বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৩:৫৭ অপরাহ্ন

বাহুবলে প্রবাসীর স্ত্রী তানিয়া হত্যার মূল আসামি ধরা ছোঁয়ার বাইরে॥ হতাশ পরিবার

Reporter Name
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ৩১৮ বার পঠিত

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : হবিগঞ্জের বাহুবলে সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী তানিয়া হত্যার মামলার মুল আসামী জানে আলম এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। মৃত্যুর আগে তানিয়ার দেয়া জবানবন্দি অনুযায়ী তানিয়ার শ্বশুর গ্রেফতার হলেও বাকী চার আসামি এখনও পলাতক। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তির কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সুশীল সমাজ ও স্বজনরা। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তানিয়া হাসপাতালে তার ভাই তানভীরের কাছে বর্ণনা দেন তার উপর চালানো নির্যাতনের ঘটনা । তানিয়া (২২) বাহুবল উপজেলার মির্জাটুলা গ্রামের সৌদি প্রবাসী নুরুল ইসলামের মেয়ে । মামলার বিবরণে জানা যায়, তানিয়া আক্তারের সাথে তিন বছর আগে বিয়ে হয় একই উপজেলার ফদ্রখলা গ্রামের সৌদি প্রবাসী শাহ আলমের। বিয়ের পর তাদের কোলজুড়ে আসে একটি পুত্রসন্তান। সুখেই যাচ্ছিল তানিয়ার দাম্পত্য জীবন। কিন্তু তানিয়ার প্রতি লোলুপ দৃষ্টি পড়ে দেবর জানে আলমের। জানে আলম দুই সন্তানের বাবা। সে কাতার প্রবাসী। করোনার আগে দেশে আসলে সে আর কাতার পাড়ি দিতে পারেনি। তার কুনজর পড়ে বড় ভাইয়ের স্ত্রী তানিয়ার প্রতি। তানিয়াকে প্রায়ই সে উত্যক্ত করতো। তানিয়া শ্বশুর-শ্বাশুড়িকে বিষয়টি বারবার জানালেও তারা কোন কর্নপাত করেনি। জানে আলমের স্ত্রীকেও বিষয়টি জানায় তানিয়া। এ নিয়ে জানে আলমের সাথে তার স্ত্রীর ঝগড়াও হয়। স্ত্রী নিষেধ করলেও তার নিষেধ মানেনি জানে আলম। তানিয়ার মামা আব্দুর রহিম জানান, প্রায়সময় তানিয়াকে উত্যক্ত করত জানে আলম তার উত্যক্ত সইতে না পেরে বাবার বাড়ি চলে আসে তানিয়া। বাবার বাড়ি এসেও রেহাই পায়নি তানিয়া। বেড়াতে এসেও উত্যক্ত করত লম্পট জানে আলম। তার কথায় রাজি না হলে মেরে ফেলব ভয়ভীতি দেখাত! মৃত্যুর ২ দিন আগে তানিয়া তার পিত্রালয়ে চলে যায়। তাকে ফিরিয়ে নিতে ২০ নভেম্বর শুক্রবার তানিয়ার বাড়িতে শ্বশুর হারুনূর রশিদ যান ।

তানিয়া কে বাড়িতে নিতে চাইলে তানিয়া যেতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন চতুর শ্বশুর তানিয়ার মাকে বলে বেয়াইন তোমার মেয়ে কিতা, আমার মেয়ে কিতা? মেয়ের আর কোন অসুবিধা হইতনা আমি আছি, আর তানিয়াকে বলে তুমি আমার বৌমা না তুমি আমার মেয়ে,তুমি আমার মা,চলো মা আমার সাথে আমি আছি আর কোনদিন জানে আলম তোমাকে বিরক্ত করতনা বলে ফুসলিয়ে নিয়ে যায় শ্বশুর হারুন। তানিয়া কে বাড়ীতে নেওয়ার সাথে সাথেই তানিয়ার মোবাইল কেড়ে নিয়ে শ্বশুর হারুনুর রশিদ তানিয়া কে নির্যাতন শুরু করে। তার নির্যাতনও তানিয়া নিরবে সহ্য করে। গত ২১ নভেম্বর দিবাগত রাতে দরজার লক ভেঙে তানিয়ার শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে তানিয়াকে ধর্ষণের চেষ্টা করে জানে আলম। এসময় তানিয়া চিৎকার করিয়া উঠিলে পাশের কক্ষে থাকা লম্পট জানে আলমের স্ত্রী ঝুমা আক্তার,ননদ বাপ্পি আক্তার,পার্শ্ববর্তী ঘরে থাকা শ্বশুর, শাশুড়ি,আসিলে লম্পট জানে আলম তার ঘরে চলিয়া যায়। তৎক্ষণাৎ লম্পট জানে আলমের কুকীর্তির কথা জানাইলে তাহারা উলটো তানিয়াকে দোষারোপ করে এবং মানুষিক ও শারীরিক নির্যাতন করে। উক্ত বিষয়টি তানিয়া তার স্বামীকে বিদেশে মোবাইলে জানায়। বিষযটি জানানোর পর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে জানে আলম। বিচারের প্রতিশোধ নিতে মরিয়া ওঠে জানে আলম । এক পর্যায়ে বিষয়টি কেন তার পরিবারকে জানালো এনিয়ে অপমান জনক কতাবার্তা বলে জানে আলম। তানিয়া জানে আলম ও তার পরিবারের অপমানের যন্ত্রনা সইতে না পেরে ভাতরুমের হারপিক পান করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তানিয়া চটপট করতে থাকলে পরে সন্ধ্যার পরে তানিয়ার ছোট ভাই তানভীরকে ফোন দেয় জানে আলম। ফোন দিয়ে বলেন, তার স্ত্রী অসুস্থ একটি সিএনজি নিয়ে আসতে। সে সিএনজি নিয়ে জানে আলমের বাড়িতে গিয়ে দেখে জানে আলমের স্ত্রী সুস্থ অথচ তার বোন তানিয়া অন্ধকার কক্ষে অসুস্থ অজ্ঞান হয়ে পড়ে রয়েছে। তানভীর তখন বলে ভাই আপনে বললেন আপনার বউ অসুস্থ এখন দেখি আপনার বউ সুস্থ ভালা? তখন জানে আলম চালাকী করে বলে তোমার বোনের পেটে ব্যথা!আগে গাড়ীতে তুল হাসপাতালে নেই পরে সব বলব,বলে টেনেহিঁচড়ে গাড়ীতে তুলে প্রথমে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে বিষপান করেছে বলে ভর্তি করলে কর্তব্যরত ডাক্তার তানিয়াকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে রেফার্ড করেন। হবিগঞ্জে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। কিন্তু তানিয়াকে সিলেটে রেফার্ড করলে ও তারা সিলেট নিয়ে যায়নি। সারা রাত মুমূর্ষু তানিয়া মৃত্যু যন্ত্রণায় চটপট করে। তানিয়ার পরিবারের অভিযোগ রাত ৩ টায় তানিয়ার চতুর শ্বশুর হারুনুর রশিদ তানিয়ার ভাই তানভীর কে বলে চল আমরা বাড়ীতে চলে যাই সকালে আসব।এই কথা বলে অবুঝ তানভীর কে নিয়ে ফজরের আগে শায়েস্তাগঞ্জ এসে বলে তুমি বাড়িতে যাও আমি হাসপাতালে যাই,যদি সিলেট যাওয়া লাগে তাহলে তোমাকে ফোন দেব তুমি মিরপুর বনফলের সামনে থেক। হারুন তখন হাসপাতালে পৌঁছে তানিয়ার মৃত্যু নিশ্চিত করে তানভীর কে দেয়,বলে তানভীর তুমি মিরপুরে আস আমরা তানিয়াকে এম্বুলেন্সে করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করব। সিলেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে সকাল নয়টায় জরুরী বিভাগের ডাঃ মৃত ঘোষণা করেন। তার মামা আব্দুর রহিম জানান, তানিয়াকে ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে মানুষীক ও শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করে জানে আলম। তার সাথে জড়িত তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও। তানিয়ার মা রুনা জানান, আমার মেয়ের দেবর, শশুর, শাশুড়ি ননদ, ও তার স্ত্রী আমার মেয়ের সঙ্গে ঝগড়া করে, মারধোর করে হত্যা করেছে। আমি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। জড়িতদের মধ্যে একজন গ্রেফতার হলেও মূল আসামি জানে আলম ওখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফুয়াদ আহমেদ জানান,খুব শীঘ্রই মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতার করতে পারবো।এ ঘটনায় গত ২৫ নভেম্বর তানিয়ার মা বাদি হয়ে বাহুবল মডেল থানায় তানিয়ার দেবর, শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ, ও জানেআলমের স্ত্রী ঝুমার নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। নিহত তানিয়ার ২১ মাসের একটি ছেলে রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2019 Prothomsheba
Theme Developed BY ThemesBazar.Com