দিলোয়ার হোসেন, বানিয়াচং : করোনাভাইরাসের আক্রমণে স্তব্ধ হয়ে গেছে পৃথিবী। পালটা আক্রমণ চালাতে উঠেপড়ে লেগেছেন বিশ্বের সব বাঘা বাঘা চিকিৎসাবিজ্ঞানী। কিন্তু কোনো কূলকিনারা করতে পারছেন না তারা। করোনার থাবায় বেহাল দশা সারাবিশ্ব। এর প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়েছে বাংলাদেশেও। বাংলাদেশে দিনদিন যেন হুহু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও।
করোনা মোকাবিলায় সরকার দেশের মানুষকে ঘরে থাকার আহবান জানিয়েছে। কোথাও কোথাও লকডাউনের ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। তাই ঘর থেকে বের হতে পারছেন না মানুষ। এর প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়েছে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পেও। বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার পর্যটন স্পটগুলোর মত স্থবির হয়ে আছে বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচংয়ের কমলারাণীর দিঘি বা সাগর দিঘী।
ক’দিন আগেও ছিল শতশত লোকে লোকারণ্য। দিঘির চারপাড়ে ঘুরে বেড়াতেন দর্শনার্থীরা। মানুষের পদচারণায় ছিল মুখরিত। কিন্তু এখন একেবারেই জনশূন্য! করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের মানুষ এখন ঘরবন্দী। মানুষের পদভারে একসময় দিঘির পাড়ে বিলীন হয়ে যাওয়া সবুজ ঘাস আবারও গজাতে শুরু করেছে। কচি ঘাসগুলো দর্শনার্থীদের বাদামের খোসায় এখন আর তলিয়ে যাচ্ছে না। কি অপরূপ দৃশ্য!
প্রতিদিন যেখানে সারাদিনই থাকতো দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীর সেখানে আজ নেই কোনো মানুষ। নেই কোনো মানুষের পদচারনা। সর্বত্র বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। জেলা শহর হবিগঞ্জ থেকে ১৮ কিলোমিটার উত্তরে বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচংয়ের এই সাগরদিঘী ছিল লোকে লোকারণ্য। দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল প্রকৃতি যেন সৃষ্টিকর্তার কাছে একটা বিরতি চেয়েছিল। হয়েছেও তাই। আগের মত এখন দিঘিতে মানুষের গিজগিজ নেই। নেই প্রাণচাঞ্চল্য। নেই কোনো চটপটি বা ঝালমুড়ির দোকান। দিঘির জলে পা ভিজিয়ে এখন তরুণ-তরুণীদের ছবি তুলার দৃশ্যও দেখা যায় না। দেখা যায় না তাদের ঝালমুড়ি বা চটপটি খাওয়ার দৃশ্য! নেই সেলফি তুলার ঝুম, নেই ফেসবুকে ছবি আপলোড। নেই ফেসবুক লাইভ। নেই ছেলে-মেয়েদের বসে বসে ফেসবুকিংয়ের খণ্ড খণ্ড দৃশ্যে। সবকিছু থামিয়ে দিয়েছে করোনা নামক মরনঘাতি ভাইরাস! শুক্রবার (২২মে) কমলারাণীর দিঘি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিঘির চারপাড়ে কোথাও জন মানুষের চলাচল নেই। চলছে না কোন ধরনের গণ পরিবহনও। এলাকার মানুষ একান্ত খুবই জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। করোনাভাইরাস নিয়ে সবাই শঙ্কিত। সাধারণ মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী। মাঝে মাঝে সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায় দিঘির পাড় দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তায়। মরণঘাতি করোনাভাইরাস একদিন ঠিকই এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে। বিদায় নিবে বাংলাদেশ থেকেও। প্রকৃতিতে বিরাজ করবে নতুন দৃশ্য। তখন আবার প্রাণচাঞ্চল্যে জেগে ওঠবে বাংলাদেশ। জেগে ওঠবে বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং। তখন অপরূপ দৃশ্য ধারণ করবে ঐতিহাসিক কমলারাণীর দিঘিতেও। আবারও প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে উঠবে দিঘির চারপাড়। আবারও দর্শনার্থীদের বাদাম খোসায় বিলীন হবে কচি ঘাসগুলো। বিকেলবেলা দিঘির পাড়ে বসে চলবে ফেসবুকিং। চলবে আড্ডা আর চটপটি-ঝালমুড়ি খাওয়া। এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
Leave a Reply