জেলার চুনারুঘাটে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে গরীবদের মুখে হাসি ফোটালেন চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) শেখ নাজমুল হক। তিনি করোনায় আক্রান্ত থাকা সত্বেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসহায় মানুষের খোঁজখবর নিয়ে মানব সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন । ত্রাণ সামগ্রী পেতে ফেসবুক মেসেঞ্জার ও মোবাইল এসএমএস করেন বিভিন্ন লোকজন। এর মধ্যে বেশ কিছু অসহায় গরীবদেরকে খাদ্য সামগ্রী উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) ও সেকেন্ড অফিসার অলক বড়ুয়ার মাধ্যমে পৌঁছে দিয়েছেন। ১৪ মে উপজেলার সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চলের গোলগাঁওসহ বিভিন্ন অঞ্চলের অসহায় গরীবদেরকে ওসির দেয়া খাদ্য সামগ্রী সংবাদকর্মী নুর উদ্দিন সুমনের মাধ্যমে সাদা বস্তার একটি প্যাকেটে প্রত্যেকের হাতে খাদ্য উপহার তুলে দেয়া হয়। মুহূর্তেই হতদরিদ্র মানুষগুলোর মুখে ফুটে উঠল হাসি আর আনন্দের ঝিলিক।হতদরিদ্র রাসেল মিয়া অবাক হয়ে বলেন, সত্যিই তাই! ওসি স্যারের পক্ষে প্যাকেট ভর্তি খাদ্য উপহার দিলেন। ইন্সপেক্টর তদন্ত চম্পক দাম বলেন, আমাদের ওসি স্যার করোনা পজিটিভের পর হোম কোয়ারান্টাইনে আছেন এবং বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন। স্যারের নির্দেশে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের হাতে পৌঁছে দিচ্ছি দুর্যোগ মুহূর্তের সবচেয়ে বড় উপহার খাদ্য সহায়তা। আমাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
সাংবাদিক নুর উদ্দিন সুমন জানালেন, করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে প্রত্যান্ত অঞ্চলসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কর্মহীন অসহায় দিনমজুর ও মধ্যেবিত্তরা মোবাইল ফোনে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মেসেঞ্জারে তাদের দুঃখের কথা জানান, আর তিনি সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করে খাদ্য সামগ্রী গরীবদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দেন। তিনি আরও জানান, এই মূহূর্তে অধিকাংশ লোকজনের খাদ্য সংকট। তাই মুখ ফুটে কোথাও প্রকাশ করতে পারেননি অনেক লোক । এমন পরিস্থিতিতে অচেনা এক হুজুর মানুষ বাহুবল উপজেলার ফদ্রখলা এলাকার বাসিন্দা তিনি ১৩ মে ফোন করেন ৩দিন ধরে তার তার ঘরে কিছু নেই দুটি শিশু সন্তান নিয়ে খুবই বিপাকে। বিষয়টি তাৎক্ষণিক ওসি সাহেবের মেসেঞ্জারে গেলে মানবিক ওসি ওই পরিবারের মাঝে ১০কেজি চাউল, দুই কেজি ডাউল, ১লিটার তৈল, ২কেজি আলু, এক কেজি লবনসহ ১সাপ্তাহের খাদ্য সামগ্রী দিলেন। এই হুজুরের মতো শতাধিক অসহায় মানুষের পাশে এই সময় দেবদূত হয়ে হয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছালেন ওসি শেখ নাজমুল হক । ষাটোর্ধ সুফিয়া বেগম বলেন, ওসির দেয়া খাদ্য উপহারের প্যাকেট খুলে দেখলেন তাতে চাল, ডাল, তেল, আলু ও রয়েছে। এ সময় আবেগ ধরে রাখতে না পেরে তিনি কেঁদে ফেলেন। সেই সঙ্গে বলেন, ‘যে পুলিশের ভয়ে থাকি, সেই পুলিশ এই দুর্দিনে সহযোগিতার জন্য খাদ্য সহয়তা দিলো। ওসির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি। এসব খাবার পেয়ে অনেক উপকার হলো। শুধু সুফিয়া নন, ওসির পক্ষ থেকে দিনে আনে দিনে খায় এমন হতদরিদ্র পরিবারের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, এনজিও আশার সহযোগিতায় ওসি শেখ নাজমুল হকের পক্ষ থেকে এই পর্যন্ত মুঠোফোন ও এসএমএস এর মাধ্যমে উপজেলার অধিকাংশ গরীব দেখে উপহার হিসেবে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। যারাই ফোনে সহযোগিতা চেয়ে কল করছেন তাদের বাড়িতে দ্রুত পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে খাদ্য সামগ্রী। এতে করে উপকৃত হচ্ছেন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের নানা বয়সী অসহায়-কর্মহীন মানুষজন। সেকন্ড অফিসার অলক বড়ুয়া জানান, এর আগে থানা প্রাঙ্গনে প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক, রিক্সা চালকসহ অসংখ্য পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে । এমন মানবিক কার্যক্রম প্রতিদিনই চলছে। এসব খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে- চাল, আলু, ডাল, তেল ও লবন। এ বিষয়ে ওসি শেখ নাজমুল হক বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে চলমান লকডাউনে মানুষজন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাই আমি মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। যারা কল এবং এসএমএস করছে তাদের বাড়িতে আমাদের পুলিশের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছি। তিনি সমাজে অনেক বিত্তশালী আছেন। তাদের প্রতি আহ্বান- গরীব, অসহায়, কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে আরও বলেন, যেকোন পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো। এছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে থানা পুলিশের এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।
Leave a Reply