স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের মধ্যে দেশি ফলের চাহিদা অনেক বেশি। তবে, দেশি ফলের দোকান শহর বা গ্রামের বাজারগুলোতে অনেক কম।
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, ঝুঁকিপূর্ণ বিদেশি ফলের বাজার যতটা রয়েছে তার চেয়ে অনেক কম সংখ্যায় রয়েছে টাটকা ও সুস্বাদু দেশি ফলের বাজার বা হাট। তবে, দেশি ফলের বাজারগুলো কম সংখ্যায় থাকলেও তার চাহিদা অপর্যপ্ত। বিষমুক্ত, তরতাজা ও সুস্বাদু দেশি ফলের স্বাদ নিতে ক্রেতারা এখানে এসে ভিড় করেন।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মৌলভীবাজার জেলায় প্রবেশের মুখেই মুছাই বাজার অবস্থিত। এটির অবস্থান হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল অংশে। শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও চা-বাগানের শেষ সীমানার একটি অংশে প্রায় অর্ধ শতাধিক বছর ধরে চলে আসছে এ বাজারের কার্যক্রম। মধুমাস বর্তমানে আসন্ন। কিন্তু প্রকৃতি তার কিছু কিছু ফল আগে ভাগে আপনা থেকেই উৎপন্ন করে রেখেছে। এই দেশি ফলগুলো কৃষকরা নিজ থেকেই এই বাজারে নিয়ে আসেন। দেশের নানা জায়গা থেকে আসা আড়তদাররা মুছাই বাজারে এসে পাইকারি মূল্যে নিজেদের চাহিদামতো পণ্য কিনে নিয়ে যান। কয়েকটি চা বাগান, আলিয়াছড়া পুঞ্জি (খাসি নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীদের গ্রাম) এবং বৈরাগী পুঞ্জি থেকে নানান ধরনের টাটকা মৌসুম ফল এই মুছাই বাজারে আসে।
সম্প্রতি এক সকালে এই মুছাই বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, চারদিকে কাঁঠাল আর কাঁঠাল। সবচেয়ে বেশি পরিমাণে রয়েছে কাঁঠাল। সংখ্যাগত দিক থেকে তারপরের অবস্থানে রয়েছে লেবু। এরপর নাগামরিচ, আনারস, আম প্রভৃতি। পুরুষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একজন নারী ব্যবসায়ীও বসে আসেন এক কোণে। আড়তদার সিএনজিচালিত অটোরিকশা বোঝাই করে এখান থেকে আনারস নিয়ে যাচ্ছেন।
উনার গন্তব্যের কথা জানতে চাওয়া হলে মো. আলী নামে এই ব্যবসায়ী বলেন, হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় যাবেন। তিনি একজন আনারস ব্যবসায়ী। প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে এখান থেকে আনারসসহ অন্যান্য দেশি ফল কিনে নিয়ে যান। স্থানীয় বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শুধু পাইকারি নয়, কেউ যদি একটি পণ্যও কিনেন তাও এখানে পাইকারি মূলে (অপেক্ষাকৃত কম দামে) বিক্রি করা হয়।
এই বাজারের ব্যবসায়ী সাদেক মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, এখন আমাদের বাজার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা। করোনার কারণে তা সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখন তো সিজন (ভরা মৌসুম)। তাই প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা দেশি ফল কেনা-বেচা হয়।
তিনি আরও বলেন, ১ থেকে ১শটা বা তারও বেশি দেশি ফল এখানে পাইকারিতে বিক্রি করা হয়। যে কেউ ১/২টা বা তার পছন্দসই ফল কিনতে পারেন।
মুছাই বাজারে ব্যবসায়ী আরতী পাল বলেন, হবিগঞ্জ, নবীগঞ্জ, মাধবপুর, সাতছড়ি, নরসিংন্দী, ঢাকা থেকেই বড় বড় আড়তদাররা আমাদের এ মুছাই বাজারে আসেন। তাদের চাহিদা মতো ফল কিনে নিয়ে যান। সিজনে ব্যবসা অনেক বেড়ে যায়। খুব ভালো লাভ হয় তখন। এখন তো কাঁঠালের সময়। তাই কাঁঠাল বেশি হচ্ছে বেশি। একেকটা কাঁঠাল ৫০ টাকা থেকে আড়াইশ’ টাকায় বিক্রি হয় বলে জানান এ নারী ব্যবসায়ী।
Leave a Reply