নুর উদ্দিন সুমন : হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে ভাড়াটিয়া বাসায় রাজনা বেগম (১৯) নামের এক গৃহবধূর গলাকেটে হত্যা মামলায় প্রধান আসামী স্বামী জাকারিয়া (২৫) কে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। জাকারিয়া উপজেলার নবীগঞ্জ বড় আলীপুর এলাকার সবুজ মিয়ার ছেলে। বিকেলে জাকারিয়াকে নবীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এবিষয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ ডালিম আহমেদ জানান বিকেলে র্যাব হস্তান্তর করেছে শনিবার তাকে আদালতে পাঠানো হবে। এর আগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে (৩ফেব্রয়ারী) রাতে ১১টায় মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানার লতব্দী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। জাকারিয়া হত্যাকাণ্ডের পর লতব্দী একায় আত্মগোপন করে। গ্রেফতারকৃত আসামী জাকারিয়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে তার হত্যার দায় স্বীকার করে। সে পেশায় একজন সিএনজি চালক। প্রসঙ্গত : গত ৩১ জানুয়ারী নবীগঞ্জের রসুলগঞ্জ বাজারে সফিক মিয়ার বাসা থেকে সোমবার রাতে রাজনা বেগম (১৯) এর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ। রাজনা ৮নং নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বড় আলীপুর গ্রামের জাকারিয়া মিয়ার স্ত্রী ও একই ইউনিয়নের পশ্চিম তিমিরপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের মেয়ে। জানা যায়, প্রায় ৬ মাস পূর্বে উপজেলার সদর ইউনিয়নের বড় আলীপুর গ্রামের সবুজ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া মিয়ার সঙ্গে রাজনা বেগমের বিয়ে হয়। গত ১০-১২ দিন পূর্বে রসুলগঞ্জ বাজারের সফিক মিয়ার বাড়িতে একটি বাসা ভাড়া নেন তারা। ঘটনারদিন বিকালে রাজনার মা তাকে দেখতে ওই ভাড়া বাসায় যান। এ সময় তাদের কক্ষের দরজা বন্ধ দেখে ডাকাডাকি করেন। একপর্যায়ে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে মেয়ের রক্তাক্ত দেহ বিছানার ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় একটি রক্তমাখা বঁটি দা উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর থেকে রাজনা বেগমের স্বামী জাকারিয়া পালিয়ে যায়। পরে নিহত রাজনা বেগমের ভাই সুফি মিয়া বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় স্বামী জাকারিয়াকে প্রধান আসামী করে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে (২ ফেব্রয়ারী) হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ হত্যাকান্ডটি সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
এই মামলার মূল রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব-৯ গোয়েন্দা নজরদারীর পাশাপাশি ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত প্রধান আসামি রাজনার স্বামী জাকারিয়াকে গ্রেফতার করেন। এ তথ্য নিশ্চিত করে র্যাব ৯ এর মিডিয়া অফিসার এএসপি সোমেন মজুমদার জানান, গ্রেফতারকৃত আসামী জাকারিয়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে তার হত্যার দায় স্বীকার করে। সে পেশায় একজন সিএনজি চালক এবং ভিকটিমের সাথে ৪ বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর গত বছর পারিবারিক সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে সিএনজি কেনার কথা বলে যৌতুকের টাকার জন্য জাকারিয়া ভিকটিম এবং ভিকটিমের পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে চাপ দিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিককতায় ঘটনার দিন আনুমানিক বিকাল ৪ ঘটিকার সময় যৌতুকের টাকার জন্য প্রথমে সে তার স্ত্রীর হাত-পা ওড়না দিয়ে বেঁধে ফেলে; ভয়-ভীতি দেখায় এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। পরবর্তীতে সে তার শ্বশুর বাড়িতে ফোন দিয়ে টাকা দাবি করে এবং সিএনজি কেনা বাবদ টাকা না দিলে সে তার স্ত্রীকে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে। শ্বশুর বাড়ির লোকজন টাকা দিতে রাজী না হওয়ায়; হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সে তার স্ত্রীর মুখ ওড়না দিয়ে বেধে ফেলে; যাতে চিৎকার করতে না পারে এবং রান্না ঘরের ধারালো বটি-দা দিয়ে স্ত্রীর গলা কেটে হত্যা করে ঘরের বাইরে থেকে তালা দিয়ে চলে যায়। এর পরই ১ জানুয়ারি মধ্যরাতের দিকে বাসযোগে রওনা হয়ে ঢাকায় চলে যায়। ঢাকায় নিরাপদ আশ্রয় না পেয়ে সে তার একসময়কার কর্মস্থল মুন্সিগঞ্জের লতব্দী এলাকার ইট ভাটায় আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে গমন করে। অবশেষে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের জালে ধরা পড়ে জাকারিয়া । র্যাব-৯-এর সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আবদুর রহমান (পিএসসি, আর্টিলারি) বলেন, র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, জঙ্গি দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মাদক ও ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে এবং গোয়েন্দা নজরদারী, আভিযানিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে র্যাব ইতিমধ্যেই জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত আছে বলেও তিনি জানান।
Leave a Reply