বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ‘ময়ূরপঙ্খী’ ছিনতাইচেষ্টার ঘটনায় চিত্র নায়িকা সিমলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। শুটিংয়ের জন্য মুম্বাই অবস্থান করা এই নায়িকা দেশে ফিরলেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হবে। পলাশের বেপরোয়া জীবন ও অপরাধ সংশ্লিষ্টতার তথ্য জানতে চাওয়া হবে তার কাছে। তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের বিষয়টিও উঠে আসবে তদন্তে।
পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা জানান, পলাশের কোনো জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে তদন্তে। এ কারণে তার ব্যক্তিগত জীবনের তথ্যও জানা দরকার। নায়িকা সিমলা যেহেতু তার স্ত্রী ছিলেন, সেহেতু তাকেও জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হবে। তিনি দেশে স্বেচ্ছায় ফিরে না এলে প্রয়োজনে তাকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, বিমান ছিনতাইচেষ্টার ঘটনায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত শুরু করেছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। সংস্থাটির উপকমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, গত মঙ্গলবার থেকে মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। তদন্ত ভার পাওয়ার পর এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন তারা। তিনি বলেন, একটি মামলা তদন্ত করতে গেলে নানা দিক চিন্তা করতে হয়। তাই সব বিষয় খতিয়ে দেখতে কাজ করা হচ্ছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, তদন্তে কমান্ডো অভিযানে নিহত পলাশের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা, নেপথ্যে হোতাদের খুঁজে বের করা, বিমানটি ছিনতাই পরবর্তী পরিকল্পনা উদ্ঘাটন, পলাশের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে পলাশের ব্যক্তিগত কিছু তথ্য তাদের হাতে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তার বিষয়ে নানা তথ্য উঠে আসছে প্রতিনিয়ত। এ বিষয়গুলোও গুরুত্ব পাচ্ছে তদন্তে।
বিমানের ভেতরে গুলি ও রক্তের চিহ্ন : মামলায় ময়ূরপঙ্খীকে জব্দ তালিকায় দেখানো হয়েছে। তবে ১০ দিনের মধ্যে বিমানটির চলাচলের জন্য বিমান কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক সদস্য জানান, গতকাল তারা বিমানটির ভেতরে আরেক দফা অনুসন্ধান চালান। সেখানে রক্ত ও গুলির চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানের সময় এই গুলি লাগতে পারে। বিমানের দরজা ও মেঝেতে রক্তের দাগ সম্পর্কে তিনি বলেন, সেটি গুলিতে আহত পলাশের রক্ত হতে পারে। ফরেনসিক ও ব্যালাস্টিক পরীক্ষার জন্য সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর গুলি ও রক্ত সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
পলাশের চেকিংয়ের ভিডিও প্রকাশ : গত রবিবার বিকালে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল দিয়ে বিমানে ওঠেন ছিনতাই চেষ্টাকারী পালাশ। ইউটিউবে পাওয়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, বাম হাতে বিমানের টিকেট নিয়ে আর্চওয়ে দিয়ে প্রবেশ করেন তিনি। ওই সময় সাদা ফুল হাতা শার্ট পরা ছিলেন তিনি। মুখে ছিল হালকা চাপ দাড়ি। আর্চওয়েতে এক নিরাপত্তাকর্মী খুব অল্প সময়ের মধ্যে তার দেহ তল্লাশি করেন। এরপর লাগেজ স্ক্যানারের বেল্টের সামনে ব্যাগ সংগ্রহের জন্য দাঁড়ান পলাশ। তার সামনের ব্যক্তি একটি সুটকেস তুলে নেয়ার পর বেল্টে একটি কালো ব্যাগ আসে। এটি হাতে নিতে গিয়ে প্রথমে কিছুটা ইতস্তত করেন পলাশ। পর মুহূর্তেই তা তুলে নিয়ে বোডিং পাস সংগ্রহের দিকে রওনা করেন। ভিডিওতে সময় ও আশপাশের দৃশ্যগুলো অস্পষ্ট করে দেখানো হয়।
পলাশ ছিল মানসিক ভারসাম্যহীন : পলাশ মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে দাবি করেছেন তার সাবেক স্ত্রী সিমলা। মুম্বাইয়ে অবস্থানরত এ ঢালিউড নায়িকা গতকাল গণমাধ্যমকে জানান, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পরিচয় হওয়ার ঠিক কয়েক মাস পর, ২০১৮ সালের মার্চ মাসের ছয় তারিখে পলাশকে বিয়ে করেন সিমলা। ৮ মাস সংসার করার পর সিমলার উপলব্ধি হয় এই ছেলের সঙ্গে তার আর এক ছাদের নিচে থাকা হয়ে উঠবে না। তাই ওই বছরই ৩ নভেম্বর তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়।
সিমলা জানান, পলাশকে ডিভোর্স দেয়ার মূল কারণ ছিল আসলে তার মানসিক সমস্যার জন্য। অনেক সময় তার কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। সে অনেক মিথ্যা বলত। সব মিলিয়ে তার সঙ্গে সংসারটা করা হয়নি। পলাশের বিমান হামলার চেষ্টার ঘটনা কখন জানলেন, এমন প্রশ্নে সিমলা বলেন, আমি যেখানেই থাকি না কেন বাংলাদেশের খবর দেখি। ওই দিন সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে আমি খবর দেখছিলাম। দেখলাম বাংলাদেশে একটি বিমান ছিনতাইয়ের অপচেষ্টা করেছে এক যুবক। আর সে যুবক কিনা বাংলাদেশের এক নায়িকার ব্যর্থ প্রেমিক। তার কিছুক্ষণের মধ্যে টিভির স্ক্রিনে আমার নাম ভেসে আসে। যখন জানতে পারি ওই বিমান ছিনতাইকারীর নাম পলাশ, আমি কিন্তু অবাক হইনি। কারণ ওর দ্বারা এসব কাজ করা অসম্ভব কিছু নয়।
প্রসঙ্গত, ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে পলাশ আহমেদ। সেনাবাহিনীর সদস্যদের ৮ মিনিটের কমান্ডো অভিযানে পলাশ নিহত হন।
সুত্রঃ ভোরের কাগজ
Leave a Reply