২৩ মাসে ৪১৮৭টি মামলা নিষ্পত্তি। আদালত হতে ওয়ারেন্ট নিষ্পত্তি ২০,৯০৬
নুর উদ্দিন সুমন : হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার বলেছেন, সাংবাদিকরা সমাজ ও জাতির দর্পণ। সাংবাদিকরাই পারে লেখনী শক্তি দিয়ে সমাজকে মাদকমুক্ত ও অপরাধ মুক্ত করতে। যে কোন অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য উদঘাটন করতে এবং একটি অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পুলিশের পাশাপাশি সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিসীম। আজ (১৯ সেপ্টম্বর) শনিবার সকাল ১১ টায় জেলা পুলিশের উদ্যোগে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় প্রাঙ্গনে সাংবাদিকদের সাথে পরামর্শ সভায় উপরোক্ত কথা বলেন। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বলেন, আপনাদের সঠিক তথ্যের মাধ্যমে এবং সার্বিক সহযোগীতায় আমি আজ হবিগঞ্জকে দাঙ্গা ও অপরাধ মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। যতদিন থাকব এ জেলাকে সারাদেশের মধ্যে আলোকিত জেলা হিসেবে গড়ে তুলবো।পাশাপাশি জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করে বলেন, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বাল্যবিয়ে, ইভটিজিংসহ নানা সমস্যা সমাধানে সাংবাদিকদের সাথে একযোগে কাজ করতে চান বলে জানান তিনি। এতে জেলা উপজেলার প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক্স ও অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন , অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন) আনোয়ার হোসেন , অতিরিক্ত পলিশ সুপার (ইনসার্ভিস) শৈলেন চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(অপরাধ) মাহমুদুল হাসান, সদর থানার ওসি মো: মাসুক আলী, প্রেসক্লাব সভাপতি ইসমাইল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাইদুজ্জমান জাহির, প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উল্ল্যেখ্য যে, হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা গত ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যোগদান করেন। তিনি হবিগঞ্জে যোগ দিয়েই পাল্টিয়ে দিতে শুরু করেন জেলার সবচেয়ে বেশি দাঙ্গা হাঙ্গামা চুরি, ডাকাতি। জেলার সমাজ ব্যবস্থাপনা ও অস্থির জনপদে শান্তির সু-বার্তা। মানুষের অন্তরে জমে থাকা বিরূপ মন্তব্য আর কালো দাগ এবং ভয়কে জয় করে শহর থেকে পাহাড়ি এলাকার দুর্গমঞ্চল পর্যন্তও ছড়িয়ে পড়েছে তার প্রশংসা। দায়িত্বপালন কালে তিনি যেমন পুলিশের আইনী সেবা মানুষের দৌড়গোড়ায় পৌঁছানোর মাধ্যমে হবিগঞ্জে ইতিবাচক আইনি সু-শাসন প্রতিষ্ঠার ইতিহাস গড়েছেন। সমানতালে চলছে তার পুলিশি সুফল কর্মকান্ডও। তিনি ইদানিং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন। তিনি জেলায় দায়িত্ব গ্রহণের পর আইনশৃখলায় পরিবর্তনের পাশাপাশি জেলা পুলিশের উন্নয় অবকাঠামোসহ আইন সৃংখলা ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যার নিজ উদ্যোগের প্রশংসনীয় কর্মকান্ডের উল্লেখ যোগ্য কয়েকটি ধাপ এর মধ্যে হল-
দাঙ্গা, ইভটিজিং রোধকল্পে ও মাদক নিয়ন্ত্রণ চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে চলচিত্র প্রদর্শন।
* দাঙ্গা ইভটিজিং রোধকল্পে ও মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশিং কার্যক্রম পরিচালনা।
* দাঙ্গা ইভটিজিং রোধকল্পে ও মাদক নিয়ন্ত্রণে রচনা প্রতিযোগিতা শেষে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিশেষ স্লোগান সংবলিত খাতা বিতরণ।
* দাঙ্গা রোধকল্পে লিফলেট ফেস্টুন বিতরণ ও বিভিন্ন জায়গায় দেয়াল লিখন।
* দাঙ্গা রোধকল্পে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত স্টিকার লাগানো।
* বাল্যবিবাহ রোধ, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, পুলিশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন ও আইন সহায়তা সহজতর করার লক্ষ্যে মা’ সমাবেশের ব্যবস্থা গ্রহণ
* অপমৃত্যু রোধকল্পে বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মতবিনিময়।
* অপরাধ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় জনগণের নিকট হতে সেচ্ছায় দেশীয় অস্ত্র জমা দেওয়ার কর্মসূচির অনুষ্ঠান সফল করেন।
* থানা, সার্কেল অফিস সহ মামলার পরিমাণ হ্রাস এবং জনগণের হয়রানি কমানোর জন্য বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা।
* পুলিশ সুপারের সহিত থানা পর্যায়ের সকল অফিসারদের মামলা তদন্তসহ অন্যান্য বিষয়ে মতবিনিময় এর জন্য নিয়মিত প্রতি থানায় সার্কেলে অনুষ্ঠান।
* ঐতিহ্যবাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জের গম্ভীরা হবিগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় জনসচেতনতার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। ৫ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, ইভটিজিং রোধ এর বিষয় নিয়ে প্রতিযোগিতা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে ক্রেস্ট প্রদান । শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী দুই ভাইয়ের মধ্যে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য গাভী বিতরণ। গরীব অসহায় এবং মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের নগদ অর্থ সহ বই খাতা বিতরণ । এমনকি করোনাকালীন সময়ে সদর হাসপাতালের ডাক্তারদের প্রটেকশনের জন্য বিশেষ বোথ স্থাপন। করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্য ডাক্তার সরকারি কর্মকর্তা অন্যান্যদের মধ্যে ফলমূল বিতরণ। হবিগঞ্জ জেলার পুলিশ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান ও পুলিশ মুক্তিযুদ্ধাদের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে গল্প বীরগাথা রচনা ও প্রকাশনা।এছাড়া করুণা কালীন সময়ে ৪১শ মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত ও হতদরিদ্র পরিবারের মধ্যে চাল ডাল আলু পিয়াজ বিতরণ করেন। হবিগঞ্জে সাধারণ মানুষের মুখে হাসি-খুশি, আস্তা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে এসেছে। পুলিশ সুপার হিসেবে মোহাম্মদ উল্ল্যা দায়িত্ব গ্রহণের পর হবিগঞ্জে এমন চিত্র পুরোটাই বদলে যেতে শুরু করেছে। অতিঅল্প সময়ে নানা মহতি কাজ করে হবিগঞ্জ বাসির হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা । পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা জানান, কোনো পুলিশের সদস্য অন্যায় করলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না। তার এমন মানবতার ভূমিকা রাখায় মুগ্ধ হবিগঞ্জ সাধারণ মানুষ। গত ২০১৮ অক্টোবর হতে ২০২০ সাল এর আগস্ট পর্যন্ত ২৩ মাসে ৩৮২৭টি মামলা রুজু, ৪১৮৭টি মামলা নিষ্পত্তি। আদালত হতে ওয়ারেন্ট প্রাপ্ত ১৯,৫১৬ নিষ্পত্তি ২০,৯০৬।
Leave a Reply