আশীষ দে : আমরা বাঙ্গালীদের বহির্বিশ্বে একটি বদনাম রয়েছে- আমরা কাউকে উপরে উটতে দেই তো না-ই বরং টেনে নিচে নামানোর চেষ্টা করি। আমরা কাঁদা ছুড়াছুড়িতে ও সিদ্ধহস্ত! সেটা হোক জল-মাঠির কাঁদা কিংবা কথার কাঁদা, এই বিশেষ বস্তুটি ছুড়তে আমাদের জুড়ি মেলা ভার। আরেকটা বিষয় হচ্ছে গুজব, হ্যাঁ গুজব ছড়ানোতেও আমরা অদ্বিতীয়, এই রঙ্গিন ভার্চুয়াল পৃথিবীতে আমাদের মতো গুজবে বিশ্বাসী জাতি আর দ্বিতীয়টা আছে কিনা সন্দেহ। কথা হচ্ছিল বাংলাদেশের প্রথম স্মার্ট ও ডিজিটাল শহর সিলেটকে নিয়ে যে শহরে থাকবে না বৈদ্যুতিক তারের জঞ্জাল, ইতিমধ্যে নগরীর দরগা গেট এলাকা ভূ-গর্ভস্থ বৈদ্যুতিক ব্যাবস্থাপনার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে, যার একটি ছবি ইতিমধ্যে সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে ও প্রকল্পটি সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে। ভাইরাল হওয়া ছবিটিতে অনেকেই কমেন্ট করছেন “এটা ইউরোপ আমেরিকা নয় আমাদের সিলেট এর ছবি ” হ্যাঁ ছবিটির দিকে তাকালে উন্নত কোন দেশের প্রতিচ্ছবি চোখে ভেসে আসাটাই স্বাভাবিক।
খুটিবিহীন এই বিদ্যুৎ প্রকল্প আপাতত কেবল সিলেটের ছোট্র একটি এলাকায় বাস্তবায়িত হলেও,এতে উত্ফুল্ল, উচ্চশিত ও গর্বিত হয়েছেন সারা বাংলাদেশের মানুষ। ভাইরাল হওয়া ছবিটিতে দেখা যায় এটা কেবলমাত্র সিলেটীরাই নন বরং সারা দেশের মানুষ গর্বের সাথে শেয়ার করেছেন এবং অনেকটাই দলমত নির্বিশেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের সুযোগ্য তনয়া, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অগ্রযাত্রাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এটা দেখে সকল দেশপ্রেমিক বাংলাদেশীর মতো আমার বুকটা গর্বে ভরে উঠেছে! রক্তের ভেতরে এক অজানা আনন্দ খেলা করে জাতিকে আনন্দে মেতে উঠতে দেখে।
কিন্তু প্রথম পর্বটা যতটা না আনন্দের,গর্বের ও খুশির, দ্বিতীয় পর্বটা ঠিক ততটাই বেদনার।
কেননা এই পর্বে আমাদের চিরায়ত সেই কাঁদা ছুড়াছুড়ি শুরু-
কে করলো, ক্রেডিট কার? মেয়র নাকি সরকারের, আগের মেয়র সাব করলেন না কেন, ইত্যাদি, ইত্যাদি?
কে ক্রেডিট নেবেন সেই বাকযুদ্ধ যখন শুরু হয় আমার মতো সাধারন জনগন দেশ ও জাতির উন্নতি সমৃদ্ধিতে যারা গর্বিত হন তাদের মুখের হাসির রেখা তখন মিলিয়ে যেতে শুরু করে।
কাদাঁ ছুড়া যাদের কাজ তাদের লক্ষ্য একটাই আর তা হলো ভিত্তিহীন কল্পকথার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা আর সেটা করা গেলে এই জাতি কখনোই এক সুরে কথা বলবে না, অন্যের আনন্দে আনন্দিত হবে না,অন্যের কষ্টে ব্যাথিত হবে না। এটাই তো তাদের চাওয়া।
মেজর জিয়াউর রহমান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষনা পত্র পাঠ করলেও জিয়াকেই স্বাধীনতার ঘোষক বানিয়ে দেওয়া অভিশপ্ত মানুষেরা আজও সমাজে বিদ্যমান । ১৫ আগস্টের শোকাবহ দিনে শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারনে যারা জন্মদিনের পার্টি করেছেন তারাও সুযোগের অপেক্ষায়। কিন্তুু এই দেশ এই জাতির ভাগ্যন্নয়োনে নিরলস কাজ করে যাওয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা যে বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না তা তিনি প্রমান করে দিয়েছেন সিসিকের উন্নয়নে ১২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার মাধ্যমে। সিসিকের মেয়র কোন দল করেন সেটা উন্নয়নের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ভাবেন না। রাস্ট্র বা সরকারের পর্যাপ্ত বরাদ্দ ছাড়া যেমন সিলেট তথাপি দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয় তেমনি মেয়র বা দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঠিক পরিকল্পনা ও সুষ্ঠু তদারকি ছাড়া উৎকৃষ্ট মানের কার্য সম্পাদন সম্ভব নয়৷ তাই কোন উন্নয়নই কেন্দ্রীয় সরকার বা স্থানীয় সরকারকে বাদ দিয়ে নয়। তাই আসুন আমরা অযথা কাঁদা ছুঁড়াছুড়ি বাদ দিয়ে সবাইকে প্রাপ্য সম্মানটুকু দেই। এখন জাতি ও দেশ গঠনের সময়, আমরা চিন্তা চেতনা ও মননে উন্নত হই।
দেশ ও জাতির উন্নয়নের প্রশ্নে আমরা একতাবদ্ধ হই। এখনই সময় এগিয়ে যাওয়ার, রকেট ছুড়ার, বিশ্ব জয়ের।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট
Leave a Reply