স্টাফ রিপোর্টার ॥ মা ও নবজাতকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে চাঁেদর হাসি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। আর এই হত্যার অভিযোগ এনে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেন সদর উপজেলার গোপায়া ইউনিয়নের যাত্রাবড়বাড়ীর মৃত নূর হোসেন এর পুত্র মোঃ মুমিন মিয়া।
জানা যায়, হবিগঞ্জ শহরের বিলাসবহুল চাঁদের হাসি ক্লিনিকের ডাক্তার নার্সসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মা ও নবজাতক হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হবিগঞ্জের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমল-১ আদালতে সদর উপজেলার যাত্রাবড়বাড়ীর মৃত নুর হোসেনের পুত্র মোমিন মিয়া বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামীরা হলো কোর্ট মসজিদ রোড এলাকার জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে অবস্থিত চাঁদের হাসি হাসপাতালের ডাক্তার হালিমা নাজনীন মিলি (৪৫), ডাক্তার আশিক আহমেদ (৪০), ল্যাব ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন (৪৮) ও নার্স মমতাজ আক্তার রিনা (৪৫) সহ আরো দুই জন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, প্রতিবেশী মৃত সৈয়দ আলীর পুত্র মোহন মিয়ার সাথে এক বছর আগে বাদীর বোন নিহত নাজু আক্তার (২০) কে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পর তার স্বামী ও ভাসুর তার উপর নির্যাতন শুরু করে। দাম্পত্য জীবনে নাজু আক্তার গর্ভবতী হয়ে পড়ে। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার গর্ভে পুত্র সন্তান রয়েছে বলে রিপোর্ট আসে। গত ৩১ জানুয়ারী সকালে ছাদের হাসি ক্লিনিকে নাজুকে ভর্তি করা হয়। আবার পুনরায় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডাক্তার বলে তার সিজার করাতে হবে। বাচ্চার অবস্থা ভাল নয়। যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাদের কথামতো আমরা সিজার করাতে রাজি হই এবং টাকাও ক্যাশে জমা করি। ওই দিন রাতে নাজুকে উল্লেখিতরা সিজারের নামে অপচিকিৎসা চালায়। এক পর্যায়ে তার নবজাতককে পরিকল্পিত হত্যা করে লাশ গুমের চেষ্টা চালায়। শুধু তাই নয়, নাজুর জরায়ু কেটে ফেলে তারা। অতিরিক্তি রক্তকরণের ফলে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। ওইদিন রাত ১টার দিকে নাজুকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর পরদিন সকালে নাজু মারা যায়। সিলেটের ডাক্তার বলেন, জরায়ু কেটে ফেলায় অতিরিক্ত রক্তকরণের ফলে নাজুর মৃত্যু হয়েছে। বাদীর বিষয়টি সন্দেহ হলে সিলেট কতোয়ালী থানাকে অবহিত করেন। এসআই মোঃ দেলোয়ার হোসেন, কনস্টেবল তান্নী বেগমসহ একদল পুলিশ এসে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্ত শেষে ৫ ফেব্রুয়ারী বিকেলে লাশটি বাদীর কাছে হস্তান্তর করে। বাড়ীতে এনে লাশ দাফন করা হয়। পরে জানতে পারেন তারা আসামী জামাল ও নাজুর স্বামী মোহন মিয়া পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছাদের হাসির ডাক্তারকে দিয়ে তার বোনকে ও নবজাতককে হত্যা করে লাশ গুমের চেষ্টা করা হয়েছে। অবশেষে নিরোপায় হয়ে গতকাল এ মামলা দায়ের করা হয়। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ প্রদান করেন।চাঁদের হাসির ক্লিনিকের পরিচালক মোঃ নাসির উদ্দিন জানান, তাদের হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যে প্রণোদিত। এ রকম কোন ঘটনা ঘটেনি। যারা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি বলেন। তারা যে রোগীটি নিয়ে এসেছিলেন ওই রোগীকে অন্যত্র চিকিৎসা করিয়ে তার অবস্থা একেবারেই আশংখ্যাজনক ছিল। তাদের অনেক অনুরোধের কারনে আমরা লিখিত নিয়ে চিকিৎসা করি। এমন কি বিনামুল্যে আমাদের হাসপাতালের এক স্টাফ ওই রোগী রক্তদান করেন। আমাদের এখানে কোন প্রকার ভুল চিকিৎসা করা হয়নি। আমরা শতভাগ সঠিকক চিকিৎসা দিয়েছি।
Leave a Reply