নুর উদ্দিন সুমন ॥ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার চা-বাগান এলাকার লালচান্দে ধোপাছড়ার খাল থেকে গামছা দিয়ে হাত পা বাধা রক্তাক্ত অবস্থায় লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগে তুলে চুনারুঘাট থানায় তিন জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত সুহাগের মা। এ ঘটনায় পুলিশ রাজু নামের একজনকে আটক করেছে। রাজু ওই এলাকার রঙ্গু মিয়ার ছেলে । এ ঘটনায় আরো দুইজন পলাতক আছেন। তারা হলেন লালচাঁদ গ্রামের মো: নবীর হোসেন ও স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য আইয়ুব চানের পুত্র ফজলু মিয়া(২৫) ও মৃত ছমদ মিয়ার পুত্র ফজলু মিয়া (২৬) ।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, তার স্বামী হিরণ মিয়া দুই বছর পুর্বে মারা যান এর পর থেকে অসহ্য়া আছমা তার সন্তানদের নিয়ে পিত্রালয়ে থাকেন। ভাই আল আমিন ডুবাই প্রবাসী । তিনি একটানা দুইবছর ধরে প্রবাসে রয়েছেন। ভাই প্রবাসে থাকায় আছমা নিহত সুহাগসহ তিন সন্তান নিয়ে ভাইয়ের বানানো বাড়িতেই বসবাস করিয়া আসিতেছেন। ভাই প্রবাসে থাক্য়া ভাইয়ের স্ত্রীর দিকে কু-দৃষ্টি পড়ে পাশের বাড়ির ফজলু মিয়া (২৫) ও ফজলু মিয়া(২৮) ও রাজু মিয়ার । আসামীরা সু কৌশলে নিহত সুহাগকে ডেকে নিয়ে বলে তার মামীকে ফ্রেুটো জুসের সাথে ঘুমরে টেবলেট খাওয়াতে । সুহাগ তাদের কথায় রাজি হয়নি বরং সুহাগ তার মা ও তার মামীকে জানায়। বিষয়টি সুহাগের পরিবার এক নম্বর আসামীর মা আইয়ুব চানকে জানান। এর পর থেকে আসামীরা সুহাগের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বলে মামলায় অভিযোগ করেন। গত চার ডিসেম্বর রাত বারোটায় বিশেষ প্রয়োজনের কথা বলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যায় উল্লেখিতরা । পরদিন ৫ ডিসেম্বর সুহাগের নানার বাড়ির বসতঘরের পশ্চিম দিকে ধোপা ছড়া খালের পানিতে গামছা দিয়ে বাধা রক্তাত অবস্থায় ভাসমান লাশ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে চুনারুঘাট থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
এদিকে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা । মায়ের একমাত্র ছেলে সুহাগ (১৩ ) পিতা হিরণ মিয়া অসুস্থ হয়ে দুই বছর পুর্বে মারা যান। সুহাগের দুইবোন বড় বোন বিলকিস আক্তার পিতা থাকতেই বিয়ে হয়ে যায়। রয়েছে দুই বছরের ফাতেহা নামের ছোট একটি বোন। বোনটি মায়ের কাছে বসে বারবার ভাইকে খোঁজছে আর কাঁদছে। অসহায় মায়ের স্বপ্ন ছিল পরিবারের দেখাশোনার দায়িত্ব নিবে সুহাগ । একটি বাড়ি বানিয়ে -মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবে। আর সেই বাড়িতে সবার সঙ্গে বোনদের নিয়ে বসবাস করবে। কিন্তু দুবৃত্তরা সুহাগের এ স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি। সুহাগ এখন অন্য জগতের বাসিন্দা। তার এ মৃত্যু পুরো পরিবারকে তছনছ করে দিয়েছে। ছেলের শোকে পাগলপ্রায় হয়ে পড়েছেন মা। চার দিন ধরে নাওয়া-খাওয়া নেই, ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন তিনি। প্রায়ই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ছেন। জ্ঞান ফিরলেই কান্নায় ভারী হয় পুরো বাড়ি।
নিহত ছোটভাই সুহাগের খবর পেয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে ছুটে আসেন বিলকিস আক্তার: ভাইয়ের শোকে পাথর হয়ে গেছেন তিনি । কোনো কথাই যেন মুখে আসছে না। শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকেন। এ প্রতিবেদক কথা বলতে চাইলে, অনেকক্ষণ কিছু বলতে চেয়েও পারেননি। কিছুক্ষণ পর পরই ডুকরে কেঁদে উঠেন। কাঁদতে কাঁদতেই বলেন, কে আমার বাড়িতে যাবে? আমার পিতা নেই সে আমাদের দেখাশোনা করবে। কে আমার শশুর বাড়ি যাবে? তার জীবনটা শুরু হওয়ার আগেই খুনিরা কেড়ে নিল তার প্রাণ। আমাদের অনেক আশা অনেক স্বপ্ন ছিল । আমাদের পরিবারের একমাত্র প্রদীপ সুহাগকে যারা খুন করেছে তাদের বিচার চাই।
নিহতর নানা বলেন, আমার একমাত্র নাতী সুহাগ আসামীরা সবাই মিলে নাতিকে হত্যা করেছে । আমি এ হত্যার বিচার চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুনারুঘাট থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) চম্পক দাম বলেন, এ মামলায় একজন গ্রেফতার হয়েছে । দুইজন পলাতক । তাদেরকে গ্রেফতার করতে পুলিশের টিম কাজ করছে। মামলার তদন্তারী কর্মকর্তা এসআই আবু বককর জানান, মামলা দায়ের পর একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় রহস্য ঘেরা আরও কয়েকজন জড়িত আছে। আশা করছি হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করে তাদেরও গ্রেপ্তার করতে পারব। ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান তরফদার সবুজ বলেন, এ হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হউক। সে যেই হউক তার বিচার চাই। মামলায় অভিযুক্ত প্রধান আসামীর স্ত্রীও সুহাগ হত্যায় প্রকৃত জড়িতদের বিচার চান । তবে তার স্বামী ষড়যন্তের স্বীকার দাবী করেন ।
Leave a Reply