নাজিম উদ্দিন সুহাগ ॥ হবিগঞ্জ শহরের প্রধান সড়ক সংস্কারের নামে হালকা বিটুমিন ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে। কাজের এমন নিম্নমান দেখে স্তম্ভিত হয়ে পড়েছেন হবিগঞ্জ শহরবাসী। দিনেরবেলা প্রধান সড়কে বিটুমিটের হালকা ছাপ আর ছড়িয়ে থাকা পাথর কণা দেখে প্রথমে শহরবাসী অনেকেই মনে করেন পাথরবোঝাই ট্রাক চলাচলের কারণে হয়তো রাস্তার উপর পাথরকণা পড়েছে। পরে পাথরকণার সাথে কালো পিচ দেখে তাদের ধারণা হয়ে হয়তো আগের রাতে সংস্কারের নামে শহরবাসীকে উপহাস করা হয়েছে। যে সংস্কার করা হয়েছে তা ১২ ঘন্টাও টেকেনি। দেখে বুঝার উপায় নেই মাত্র ১২ ঘন্টা আগে মেরামত করা হয়েছে এ সড়ক। হালকা যান আর পথচারীদের চলাচলেই উধাও হয়ে গেছে লাখ লাখ টাকার সংস্কার কাজ।
হবিগঞ্জ শহরের প্রধান সড়ক মেরামত কাজে এই অনিয়ম দেখতে পেয়ে নতুন করে মেরামতের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তবে এমন অনিয়মের জন্য তদারকি প্রতিষ্ঠানকেই দায়ী করছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার।সূত্র জানায়, শহরের প্রধান সড়কের কিছু অংশ মেরামতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর দরপত্র আহবান করে জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ১৫ নভেম্বর ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে এ মেরামত কাজের কার্যাদেশ পায় চট্টগ্রামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও গত ১৮ জানুয়ারি রাতে শহরের পুরান মুন্সেফী এলাকায় মেরামত কাজ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। পরদিন দুপুর পর্যন্তও টিকেনি মেরামতের আলামত। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (শায়েস্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জ) জ্যোতিষ গোস্বামী বলেন, কাজটা ছিল আমাদের রিপিয়ার সীলকোট অর্থাৎ প্রথমে রিপিয়ার করে পরে সেখানে সীলকোট করতে হবে। কাজটা করার সময় কাজের কোয়ালিটি একেবারে বাজে হয়ে গেছে। কাজটা ঠিকমত করতে পারেনি। না করার কারণে কাজটা নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা ঠিকাদারকে বলে দিয়েছি- তোমার কাজটা ঠিক করে নিতে হবে। পুরোপুরি ঠিক না করা পর্যন্ত আমরা বিল দেই না। এখন পর্যন্ত আমরা একটা পয়সা বিলও দেইনি। ওই কাজটা সম্পূর্ণ করার পর আমরা তাকে বিল পরিশোধ করব। এখানে সীলকোটের থিকনেস ছিল ১২ মিলিমিটার। আর পুরুত্বটা এভারেজ আমরা দুই ইঞ্চি করে ধরি পুরো থিকনেসটা। কার্পেটিং ৩৮ মিলিমিটার, এভারেজ প্রশস্ততা ১৮ ফুট। এখানে সে খুব বেশি কাজ করেনি। এখানে খুব বেশি যদি হয় ১০ ফুটের মধ্যে হবে। দুই সাইডেই সে কাজটা ছেড়ে দিয়ে মধ্য দিয়ে গেছে।সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারকে ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছি। কাজটি সুচারুরূপে সম্পূর্ণ হওয়ার পর আমরা কাজটির বিল ঠিকাদারকে দেব। ঠিকাদার ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রুটি রাখলে আমরা বিল দেব না। এটাইতো আমাদের মেকানিজম। আর পরবর্তীতে যদি বিল দেয়ার পরও কোন প্রকার ত্রুটি পরিলক্ষিত হয় সম্পাদিত কাজে তখনও সেখানে ত্রুটি নিরসনের জন্য এক বছর পর্যন্ত রিপেয়ার লাইবিলিটি পিরিয়ড থেকে যায় এবং এর জন্য কিছু অর্থ আমাদের এখানে গচ্ছিত থাকে। কাজটি যথাযথভাবে সম্পন্ন হওয়ার পরই ঠিকাদার অব্যাহতি পাবে এবং যথাযথভাবে সিডিউল অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করা ঠিকাদারীর মধ্যে পড়ে। ঠিকাদার কাজটি যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরই বিল দেয়া হবে। তারপরই ঠিকাদারের দায় মুক্ত হবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ-এ নিশ্চিত করেই কাজটির বিল প্রদান করবে।
এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) হবিগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন বলেন, আমার স্মরণে আসে না এতবড় দুর্নীতি হবিগঞ্জে আমি দেখেছি। যেখানে গতরাতে দুই আড়াইটার সময় সড়ক ও জনপথের তারা এ কাজটি করেছেন। হবিগঞ্জে সামনের রাস্তা হবিগঞ্জের প্রাণের রাস্তা বলা চলে এ রাস্তাটি আমাদের একমাত্র অবলম্বন। এই রাস্তায় যেখানে ১৬ মিলিমিটার থিকনেস থাকার কথা সেখানে যে থিকনেস দেয়া হয়েছে তা শুধু গাড়ির জন্য না, শুধুমাত্র যারা ভোরে হাঁটাহাঁটি করেন তাদের পায়ের ঘর্ষণেই পিচ উঠে গেছে। এতবড় দুর্নীতি এটা কোন অবস্থাতেই হবিগঞ্জবাসী মেনে নেবে না। আমরা তো মেনে নেয়ার প্রশ্নই উঠে না। আমি মনে করি- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সর্বত্রই বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্ট। সেই ক্ষেত্রে এ রকম দুর্নীতিবাজরা এই স্বল্প সময়ের মধ্যে যে দুর্নীতি করল এটা মনে হচ্ছে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ওরা যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এসব দুর্নীতিবাজদের অতিসত্তর দুর্নীতি দমন কমিশন এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা উচিত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া উচিত। যাতে করে বাংলাদেশে অন্যান্য যারা আছে ঠিকাদার, ইঞ্জিনিয়ার তারা যেন দৃষ্টান্ত পায় যে এ ধরনের কাজ করে পার পাওয়া যায় না। আমরা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চাই। সেই ক্ষেত্রে হবিগঞ্জ থেকেই শুরু হউক এর প্রথম পদক্ষেপ।এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের মোহাম্মদ ইউনুছ এন্ড ব্রাদার্স-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ইউনুছের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যান। পরে তিনি তদারকি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের গালাগাল করেন।
Leave a Reply