নুর উদ্দিন সুমন: কুমিল্লা উত্তর চর্থায় মিশন ফর ডেভেলপমেন্ট নামে একটি এনজিও গ্রাহকদের প্রায় ৬ কোটি টাকা নিয়ে উধাও। মিশন ফর ডেভেলপমেন্ট নামে কথিত বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) এমডি প্রতারক কামাল। প্রায় ৬ কোটি টাকা উধাওয়ের ঘটনা জানাজানি হলে লাপাত্তা হন এনজিওর কর্মকর্তারা। বিষয়টি জানার পর থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা তাদের টাকা উদ্ধারে প্রতিদিনই অফিসে ভিড় করছেন। জানাগেছে কুমিল্লা উত্তর চর্থায় মিশন ফর ডেভেলপমেন্ট নামে একটি কথিত বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কর্মকর্তারা গ্রাহকদের প্রায় ৬ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন সংস্থার প্রধান কামাল মিয়া।
এতে বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকেরা। মিশন ফর ডেভেলপমেন্ট নামের সংস্থাটি জেলার আদর্শ সদর সাহা নগর ইউনিয়নের উত্তর চর্থার ঠিকানা দিয়ে চর্থায় কার্যক্রম শুরু করে। আদর্শ সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে প্রবাসী ঋণ, বিভিন্ন যন্ত্র ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিনতে ঋণ দেওয়ার কথা বলা হয়। এ জন্য এলাকায় প্রায় এক থেকে দেড় হাজার সদস্য করা হয়। ঋণ গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তিদের এক লাখ টাকার জন্য ১০ হাজার, দুই লাখ টাকার জন্য ২০ হাজার টাকা জমা দিতে বলা হয়। কয়েক দিন আগে দু-তিনজন সদস্যকে ঋণ দেওয়া হয়। অবশিষ্ট সদস্যদের ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। কয়েক শ গ্রাহক সংস্থাটির কার্যালয়ে ভিড় করেন। কিন্তু তাঁরা দেখেন কার্যালয়টি তালাবদ্ধ। কুমিল্লার আদর্শ সদও সাহা নগর ইউনিয়নের উত্তর চর্থার গ্রামের জয়দুল হোসেন এর পুত্র আল আমিন জানান, তিনি দুই বছর মেয়াদী একটি সঞ্চয় করেন তিনি মাসে ৩হাজার করে জমা রাখেন। একই গ্রামের এক বৃদ্ধ মহিলা জানান, ১৭ বছর আগে তিনি সঞ্চয় জমা করেন ২৮ লাখ টাকা। রাবিয়া খাতুন শিলা জানান, দেড় লক্ষ টাকা জমা করেন, অপর যুবক, মতিন মিয়া জানান, ৩লক্ষ টাকা জমা করেন। শাওন মিয়া জানান, ওই সংস্থা থেকে তাঁকে দুই লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। সংস্থাটিতে সঞ্চয় হিসাবে তিনি ২০ হাজার টাকা জমা দেন। প্রতারণার শিকার কুদ্দুছ মিয়া বলেন, ‘এক লাখ টাকা ঋণ নিতে ১০ হাজার টাকা জমা দিয়েছি। ঋণ নিতে এসে দেখি কর্মকর্তারা পালিয়ে গেছে। স্থানীয়ভাবে নিয়োগ পাওয়া এক মাঠকর্মী বলেন, ‘ছয় হাজার টাকা মাসিক বেতনে এখানে যোগ দিয়েছি। আজ গ্রাহকদের কয়েক লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। কাউকে কিছু না বলেই কোটি কোটি টাকা নিয়ে কর্তৃপক্ষ পালিয়ে গেছে। লোকজনের ভয়ে এখন আমরা বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। প্রতারিতরা বলেন, আমাদের বলা হয়- সরকার অনুমমোদিত ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচির আওতায় গ্রামীণ জনপদকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে ব্যবসা, কৃষি, পশুপাখি, গৃহ নির্মাণ, মৎস্য চাষ, প্রবাসী, অটো, সিএনজি ক্রয়-লোনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা ঋণ প্রদান করে থাকে। পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কামাল মিশন ফর ডেভেলপমেন্ট নামে এনজিওর এমডি পদে দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ সময় চাকরির সুবাদে স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের আস্থাভাজনে পরিণত হয় প্রতারক কামাল । গ্রাহকরা নির্দ্বিধায় তার কাছে চেক, নগদ অর্থ ও ঋণের কিস্তির টাকা দিয়ে যেতেন। বিশ্বস্ততার সুযোগ নিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ৬কোটি টাকা সংগ্রহ করে। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক রাবিয়া খাতুন শিলা বলেন, সরলতার সুযোগ নিয়ে অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক কামাল । তিনিসহ এনজিওর উপস্থিত অন্য গ্রাহকরা ঠিক কতজন গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন এমন তথ্য দিতে না পারলেও প্রায় ৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ হতে পারে । এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, এ নামে এনজিও আছে কিনা আমাদের জানা নেই। প্রতারিত হওয়া গ্রাহকরা যদি আমাদের কাছে অভিযোগ করে অবশ্যই তদন্ত করে ওই এনজিওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে প্রতারক প্রতারক কামালের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
Leave a Reply