শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
চুনারুঘাট সীমান্তে বিজিবির অভিযানে ৮ বস্তা গাঁজা উদ্ধার মাধবপুর জায়গা নিয়ে বিরোধ দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১০ মহান বিজয় দিবস আজ নবীগঞ্জে আমেরিকা প্রবাসীর জায়গার ডোবা থেকে রাতে আঁধারে মাছ চুরি করে নিয়েছে একদল দূর্বৃত্তরা বাহুবলে ৩ কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ নবাগত ইউএনওর সাথে চুনারুঘাট প্রেসক্লাবের মতবিনিময় নবীগঞ্জে মালামালসহ পিকআপ ভ্যান ডাকাতি ॥ চালককে অপহরণ ॥ পুলিশের তাৎক্ষনিক অভিযানে গ্রেফতার-১ ॥ মালামাল উদ্ধার হবিগঞ্জে ঠান্ডার কারণে বাড়ছে রোগের প্রকোপ চুনারুঘাটে চাকুরির মেলায় ১০২ জনের কর্মসংস্থান হল বাহুবলে টমটমের ভাড়াকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে শতাধিক আহত

আমি হয়তো ওর চেয়ে আর ভালো কাউকে পাবো না!

Reporter Name
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
  • ৬৩৬ বার পঠিত

মাশাহেদ হাসান সীমান্ত ঃ- এক আকাশ ভাই চলে গেছেন। আর এরকম অনেক আকাশ ভাই চুপ করে বসে আছেন। তারা কোনও দিন আত্মহত্যা না করলে আমরা জানতেও হয়তো পারবো না কতটা গোপন কষ্ট নিয়ে তাঁরা বেঁচে আছেন। কিছু কিছু গল্পে হয়তো স্বামী/প্রেমিক ভিলেন, স্ত্রী/প্রেমিকারা সেখানে আকাশ ভাইয়ের মতো।

যারা এখনও আমাদের মাঝে আকাশ ভাইয়ের অতীতের মত নিরবে আছেন, আমাদের উচিৎ তাদের উপরে বোঝা না চাপিয়ে তাদেরকে বোঝার চেষ্টা করা। আপনার নিজের মুখে কিছু বলতে হবে না। আমার এই লেখা থেকে তারা নিজেরাই বুঝে নিতে পারবেন।

আকাশ ভাইয়ের সমস্যার সূচনা কিন্তু বিয়ের অনেক আগেই। তাই আমি সূত্রপাতের লগ্ন থেকে আলোচনা করছি। সমাধানটাও সেখানেই। পুরো লেখাটা বিয়ের আগে সম্পর্কের এই জটিলতাগুলোর সমাধান নিয়ে লেখা। যারা যারা প্রেমের এই স্টেজে আছেন তাদের বেশি আকজে লাগবে এটা।

২০১২ সাল থেকে এ রকম অসংখ্য মানুষের সাথে ওয়ান-টু-ওয়ানে বসে তাদের কষ্টের কথাগুলো শোনা হয়েছে। কেও না বলে দিলেও আমি কিছুটা জানি, আকাশ ভাইয়ের মনে কী কী কাজ করেছে? মিতু আপুর মনে কী কী কাজ করেছে?

আকাশ ভাইয়ের মনে কী কী কাজ করেছে?

১। ভাই/আপু; আপনাদের কেও এই কথাটা বলে নাই। আমি বলতেছি। ভালোবাসা আপনার প্রাপ্য; কেও একটু ভালোবাসা আর সাময়িক কেয়ার দিয়ে আপনাকে সারা জীবনের জন্য কিনে ফেলেনি।
———————————————–

স্কুলে একটা সময় ছিলো যখন প্রতি মুহুর্তে আমার সাথে মানুষ খারাপ ব্যবহার করতো। আমার শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা নিয়ে, আমার শারীরীক গড়ন নিয়ে, আমার বাবার চাকরি নিয়ে বলতো, আমি অনেক অহংকারী। বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে আমার মোটিভেশন দেয়ার প্রচেষ্টা নিয়ে অনেক ট্রল হলো। সংখ্যা দিয়ে অনুভূতি বোঝানো যায় না। জীবনে এমন একটা ভয় ঢুকে গিয়েছে, ইভেন এখনোও মাঝে মাঝে নতুন কাউকে দেখলে অপমানিত আর আঘাতপ্রাপ্ত হবার ভয় লাগে।

এই মুহুর্তগুলোতে কেও আমার সাথে সামান্য ভালো ব্যবহার করলে আমি গলে যেতাম, অনেক বেশি আবেগআপ্লুত হয়ে যেতাম।

শুনতে খারাপ লাগলেও, আকাশ ভাইয়ের চেয়ে অন্য ছেলেগুলো, যাদের সাথে উনার সম্পর্ক ছিলো, তাঁরা গুড-লুকিং ছিলো। ভৌগলিকভাবে ভারতীয় ছেলে-মেয়েরা আমাদের চেয়ে উত্তম সৌষ্ঠব পেয়ে থাকে। তাই না দেখেও বলা যায়, প্যাটেল দেখতে যথেষ্ঠ আকর্ষণীয় ছিলো।
যে সব ছেলেরা অনেক বেশি সহজ-সরল, তাদের অনেকের ক্ষেত্রেই মেয়েদেরকে আকর্ষিত করার বেসিক দক্ষতা বা প্রচেষ্টাও থাকে না। কিন্তু কিছু কিছু মেয়ে নিজে থেকেই তাদের সারল্যে আকৃষ্ট হন। এই সহজ সরল মানুষেরা প্রতি মুহুর্তে নিজেকে অন্য স্মার্ট ছেলেদের সাথে তুলনা করে, ‘আমি হয়তো ভালোবাসা পাবারই যোগ্য নই বলে মনে করা শুরু করেন।‘ তখন কেও তাকে সামান্য কেয়ার করলেও তারা সেটাকে নিজের জীবনের প্রথম এবং শেষ সম্বল হিসেবে বিবেচনা করেন।

একটা ভয় ঢুকে যায়, যেভাবেই হোক, এই ছেলে/মেয়ে কে আমার ধরে রাখতে হবে। একে হারিয়ে ফেললে হয়তো আমি আর জীবনে ভালোবাসাই পাবো না।

এই ভয় থেকে আমরা প্রশ্রয় দেয়া শুরু করি। অন্যায় মেনে নেয়া শুরু করি। নিজেকে দুর্বল করে অন্যকে ধরে রাখার চেষ্টা করি। কান্না দিয়ে, আবেগ দিয়ে, নিজের সবটুকু দিয়ে, নিজের দুর্বলতা দিয়ে আকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করি।

সম্পর্কে দুটো বিষয় অনেক কষ্টের।
১। নিজে কাউকে না পেলে যতটা কষ্ট লাগে, কাউকে পেয়ে হারালে তাঁর চেয়েও বেশি কষ্ট লাগে।
২। নিজে কাউকে হারালে যতটা কষ্ট লাগে, অন্য কারোও হয়ে গেলে তার চেয়েও বেশি কষ্ট লাগে।

সমীকরণটা এরকম
কাউকে না পাওয়ার কষ্ট < পেয়ে হারানোর কষ্ট < অন্য কারও হয়ে যাবার কষ্ট।
————————-

একটা ভয় ঢুকে যায় এভাবে যে, আমি একজন কাংখিত মানুষকে পেয়েছিলাম, অথচ ওকে আমি ধরে রাখতে পারলাম না। আমি হয়তো এর চেয়ে আর ভালো কাউকে পাবো না। হয়তো আমারই কোনোও ঘাটতি আছে।
——————–
কেন আকাশ ভাই ক্ষমা করেছিলেন?
আমরা অনেকেই আশা করে থাকি, আজ আমি আমার পার্টনারকে ক্ষমা করলে তাঁর আমার প্রতি ভালোবাসা বেড়ে যাবে। আমাকে আগের চেয়েও আপন মনে করবে। ‘ক্ষমা’ করলে কৃতজ্ঞতা আসে, তাও সাময়িক। ক্ষমা থেকে সব সময় ভালোবাসা আসে না।

ক্ষমা বলতে আসলে কী বোঝায়?
আপনি কি ‘ক্ষমা’ শব্দের শাব্দিক অর্থ জানেন? এর অর্থ হচ্ছে একটা কাজ শাস্তিযোগ্য জেনেও নিঃশর্তভাবে দায়মুক্তি দেয়া। সম্পর্কে ক্ষমার শর্ত অনেক ক্ষেত্রেই কাজে দেয় না। সহজ কথায়, শর্ত দিয়ে কখনও ক্ষমা হয় না। কারো কাছ থেকে কোনোও কিছু প্রত্যাশা করে ক্ষমা করে দেয়াটা অনেকক্ষেত্রে বোকামি।

প্রতারণার পর মানুষ ক্ষমা চায় মূলত ৩টা কারণে
১। নিজেকে সেফ করার জন্য। অন্য কথায়, ভবিষ্যতে এ প্রসংগুলোতে যাতে প্রশ্ন ফেস করতে না হয়।
২। মানুষটাকে না হারানোর জন্য
৩। পাবলিক শেমিং-এ না পড়ার জন্য

– মিতু আপু কেন আকাশ ভাইকে ছেড়ে দিলেন না?
জীবনে কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হবে। জীবনের কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা আমরা সব চাই। এখনোও অনেক ছেলে মেয়ে আছে (বিশেষ করে মেয়েরা), যারা প্রেম করার জন্য দুরন্ত ছেলে খোঁজে আর বিয়ে করার জন্য দায়িত্ববান ছেলে খোঁজেন।

তাঁর সামনে দুইটা অপশন ছিলো
অপশন ১ঃ আকাশ
১। ছেলেটা ভালো এবং একটু সহজ-সরল
২। ছেলেটা আমাকে ক্ষমা করে
৩। ছেলেটা দায়িত্ববান
৪। ছেলেটা আমার জন্য সেফ

অপশন ২ঃ প্যাটেল + মাহবুব+ শোভন + অন্যান্য
১। আমি যা শুনতে চাই আমাকে তা শোনায়।
২। তাঁরা আমাকে জীবনটা এনজয় করা শেখায়।
৩। তাঁরা জানে কীভাবে আমাকে খুশী করতে হয়।

মিতু আপুর ভেতরে যেমন আকাশ ভাইকে হারানোর ভয় ছিলো, একই সাথে জীবনটা উপভোগ করারও তাড়না ছিলো। মিতু আপুর এই জায়গায় অনেক ছেলেও আছে। যারা তাদের প্রতি পুরোপুরি ডিপেন্ডেন্ট হয়ে যাওয়া মানুষটাকে ধরে রেখে নিজের জীবনটাও উপভোগ করছেন।

লিভ-টুগেদারের পর এখন আসছে নতুন কালচার, ‘চিট-টুগেদার’। তুমিও চিট করেছো, আমিও এখন করবো। এভাবে সমস্যা আরও জটিল হয়। কাদার বিপরীতে কাদা ছুঁড়লে কখনও কাদা কমে না।
কথায় কথা বাড়ে।

সব সমস্যা মূলেই একটা জিনিস।

‘ভয়’

 ওর মতো হয়তো আর কাউকে পাবো না।
 আমি অকে অন্য কারও সাথে দেখতে পারবো না।
 মানুষকে কী বলবো?
 বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ড/স্বামী/স্ত্রী চেঞ্জ করলে মানুষ আমার চরিত্র নিয়ে কথা তুলবে।
 নতুন মানুষটাও যদি ওর মতই হয়।
 এতদিন ওর পেছনে এফোর্ট দিয়েছি, নতুন কেও আসলে তাকে তো আমার দেয়ার কিছু থাকবে না।
 আমার পক্ষে অন্য কাউকে আর ওর মতো ভালোবাসা সম্ভব না।

এই যে এতগুলো ভয়, এই সবগুলো ভয় মিলিত হয় এক বিন্দুতে
, ‘আমি হয়তো এর চেয়ে আর ভালো কাউকে পাবো না।‘। এই একটা ভয় দূর হলেই উপরের সব ভয় চলে যায়।

আপনি কি জানেন কখন আমাদের মনে হয়, ‘আমি বোধ হয় এর চেয়ে আর ভালো কাউকে পাবো না?’

যখন আমরা বিশ্বাস করে বসি, আমি এর চেয়ে ভালো কারও যোগ্য নই। আমার পক্ষে নিজের বেঞ্চ মার্ককে আর বাড়ানো সম্ভব না, নিজেকে আর উন্নত করা সম্ভব না। মূলত নিজেকে আমরা নিজের ক্ষমতা আর যোগ্যতাকে আন্ডারএস্টিমেট করি দেখেই আমরা পচনধরা মানুষগুলোকে ছাড়তে পারি না। আমরা সেই মানুষগুলোকেই জীবনে আমাদের প্রাপ্যের চেয়েও বেশি মনে করি। বরং, আমরা চাইলেই কিন্তু নিজের প্রাপ্যকে বাড়িয়ে তুলতে পারি।

সহজ কথায়
1. Either change the person
2. Or adjust Yourself
3. But never lose yourself

নিজের লেভেল বাড়ান। সঠিক সময়ে সঠিক মানুষটার সাথে সঠিক জায়গায় দেখা হয়ে যাবে।

আর একটা জিনিস মনে রাখবেন। ধর্ষণের পর ধর্ষকের দিকে আংগুল না তুলে ধর্ষিতার পোষাকের দিকে ইঙ্গিত করা যেমন অনুচিত, ঠিক সেরকম সম্পর্ক ভাঙ্গনে যে দায়ী, তাকে বাদ দিয়ে যে নিজেকে সরিয়ে এনেছে তাঁর দিকেও আঙ্গুল তোলা অপরাধ।
———————
আর মুখে যত যাই বলি, বিয়ের পরে অনেক পরিবর্তনই কঠিন। বিয়ের আগে মানুষ চেনাটা জরুরী। পরিবর্তন্টা সেখানে কম কষ্টের।
———————

যদি আপনার মনে হয় সৃষ্টিকর্তা আপনাকে সুন্দরী বা সুদর্শন করে পাঠাননি, তার মানে এই নয় যে, তিনি চান না কেও আপনার অবয়বের প্রশংসা করুক, আপনার সঙ্গ প্রত্যাশা করুক, বরং তিনি এমন একজনকে রেখেছেন যে শুধু আপনার জন্যই সৌন্দর্যের প্রতিষ্ঠিত সংজ্ঞাকেও বদলে দেবে, তার কাছে আপনিই হবেন সৌন্দর্যের মানদণ্ড !!!
————————-

জীবনও আপনার, সিদ্ধান্তও আপনার। আমি শুধু কিছু কিছু পরিস্থিতি আর ব্যক্তির চিন্তাকে ব্যাখ্যা করলাম।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2019 Prothomsheba
Theme Developed BY ThemesBazar.Com