শনিবার, ২৩ মার্চ ২০২৪, ০৮:০২ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
চুনারুঘাটে পেঁয়াজের বস্তায় মিললো ৫ কেজি গাঁজা: যুবক গ্রেপ্তার বোরকা পরিহিত নারীর বিশেষ স্থান থেকে গাঁজা উদ্ধার : গ্রেফতার ৪ মিরপুরে ভয়াবহ আগুন ১৪টি দোকান পুড়ে ছাই হত্যার ২৬ বছর পর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ঢাকায় গ্রেপ্তার হবিগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ইন্সপেক্টর তদন্ত প্রজিত কুমার দাস সহ চুনারুঘাটের ৩ উপপরিদর্শক আর্থপিডিয়া কর্তৃক সিভি লেখা ও চাকুরির ইন্টারভিউ ওয়ার্কশপ” নামক কর্মশালা অনুষ্ঠিত আজ চুনারুঘাট ব্যারিস্টার সুমন এমপি’র তারণ্যের সমাবেশ ॥ মাধবপুরে খাল পরিস্কার শুরু করলেন ব্যারিস্টার সুমন এমপি হবিগঞ্জের ইতিহাসে আজ কলঙ্কের ২৭ জানুয়ারি শায়েস্তাগঞ্জে রেলের জায়গা দখল নিয়ে দুই পক্ষের মাঝে উত্তেজনা

মানসম্মত নাগরিক সেবায় বিট পুলিশিং -ডিআইজি মো: কামরুল আহসান বিপিএম-বার

নুর উদ্দিন সুমন, বার্তা সম্পাদক
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৯
  • ২০৬ বার পঠিত

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন মাপকাঠিতে বাংলাদেশ বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে। উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এবং টেকসই করতে হলে সুষ্ঠু আইনশৃঙ্খলার কোনো বিকল্প নেই। আর টেকসই আইনশৃঙ্খলার জন্য জনগণের সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততা অত্যাবশ্যক। পুলিশকে গণমুখী ও জনবান্ধব করার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করতে পারি। এসব উদ্যোগ কিছু নেয়া হয়েছিল পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর দাপ্তরিক আদেশ, নির্দেশ, প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এবং কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল কতিপয় সৃজনশীণ কর্মকর্তার কর্মক্ষেত্রে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচী ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে। আইনগত পরিকাঠামোর সীমাবদ্ধতার মাঝে এসব উদ্যোগ নিঃসন্দেহে পুলিশের ভূমিকাকে আরও উজ্জ্বল করেছে এবং পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থার সংকট কাটিয়ে পুলিশ-জনতা সম্পর্কোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

একটি গণতান্ত্রিক দেশে প্রতিটি নাগরিকের পুলিশি সেবাপ্রাপ্তিতে অধিকার রয়েছে। এক সময় বলা হতো জনসংখ্যার অনুপাতে পুলিশের সংখ্যা কম থাকায় সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও জনগণকে কাঙ্খিত সেবা প্রদান করা সম্ভব হয় না। সরকারের উদ্যোগে জনবল বৃদ্ধির পর যদিও পুলিশ-জনতা অনুপাত এখনও আর্ন্তজাতিক মানের অনেক পেছনে; তবুও নিঃসন্দেহে বলা যায়, বর্তমানে পুলিশের সক্ষমতাও অনেক বেড়েছে। নবগঠিত বিভিন্ন বিশেষায়িত ইউনিট (যেমন-নৌ পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ ইত্যাদি) পুলিশের প্রধান সেবাদান কেন্দ্র (Service Delivery Unit) হিসেবে থানার বর্ধিত জনবলের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে জনআকাঙ্খা পূরণের দিকে দৃষ্টি দেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে।

পুলিশকে কীভাবে জনমুখী ও জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা যায়, প্রতিটি থানার, প্রত্যন্ত এলাকাতে কীভাবে পুলিশের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়, পুলিশের কার্যক্রমে কীভাবে আরও গতি আনা যায় এবং সর্বোপরি বিদ্যমান সর্বোচ্চ ব্যবহারের নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে পুলিশের কার্যক্রমকে কীভাবে আরও গতিশীল করা যায় এসব বহুমুখী প্রশ্নের সমাধানের পথ হচ্ছে সম্প্রসারিত বিট পুলিশিং কার্যক্রম।

প্রশ্ন উঠতে পারে বিট পুলিশিং ও সম্প্রসারিত বিট পুলিশিং এর মধ্যে পার্থক্য কোথায়। পিআরবি ৩৫৬ (চ) ও ১০৮৭ তে বিট পুলিশিংয়ের বিষয় বর্ণিত আছে এবং সেটি শুধু শহর এলাকার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে শহর এলাকায় নিবিড় পুলিশিং সম্ভব হয়। বাংলাদেশের বিশাল বিস্তৃত গ্রামাঞ্চলে নিবিড় পুলিশিংয়ের কোন পদ্ধতি এখনো প্রচলিত নেই। বর্তমানে থানাগুলোর জনবল কাঠামো ও ইউনিয়ন সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিট পুলিশিংয়ের কার্যক্রম ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত করা সম্ভব। থানায় পুলিশি সেবা জনগণের একেবারে দোরগোড়ায় পৌঁছানো এবং পুলিশের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল ও গণমুখী করার প্রত্যয় নিয়ে ২০১৭ সালে পুলিশের নিকট সিলেট রেঞ্জের প্রতিটি পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে শুরু করা হয় বিট পুলিশিং কার্যক্রম। যেহেতু বিট পুলিশিংয়ের মূল আইনি ভিত্তি-নির্যাস অক্ষুন্ন রেখে শহর এলাকার বাইরে এটি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বিস্তার ঘটানো হয়েছে, সেজন্য এর নামকরণ করা হয়েছে “সম্প্রসারিত বিট পুলিশিং”।

প্রশ্ন উঠতে পারে থানা, তদন্ত কেন্দ্র, ফাঁড়ি ইত্যাদি ইউনিট থাকার পরও পুলিশের উপস্থিতি ইউনিয়ন পর্যন্ত নেয়ার কারণ বা যুক্তি কি? বর্তমানে থানাগুলো যে ভৌগলিক এলাকা নিয়ে গঠিত সেগুলোর মধ্যে আয়তনগত অনেক তারতম্য রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই থানার অধিক্ষেত্র অনেক বড় ও যাতায়াত ব্যবস্থা ও দূর্গম। থানার অধীনে অনেক ক্ষেত্রে একটি তদন্ত কেন্দ্র বা ফাঁড়ি রয়েছে। অনেক ইউনিয়ন রয়েছে যেগুলো থানা থেকে ১৫-২০ কিলোমিটার বা আরও দূর্গম এলাকায় অবস্থিত এবং যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো নয়। দূরবর্তী এলাকার জনগণ খুব প্রয়োজন না হলে থানায় তেমন একটা আসে না। আইনশৃঙ্খলাজনিত কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব না হলে অথবা মামলার ঘটনাস্থল না হলে থানা থেকে পুলিশ সেসব এলাকায় নিয়মিত টহল বা অন্যবিধ প্রয়োজনে খুব একটা যেতে উৎসাহী হন না। ফলে জনগণের সঙ্গে পুলিশের দূরত্ব তৈরি হয়। যা থেকে জন্ম নেয় অবিশ্বাস, আস্থাহীনতা ও ভুল বোঝাবুঝির। কমিউনিটি পুলিশিংসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে দীর্ঘদিন চেষ্টা করার পরও ভৌগলিক দূরত্ব ও সুনিদির্ষ্ট কাঠামোবদ্ধ কর্মসূচীর অভাবে এ ক্ষেত্রে কাঙ্খিত মাত্রার অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এছাড়া পুলিশের অনিয়মিত উপস্থিতির সুযোগে অপরাধীরাও সক্রিয় হয়ে উঠে। গ্রাম্য টাউট ও দালালদের দৌরাত্ন্য বৃদ্ধি পায়। এলাকা থেকে অপরাধ, অগ্রিম গোয়েন্দা তথ্য প্রাপ্তির সুযোগও সীমিত হয়ে পড়ে। পুলিশের নজরদারি হ্রাস পায়। এ অবস্থায় সম্প্রসারিত বিট পুলিশিং সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে বর্ণিত সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব।

থানার অধীনে সাধারণত একটি পৌরসভা ও কিছুসংখ্যক ইউনিয়ন থাকে। অনেক থানার অধিক্ষেত্রে আবার কোনো পৌরসভা নেই। পৌর এলাকা গঠিত হয় সাধারণত ০৯টি ওয়ার্ড়ের সমন্বয়ে। পৌর এলাকার জন্য ০৩ টি ওয়ার্ড়কে ০১ টি বিট হিসেবে গণ্য করে শহরাঞ্চলে বিট পুলিশিং সংগঠিত করা হয়েছে। অপরদিকে প্রতিটি ইউনিয়নকে গণ্য করা হয়েছে ০১ টি বিট হিসেবে। প্রতি বিটের জন্য থানার একজন এসআই এবং ০১ জন এএসআইকে যথাক্রমে বিট কর্মকর্তা ও সহকারি বিট কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতি বিটের জন্য ০১ টি করে মোবাইল সীম বরাদ্দ দেয়া হয়। ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স (যেগুলোতে ভবন নেই সেগুলো ব্যতীত) ০১ টি করে কক্ষ নেয়া হয়েছে, যা সম্প্রসারিত বিট পুলিশিং কর্মকর্তার কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিট কর্মকর্তা সপ্তাহে ০২-০৩ দিন এ কার্যালয়ে নির্ধারিত সময়ে অবস্থান করে এলাকাবাসির সঙ্গে মতবিনিময় ও তাদের আইনশৃঙ্খলা জনিত সমস্যা সমাধানসহ বিট কর্মকর্তার জন্য নির্ধারিত দায়িত্বগুলো পালন করেন।

ইউনিয়ন পরিষদ হচ্ছে স্থানীয় সরকার কাঠামোর সর্বনিম্ন ধাপ। এ সংস্থাটির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউনিয়ন পরিষদের বেশকিছু কর্মসূচী পুলিশের সঙ্গে সর্ম্পকিত। যেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা, নারী-শিশুদের কল্যান ইত্যাদি। ইউনিয়ন পরিষদে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক কমিটি রয়েছে এবং এ কমিটিগুলো প্রতি মাসে সভায় মিলিত হয়ে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন-আইনশৃঙ্খলা সভা, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সভা, পারিবারিক বিরোধ নিরসন এবং নারী ও শিশু কল্যাণ সভা, চোরাচালান নিরোধ সভা ইত্যাদি। বিষয়গুলো পুলিশি দায়িত্বের সঙ্গে সর্ম্পকিত হলেও এ সংক্রান্ত সভাগুলোতে পুলিশের প্রতিনিধি বেশীরভাগ ক্ষেত্রে উপস্থিত থাকেন না। বিট অফিসাররা যেহেতু ইউনিয়ন পরিষদে তাদের সংশ্লিষ্ট বিট অফিসে সপ্তাহের বিভিন্ন নির্ধারিত দিনে উপস্থিত থাকেন, তাই ইউনিয়ন পরিষদে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সভায় বিট অফিসাররা উপস্থিত থাকলে ঐ ইউনিয়নের সার্বিক পরিস্থিতি সর্ম্পকে ওয়াকিবহাল থাকবেন এবং দ্রুত পুলিশি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। সেজন্যই ইউনিয়ন পরিষদকে সম্প্রসারিত বিট পুলিশিং এর মূল কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য বিট কর্মকর্তাদের জন্য সুনির্দিস্ট কর্মপরিধি প্রনয়ণ করা হয়েছে এবং তাদের রির্পোটিং সিস্টেমও সুনির্দিস্ট করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে একজন বিট কর্মকর্তাকে ১৩টি সুনির্র্দিষ্ট কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এর পরিধি আরো বাড়ানো হয়েছে। কর্মপরিধি সুনির্দিস্ট থাকায় কোনো রকম দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই সব বিট কর্মকর্তা একই রকম দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবেন। দায়িত্বগুলোর মধ্যে প্রধান কয়েকটি হচ্ছে এলাকার মাদক বিষয়ক, ওয়ারেন্টধারী, অপরাধী, ভাড়াটিয়া ও প্রবাসীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা ও উঠান বৈঠক করা ইত্যাদি।

সম্প্রসারিত বিট পুলিশিং কার্যক্রমে থানায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বিট পুলিশিং কার্যক্রমের মাধ্যমে মামলা তদন্ত, আসামি গ্রেপ্তার, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন। এসব কর্মকান্ডের মাধ্যমে একটি থানার প্রতিটি প্রান্তে নিবিড় পুলিশিং নির্ভুলভাবে করা সম্ভব হয়। ফলে একদিকে যেমন প্রান্তিক জনগোষ্ঠি উপকৃত হচ্ছে অন্যদিকে পুলিশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হচ্ছে। সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে সম্প্রসারিত বিট পুলিশিং থেকে নিম্নলিখিত সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে।

পুলিশের সঙ্গে জনগণের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠবে। পুলিশ-জনগণের মধ্যে দুরত্ব হ্রাস পাবে।

প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসকারী জনগণ তাদের প্রয়োজনে সহজেই পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সাক্ষাৎ করতে পারবেন। জনগণ তাদের সমস্যাবলি খুব সহজেই পুলিশকে জানাতে এবং প্রতিকার চাইতে পারবেন। এজন্য ১৫-২০ কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করার প্রয়োজন পড়বে না। ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স পর্যন্ত গেলেই হবে।

ইউনিয়ন পর্যন্ত পুলিশের উপস্থিতির কারণে এলাকায় অপরাধ, মাদকের ব্যবসা ও ব্যবহার, জঙ্গিদের হুমকি, নারী ও শিশুদের প্রতি অপরাধ প্রবণতা (যেমন-ইভটিজিং, বাল্যবিয়ে) হ্রাস পাবে।

বিট কর্মকর্তা স্থানীয় চেয়াম্যান, ইউপি সদস্যসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহয়তায় স্থানীয় পর্যায়ের ছোটখাটো বিরোধ নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হবেন। যার মাধ্যমে সমাজে নাগরিকদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে। নিজ নিজ বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছেই পুলিশের উপস্থিতি থাকায় মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা বোধ (Sense of Security) বিরাজ করবে এবং মানুষ অনেকটা আশ^স্ত থাকবে।

পুলিশ কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ের অপরাধ চিত্র, অপরাধীদের তথ্য, অগ্রিম গোয়েন্দা তথ্য, নিরাপত্তা ঝুঁকিসহ গণতান্ত্রিক পুলিশিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য সরাসরি সংগ্রহ করতে সক্ষম হবে। এলাকার টাউট, দালাল, প্রতারক, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মান্তানদের দৌরাত্ম হ্রাস পাবে। কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম শক্তিশালী হবে। থানায় মোতায়েনকৃত জনবলের সর্বোত্তম ব্যবহার সম্ভব হবে।

পুলিশের ভামূর্তি অনেক উজ্জ্বল হবে। এলাকার বিরাজমান দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ নিষ্পত্তির সূচনা ঘটবে।

স্থানীয় ও প্রাথমিক পর্যায়ে বিবাদমান পক্ষগুলোর বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিট পুলিশিং ভূমিকা রাখতে পারে। একে সীমিত পরিসরে ADR বা Alternative Dispute Resolution হিসেবে গণ্য করা যায়।

পারিবারিক সহিংসতা বা Doemstic Violence এর শিকার নারীরা বিট কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ কিছু প্রতিকার পান। কেননা অনেক ক্ষেত্রেই এসব নারী থানায় গিয়ে অভিযোগ করার মতো আর্থিক, মানসিক বা সামাজিকভাবে সঙ্গতিপূর্ণ অবস্থায় থাকেন না।

জনবহুল বাংলাদেশে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো ভূমি। গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভূমির মালিকানা নিয়ে উদ্ভেূাত বিরোধ, হানাহানি, খুন তথা ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হয়। বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে এসব বিরোধ প্রাথমিকভাবে নিষ্পন্ন করা যায়; যা গুরুতর অপরাধ সংঘটনের সম্ভাবনা হ্রাস করে।

ইভটিজিং, যৌতুক, বাল্যবিয়ে ইত্যাদি সামাজিক সমস্যা নিরসনে জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও সচেতন করা অতি জরুরি। সম্প্রসারিত বিট পুলিশিং এমন একটি মাধ্যম যার সাহায্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে এসব অপরাধ প্রতিরোধ করা যায়।

প্রচলিত ধারার পুলিশিং, যা অপরাধ সংঘটনের পরে কার্যক্রম শুরু করে, তাকে আমরা সাধারণভাবে বলি Reactive Policing অন্যদিকে অপরাধ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে বলে Reactive Policing বা উদ্যোগী পুলিশিংয়ের একটি কার্যকর হাতিয়ার হল বিট পুলিশিং।

সিলেট রেঞ্জ পুলিশে নব সংযোজিত এ সম্প্রসারিত বিট পুলিশিং কার্যক্রমের ফলে সিলেট বিভাগের প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় পুলিশের নিয়মিত পদচারণা বিদ্যমান। ফলে একদিকে যেমন প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণ পুলিশি সেবা পাচ্ছে, সেইসঙ্গে বাড়ছে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা। সম্প্রসারিত বিট পুলিশিং কার্যক্রমের পরিধিকে আরও বিস্তৃত করার জন্য দাবি উঠছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছ থেকে। আগামীর সম্ভাবনাময় উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মানে জনগণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় সম্প্রসারিত বিট পুলিশিং কার্যক্রম সিলেট রেঞ্জ এর পাশাপাশি সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়বে, এটিই আশা করি।

লেখক: মো: কামরুল আহসান বিপিএম-বার, ডিআইজি, সিলেট রেঞ্জ, বাংলাদেশ পুলিশ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2019 Prothomsheba
Theme Developed BY ThemesBazar.Com