নুর উদ্দিন সুমন : হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটে দীর্ঘ ৫৩ বছর পূর্বে সার্কেল অফিসার (সিও ডেভেলপমেন্ট) এর দায়িত্ব পালন করেছিলেন ডিসি ইশরাত জাহানের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম শামসুর রহমান। বর্তমানে তার কন্যা ইশরাত জাহান একই জেলা হবিগঞ্জের (ডিসি) জেলা প্রশাসক। দীর্ঘ ৫৩ বছর পর পিতার অতীতের কর্মস্থল প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমানের কর্মরত এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান। জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান ১৯৬৮ সালে চুনারুঘাট সার্কেল অফিসার (সিও ডেভেলপমেন্ট) হিসেবে যোগদান করেন। চুনারুঘাটে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। কর্মজীবনে বিভিন্ন পদে গুরুতপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সর্বশেষ চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ১৯৯৮ সালে তিনি কর্ম জীবনে অবসর গ্রহণ করেন। মো: শামসুর রহমান যশোর জেলা শহরের বাসিন্দা। ২০১৯ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: শামসুর রহমান মৃতু বরণ করেন। মৃতুকালে তার দুই ছেলে ও দুই কন্যা সন্তান রেখে যান। ভাই বোনদের মধ্যে ইশরাত জাহান তৃতীয়। ইশরাত জাহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী। তিনি লেখাপড়া শেষ করে বিসিএস ২২ তম ক্যাডার হন । চাকরি জীবনে তিনি খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, মাদারীপুর সদর উপজেলার ইউএনও, খুলনা জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বদলি হয়ে আসার পূর্ব পর্যন্ত ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ২) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গত ৬ মার্চ হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন। বিগত ২৯ এপ্রিল দীর্ঘ ৫৩ বছর পর পিতার অতীতের কর্মস্থল চুনারুঘাটে পরিদর্শনে আসেন হবিগঞ্জের ডিসি ইশরাত জাহান। প্রথমেই তিনি উপজেলার পুরাতন ভবন, পুরাতন পুকুর পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনে এসে হয়েছেন আবেগাপ্লুত। পিতার স্মৃতি তাঁকে অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছে ক্ষণিকের জন্য। আবেগ আর ভালোবাসায় নিজের পিতার কর্মস্থল পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান। চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদে পৌছালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সত্যজিত রায় দাশ ও সহকারী কমিশনার ভূমি মিলটন চন্দ্র পাল তাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান। তখন সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সহ বিভিন্ন দপ্তরের কার্যাক্রমের খোঁজ খবর নেন।
ডিসি ইশরাত জাহান বলেন, বাবার কর্মস্থল চুনারুঘাটে আসতে পেরেছি বলে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আমার অত্যন্ত আবেগের জায়গা এই হবিগঞ্জের চুনারুঘাট। চুনারুঘাট সহ হবিগঞ্জের উন্নয়ন অগ্রগতি হৃদয় দিয়ে করার চেষ্টা করব। কারণ এ জেলায় আমার পিতার অতীত কর্মস্থল ছিলো। তিনি আরও বলেন, আমি পিতার মুখে চুনারুঘাটসহ হবিগঞ্জ সম্পর্কে অনেক কথা শুনেছি এবং উপলব্ধি করতে পেরেছি। আমি এখানে আমার সবটুকু উজাড় করে সরকারের, আপনাদের উন্নয়ন প্রত্যাশাকে বাস্তবায়ন করতে এসেছি। আমার পিতা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগ্রামী মানুষ। সংগ্রাম করতেই ভালোবাসতেন তিনি। সংগ্রাম ও ভালোবাসা দিয়ে সবকিছুকে জয় করতে চাইতেন । খুব বেশি ভালোবাসতেন নিজের কর্মক্ষেত্রকে।সাধারণ মানুষদের ভালোবাসতেন। সেই সঙ্গে তাঁর সহকর্মীদের।
চুনারুঘাট উপজেলার তৎকালীন একমাত্র বিদ্যাপিঠ ছিল ডিসিপি উচ্ছ বিদ্যালয়। তখনকার সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন ইন্তাজ উদ্দিন। তিনি জানান, শামসুর রহমান স্যার চুনারুঘাটের সার্কেল অফিসার ছিলেন ।স্যার অত্যন্ত ভদ্র ও সাদা মনের মানুষ ছিলেন।স্যার আমাকে ৮ নং সাটিয়াজুড়ী ইউনিয়নের রিলিফ অফিসারের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। প্রায় সময় স্যার আমাকে কাছে ডাকতেন। বিভিন্ন দায়িত্ব দিতেন। স্যারকে খুবই মনে পড়ে। স্যারের জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন বেহেস্ত নসীব করেন। সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছি এটা জেনে যে স্যারের মেয়ে এখন আমাদের জেলার ডিসি।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বাবার স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমার পিতার খুবই আদরের সন্তান হিসেবে আমি তাঁর কর্মজীবনের অনেক কিছু দেখেছি। বাবা আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে সৎ জীবন যাপন করতে হয়।তিনি তাঁর সততা ও বিশ্বাসের ওপর থেকে আমাদের লালনপালন করতে চেষ্টা করেছেন। বাবার দেখানো পথে আমি আজ জেলা প্রশাসক। প্রায় সময় বাবাকে অনুভব করি। আমরা তো বাবার কন্যাসন্তান ছিলাম। বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে মনে হয়, বাবা এক বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়ে রেখেছিলেন আমাদের। বাবার দীর্ঘ কর্মজীবনে অনেক সুন্দর সুন্দর গল্প আছে। তাঁর কর্মজীবনের অনেক ঘটনা মনে রাখার মতো। এত কর্মপাগল, খ্যাতিমান আমার বাবাকে আর খুঁজে পাই না। আমি ও আমরা গর্ববোধ করি যখন বিভিন্ন মানুষ, তাঁর অনেক সহকর্মী ,তাঁর সততা এবং ভালো মানুষ হিসেবে আমার বাবার গল্প করেন। তখনই মনে হয় আমি এক ত্যাগী, সৎ ও একজন আদর্শবান বাবার সন্তান। সে আদর্শটুকু হাজার কোটি টাকার চেয়েও বড় সম্পদ ও সম্মানের।আমাদের নিজ জেলা যশোর ছাড়াও দেশের অনেক প্রান্তের মানুষ আমার বাবাকে চেনেন। আমরা বাবার আত্মার শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করি। আল্লাহ যেন তাঁকে বেহেশত নসিব করেন। বাবা আপনি চির অম্লান হয়ে বেঁচে থাকুন আমাদের হৃদয়ে।
Leave a Reply