নুর উদ্দিন সুমন : হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলা ইউএনও স্নিগ্ধা তালুকদার যিনি খুব অল্প সময়ে তাঁর গুনাবলি কর্মের মধ্য দিয়ে বাহুবলবাসীর মন জয় করেছেন। কর্মের প্রতি ছিল একাগ্রতা, দায়িত্বের প্রতি ছিলেন নিষ্ঠাবান।বাহুবলে সাধারণ মানুষের জন্য তার কার্যালয় ছিল উন্মুক্ত, যে কোনো শ্রেণী পেশার মানুষের কথা তিনি গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। সাধ্যমত নিয়মের মধ্যে থেকে সমাধানের চেষ্টা করতেন। বিগত করোনাকালীন সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ এবং সরকারি সেবা তিনি সাধারণ জনগণের মাঝে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। জাতীয় দিবসগুলি অত্যন্ত দক্ষতার সহিত পালন করেছেন। উপজেলা প্রশাসনের সহকর্মী কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংবাদিক ও সাধারণ জনগণের হৃদয়ে এক অনন্য উচ্চতায় স্থান করে নিয়েছিলেন। রবিবার সংসদ সদস্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী, সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ ফুলেল ভালোবাসায় বিদায় দিলেন বাহুবল উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা তালুকদার কে, ৩ অক্টোবর সন্ধার পর বাহুবলের মাটি ছেড়ে চলে যান। এ সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বিদায়কালীন সময় সংসদ সদস্য শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজী, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সৈয়দ খলিলুর রহমান, নবাগত ইউএনও মহুয়া শারমিন ফাতেমা, ওসি তদন্ত আলমগির কবির,মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নিলুফা ইয়াসমিন, চেয়ারম্যানবৃন্দ, ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ইউএনও স্নিগ্ধা তালুকদারের বিদায় এর খবর বাহুবলে ছড়িয়ে পড়লে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের টাইমলাইন জুড়ে শুধু ইউএনও এর বিদায়ের খবর প্রচার হতে থাকে, যোগদানের১ বছর নয় মাস ১৪ দিনের মধ্যেই তিনি সকলের প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন। উপজেলা অফিসার্স ক্লাব, রাজনৈতিক সংগঠন, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠন, স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ , উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ, স্থানীয় গণ্যমান্য সুধীজন ইউএনও স্নিগ্ধা তালুকদারের এর সাথে দেখা করে ফুল, ক্রেস্ট ও বিভিন্ন উপহার দিয়ে অশ্রুসিক্ত বিদায় জানান। সম্প্রতি গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাহুবলে শেষ কর্মদিবস ছিল বিদায়ী ইউএনওর । তিনি সিলেট জেলায় দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ইউএনও হিসেবে বদলী হওয়ার সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। ইউএনও স্নিগ্ধা তালুকদার ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। বাহুবলে যোগদানের পর হতে তিনি উপজেলার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ক্রীড়া ও সংষ্কৃতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অসহায়দের আশ্রয়ণে ঘর নির্মাণ ও সামাজিক উদ্যোগ সহ বিভিন্ন সরকারি কাজে নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন , প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার মান উন্নয়নে তিনি নিরলস ভাবে কাজ করেছেন। জেলা প্রশাসক হবিগঞ্জের নির্দেশনায় নিরক্ষরতা দূরীকরণে সবসময় কাজ করেছেন।
এছাড়া দেশের করোনাকালীন সময়ে করোনা সংক্রমন থেকে বাহুবলবাসীকে রক্ষা করতে তিনি প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছেন, দেশে কার্যত লগডাউন চলাকালীন সময়ে তিনি করোনা সংক্রমন প্রতিরোধে নিজের নিরাপত্তার কথা ভুলে বাহুবল মানুষের জন্য কাজ করেছেন। সর্বোপরি একজন সৎ, ন্যায়পরায়ণ এবং আদর্শ নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে খুব অল্প সময়ে বাহুবলবাসীর ভালোবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। স্নিগ্ধা তালুকদার বাহুবলে দায়িত্ব নেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। স্থানীয়রা জানান, তিনি একজন দক্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সমন্বয় করে তিনি উপজেলার প্রতিটি উন্নয়ন কার্যক্রমকে সুচারুভাবে পরিচালিত করেছেন। সাংবাদিক সৈয়দ আব্দুল মান্নান জানান, স্নিগ্ধা তালুকদার প্রশাসনের একজন চৌকস কর্মকর্তা। যিনি ভালোবাসা এবং কাজের মাধ্যমে বাহুবলবাসীর হৃদয় জয় করেছেন। বাহুবল থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর কবির জানান, তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সুন্দর সমন্বয় করে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত করেছেন। মির পুর ফয়জুন্নেছা উচ্চ বিদ্যলয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, তিনি অপরাধীদের নিকট ছিলেন-এক হিংস্র চিতাবাঘ। সম্বলহীনদের নিকট ছিলেন পরম এক আশ্রয় স্থল। বাহুবলবাসীর হৃদয়ে সর্বদা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বিদায়ী ইউএনও স্নিগ্ধা তালুকদার। বদলীকৃত নির্বাহী কর্মকর্তা স্নিগ্ধা তালুকদার জানান, এক বছর নয় মাস ১৪ দিন বাহুবল নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে চাকরিকালীন সময়ে আমি সব সময় বাহুবলবাসীর সুখে দুঃখে থাকার চেষ্ঠা করেছি, বাহুবলবাসীও আমাকে প্রতিটি কাজে সহায়তা করেছে। তিনি তার ফেইসবুকে লিখেছেন আমার কর্মকালীন সময়ে আমার প্রতি বাহুবলবাসীর যে অকুন্ঠ ভালোবাসা আর সমর্থন আমি দেখেছি তার জন্য আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। নতুন কর্মস্থলে আপনাদের থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা, অনুপ্রেরনা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। এ সময় তিনি তার ও পরিবারের জন্য দোয়া কামনা করেন। এদিকে রবিবার দুপুরে নবাগত ইউএনও মহুয়া শারমিন ফাতেমা যোগাযোগদান করেন।
Leave a Reply