নুর উদ্দিন সুমন ॥ করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মহামারিতে পুরো পৃথিবীই থমকে গেছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নেই। সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে ভাইরাসটির বিস্তার রোধের চেষ্টা করছে সরকার। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না আসার আগ পর্যন্ত সকল প্রতিষ্ঠান খোলার কোনো সম্ভাবনাও নেই। এদিকে বন্ধের সময়ও চুনারুঘাট উপজেলার সাবিহা চৌধুরী উচ্ছ বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা বেতন ও ফি দিতে ছাত্র/ছাত্রীদের নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করছেন ও বিনা রশিদে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। যদিও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সম্প্রতি এক জরুরি নির্দেশনায় ফি ও বেতন আদায়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের চাপ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। করোনাকালে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বিনা রশিদে অতিরিক্ত বেতন ও পরীক্ষার নামে ফি আদায়ে করছেন বলে অভিযোগ অভিভাবকদের । বিষয়টি অভিভাবক ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জানাজানি হলে ঘটনাটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে তোলপাড় শুরু হয়। এনিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক শফিকুল ইসলাম রুবেল ও মিরাশি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহবায়ক আনিছুজ্জমান মাসুমসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী তাদের ফেইসবুক আইডিতে লিখেছেন তা তুলে ধরা হল: একজন জাতি গড়ার কারিগরের নীতিহীন কর্মকাণ্ড! চুনারুঘাট উপজেলার ১০নং মিরাশী ইউনিয়নের সাবিহা চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করে করোনাকালীন সময়ে বিদ্যালয় বন্ধ হওয়া সত্ত্বেও নিম্নোক্ত শ্রেণীর ছাত্র/ছাত্রীদের কাছ থেকে একপ্রকার জোরপূর্বক বেতন, পরীক্ষার ফি এবং রেজিষ্ট্রেশন এর ফি বিনা রশিদে আদায় করেন। সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র/ ছাত্রীদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে ১৩২০ টাকা। অষ্টম শ্রেণী তেকে ১৭৫০ টাকা, নবম শ্রেণী থেকে ২০৫০ টাকা বিনা রশিদে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সবসময় সাধারণ ছাত্র/ছাত্রীদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করে, আমরা উপজেলা ছাত্রলীগ পরিবার এই নিয়মবহির্ভূত কাজের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং সকল ছাত্র/ছাত্রীদের প্রদত্ত টাকা ফেরত না দিলে ছাত্রলীগ পরিবার সাধারণ ছাত্র/ছাত্রীদের সাথে নিয়ে আন্দোলনে নামবেন বলে হুশিয়ারী দেন। পাশাপাশি তাহার এমন অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা নিতে ছাত্র/ছাত্রীদের অভিভাবক ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দরা উপজেলা প্রশাসন ও এবং সংশ্লিষ্টদের প্রতি অহবাবান জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিভাবক বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই স্কুল থেকে পরীক্ষার ফি দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। একই অভিযোগ করেছেন আরও কয়েকজন অভিভাবক। অনুসন্ধানে জানা গেছে কেবল সাবিহা উচ্ছ বিদ্যালয় নয়, জেলা ও উপজেলার প্রায় বেশ কয়েকটি স্কুল নিয়ে একই অভিযোগ করছেন অভিভাবকরা। করোনার সময় কোনো ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম না থাকলেও বেতন আদায় করতে নিয়মিত ‘বিরক্ত’ করা হচ্ছে। কখনো কখনো ‘হুমকি’ও দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তারা। একজন অভিভাবক অভিযোগ করে জানান, তার সন্তানকে কোরোনার শেষে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। কারণ তিনি দুইমাস ধরে বেতন পরিশোধ করতে পারছেন না। কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের কাছে বেতন ও পরীক্ষার ফি চাওয়া অমানবিক। কারণ অনেকেই করোনার কারণে বেকার হয়ে ঘরে বসে আছেন। রুজি রোজগার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় স্কুলের বেতন দেবে কিভাবে? এমন মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বিষয়টি নিয়ে হবিগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি স্কুলগুলো শিক্ষার্থীদের ফি’র ওপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়। এ ছাড়া তাদের আর কোনো আয়ও নেই। শিক্ষার্থীদের বেতন থেকে অনেক শিক্ষককের বেতন দেয়া হয়।‘অভিভাবকদের মধ্যে যাদের সামর্থ্য নেই তাদের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে কিন্তু যাদের সামর্থ্য আছে তারা কেন বেতন দেবেন না? তবে যদি অতিরিক্ত এবং অনিয়ম করা হয় কেউ যদি অভিযোগ দেন তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply