মুডে। বিপিএলের ফাইনালে সাকিব আল হাসানের ঢাকার হারের কারণ হলেন ১৪১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলা তামিম ইকবাল। আর এমন ইনিংসে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে শিরোপা জিতিয়ে ওপেনার তামিম যেন স্বপ্নের মধ্যে চলে গেলেন। বিশ্বাস হচ্ছে না কীভাবে এমন ইনিংস খেললেন। আর ঢাকার অধিনায়ক সাকিব ভাবছেন, টানা দুই বিপিএলের ফাইনালে একজন করে ব্যাটসম্যান তাদের জন্য এমন হন্তারক হলেন কীভাবে। এর একটা প্রতিষেধক দরকার সামনে।
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ৬১ বলে ১১ ছক্কা ১০ চারে ইনিংসের আদ্যন্ত ব্যাট করেছেন ওপেনার তামিম। গেলবার ঢাকাকে ১৪৬ নট আউট ইনিংস খেলে হারিয়েছিলেন ক্রিস গেইল। তামিমেরটা বিপিএল ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। কিন্তু বাংলাদেশি হিসেবে সবার সেরা। তামিম শিরোপা উৎসবের পর চোখেমুখে নিজের ওপর বিস্ময় নিয়ে বলছিলেন, ‘এটা সম্ভবত আমার দিন ছিল। সত্যি কথা বলতে আমি এখনো স্বপ্নের মধ্যে আছি। এখনো বুঝতে পারছি না কীভাবে আমি এমন ব্যাট করলাম। রুমে গেলে, হাইলাইটস দেখলে তখন হয়তো বুঝব।’ পরে ঢাকা যখন হারানোর হুমকি দিচ্ছে তারা ১৯৯ করার পরও তখন তামিমের দুর্দান্ত দুটি ক্যাচ ম্যাচের মোড় ঘুরিয়েছে। তামিম নিজেও তাতে খুব সন্তুষ্ট।
শুরুর দিকে বিপদে পড়েছিলেন তামিমরা। পরে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ব্যাটিংয়ে। আর একসময় এমন ব্যাট করেছেন যে প্রতিপক্ষেরও হয়তো কখনো কখনো দর্শক হয়ে উপভোগ করতে ইচ্ছে করেছে। এক ইনিংসেই বিপিএলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের জায়গায় চলে এসেছেন। ১৪ ম্যাচে ৪৬৭ তার। আগে ছিল দুটি ফিফটি। তবে প্রথমবারের মতো বিপিএলের ফাইনালে উঠে শিরোপা জেতা আর নিজে এমন বিধ্বংসী ইনিংস খেলার পেছনে বিপিএল ও বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাকে টেনে আনলেন তামিম।
‘আমি খুব টেনশনে ছিলাম। মাশরাফী ভাইয়ের কৌশল ব্যবহার করছিলাম। ওনার মনে কী থাকে জানি না। তবে উনি সব সময় একটা কথা বলেন যে আমি জিতব, আমি জিতব। এই পুরো বিপিএলে আমি ওনার এই কৌশল ব্যবহার করেছি।’ অটো সাজেশনে বিশ্বাস রেখে তামিম বলছিলেন, ‘ওনার কাছ থেকে কপি করা বলতে পারেন। প্রথম দিন থেকে আমি বলে আসছিলাম আমি জিতব।’ আর এদিনের ব্যাটিং পরিকল্পনাই তাকে এগিয়ে দিয়েছে বলে বিশ্বাস তার, ‘সত্যি কথা আমি একদমই চিন্তা করিনি যে এমন একটা ইনিংস খেলব। তবে আমি এর পরিকল্পনা খুব ভালোভাবে করেছিলাম।’
তামিমের তিন টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির মধ্যে এটা সেরা। ‘এখান থেকে শিখলাম যে এটা কীভাবে আমি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে কাজে লাগাতে পারি। টি-টোয়েন্টিতে অবশ্যই এটা আমার সেরা।’ আজই নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমাচ্ছেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে। কিন্তু ওটা ভিন্ন জানিয়ে তামিম বললেন, ‘আমি এমন এক জায়গায় যাচ্ছি যেখানে ভিন্ন ফরম্যাট, ভিন্ন কন্ডিশন, ভিন্ন বোলিং আক্রমণ… আমি যেটা করতে চাই তা হলো শেষ চার বছর ধরে যে প্রক্রিয়াটা আমি মেনে চলছি সেটা করব। ওয়ানডের আগে একটা প্র্যাকটিস সেশন পাব। সেটাকে কাজে লাগাতে চাই। তবে এটাও ঠিক কিছু রান করে যাওয়া সব সময় ভালো ব্যাপার, ইতিবাচক ব্যাপার। সত্যি বলতে আমি জানি নিউজিল্যান্ডে কী করতে হবে। আশা করি ওখানে পারফর্ম করব। ওটা জাতীয় ডিউটি। অনেক বড়।’ এই প্রথম ফাইনালে কোনো দেশি ব্যাটসম্যান জেতালেন। এবং সেটা তিনি। তামিমের খুশির শেষ নেই।
ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হলেও এভাবে হেরে যাওয়ার পর সাকিব দুখী, ‘ফাইনালে এসে হেরে যাওয়া অবশ্যই কষ্টকর। শেষ তিনটা ফাইনাল পরপর খেললাম। প্রথমটা জিতেছি, শেষের দুইটা হেরেছি। দুঃখ আছে একদিক থেকে, আরেকদিক থেকে চিন্তা করলে এমন কারও ইনিংস থাকলে কিছুই করার থাকে না। গতবার গেইলের ১৪৬, এবার তামিমের ১৪১। সুতরাং, দুইটা ইনিংসে আমরা দুইটা ফাইনাল হেরে গেছি।’ দুঃখেই হাসেন এবং সাকিব শেষ করেন এভাবে, ‘সুতরাং, এরপর চেষ্টা করতে হবে এমন ইনিংস যেন কেউ না খেলতে পারে।’
সুত্রঃ দেশ রূপান্তর
Leave a Reply