ডেস্ক রিপোর্টঃ সুনামগঞ্জের ধর্ষণের অভিযোগে এক মাদ্রাসাশিক্ষককে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। স্ত্রীর সহযোগিতায় দীর্ঘদিন এতিম ও হতদরিদ্র এক তরুণীকে দীর্ঘদিন ধর্ষণের অভিযোগে এ মামলা হয়।
সোমবার বিকালে সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জাকির হোসেন এ আদেশ দেন। এর আগে দুপুরে চুপিসারে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন আসামি মাওলানা আব্দুল হক।
এসময় মহিলা পরিষদের প্যানেল আইনজীবী মতিয়া আক্তার জামিনে বাধা দেন এবং চার্জশিট থেকে মাওলানা আব্দুল হকের স্ত্রী অভিযুক্ত সাকেরা আক্তারকে বাদ দেয়ায় আসামি পক্ষের আইনজীবী আদালতের কাছে নারাজি জানায়। পরে সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বিকালে মাওলানা আব্দুল হকের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সুনামগঞ্জ মহিলা পরিষদের প্যানেল আইনজীবী মতিয়া আক্তার বলেন, ‘মাওলানা আব্দুল হক প্রভাব বিস্তার করে চার্জশিট থেকে তার স্ত্রীকে বাদ দিয়েছেন। আমরা আদালতের মাধ্যমে চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি প্রদানের কথা বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর চুপিসারে এসে জামিন নিতে চেয়েছিলেন আব্দুল হক। আমরা খবর পেয়ে বাধা প্রদান করেছি। আদালত সবকিছু বিবেচনা করে তার জামিন নামঞ্জুর করেছে।’
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি নান্টু দাস মাওলানা আব্দুল হকের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশনার কথা স্বীকার করেছেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর ‘তরুণীকে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ’ শিরোনামে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে জেলাব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। এ নিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা মহিলা পরিষদসহ নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি মানববন্ধন করে। গত বছরের ৩০ অক্টোবর আব্দুল হক ও তার স্ত্রী সাকেরার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন নির্যাতিত তরুণী।
মামলার বিবরণে জানা যায়, দীর্ঘ এক দশক ছাতকের কালারুকা ইউনিয়নের নয়া লম্বাহাটি গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের ওই তরুণীকে ধর্মীয় কথাবার্তায় মোহাচ্ছন্ন করে স্ত্রীর সহায়তায় ধর্ষণ করে আসছিল হাসনাবাদ মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুল হক। ওই তরুণী আব্দুল হকের মেয়ের বান্ধবী ও তার মাদ্রাসার ছাত্রী। দুই বছর আগে এক বিবাহিত প্রবাসীর কাছে ওই তরুণীকে বিয়ে দেন মাওলানা আব্দুল হক। প্রবাসী স্বামী বিদেশ চলে যাওয়ার পর আব্দুল হক আবারও তরুণীকে ধর্ষণ করতে চাইলে বাধা দেন তিনি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তরুণীর বাবার বাড়ি এসে তাকে আবারও ধর্ষণ করেন ওই মাওলানা। বিষয়টি প্রবাসে থেকে জানতে পারেন তার স্বামী ও শ্বশুরের পরিবারের লোকজন। একপর্যায়ে নির্যাতিতা তরুণী তার পরিবার ও শ্বশুরের পরিবারকে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন চালানো মাওলানা আব্দুল হকের বর্বরতার কথা প্রকাশ করেন। এতে ক্ষুব্ধ ও হতভম্ব হয়ে পড়েন সবাই। এ ঘটনায় স্থানীয়ভাবে শালিস হলে মাওলানা আব্দুল হককে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। নির্যাতিত তরুণী আইনি আশ্রয় নিতে চাইলে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে মাওলানা আব্দুল হকের ঘনিষ্ঠজন ও কিছু শালিসকারী। শালিসকারীরা ফতোয়া জারি করে বলেন, ‘এ ঘটনা প্রকাশ করা পাপ এবং এতে আলেমসমাজের কলঙ্ক হবে।’ নানাভাবে নির্যাতিতাকে দমিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয় মাওলানা ও তার স্বজনরা। ধর্ষণের এ ঘটনা পর মাদ্রাসা কৃর্তপক্ষ মাওলানা আব্দুল হককে তাৎক্ষণিক বহিষ্কার করেছিল। গত ৩০ অক্টোবর মাতুব্বর ও মাওলানার স্বজনদের হুমকি উপেক্ষা করে ছাতক থানায় গিয়ে অভিযুক্ত মাওলানা আব্দুল হক ও তার স্ত্রী সাকেরা বেগমের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন ওই তরুণী। মামলার পর থেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান অভিযুক্ত দম্পত্তি। এক পর্যায়ে মামলা থেকে অভিযুক্ত স্ত্রী সাকেরা আক্তারকে বাদ দিয়ে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ।
Leave a Reply