হবিগঞ্জ সংবাদদাতা ॥ পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নেই কোন সাপ্তাহিক বন্ধ। আবার দিন রাত সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয় সংবাদ সংগ্রহের পিছনে। এমনই একটি পেশা হলো সাংবাদিকতা। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজ জেলার বিখ্যাত স্থানগুলোতে ব্যাক্তিগতভাবে ঘোরাঘুরি করার সুযোগ আসলেও জেলার বাইরে বিখ্যাত কোন স্থানে যাওয়ার সময় খুব একটা হয়ে উঠে না। সেখানে পরিবার নিয়ে যাওয়ার চিন্তা করাটাও কঠিন। তবে এবার হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের পিকনিক সুযোগ এনে দিয়েছিল পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুন্দর একটি পিকনিক স্পট দেখার। মৌলভীবাজার জেলা শহরের বাইরে কুলাউড়া সড়কে অবস্থিত রাঙাউটি রিসোর্টে এটি শুধু পিকনিক ছিল না, এই সুযোগে প্রেসক্লাবের সদস্যদের পরিবারের সাথে মেলবন্দন ঘটে সবার। আর এবারের পিকনিকে রেকর্ড সংখ্যক উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। দেড়শতাধিক লোকজনের অংশগ্রহণে তিনটি বাস ছিল কানায় কানায় পূর্ণ।
বৃহস্পতিবার সকালে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে তিনটি বাস এসে অপেক্ষা করে। সেগুলোতে ব্যানার এবং মাইক লাগানোর কাজ শেষ হতে না হতেই ক্লাবের সদস্যরা সপরিবারে উপস্থিত হতে থাকেন ক্লাবে। পরে সকাল ৯টার পর তিনটি বাস একত্রে যাত্রা শুরু করে। এমনিতেই সকাল বেলা রওয়ানা হতে হবে বলে রাতের বেলা ঘুম হয়েছে কম। শীতের আমেঝে বাসের মাঝে সবাই যখন একটু ঝিমুনির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন হঠাৎ করে সব কয়টি বাস সরগরম করে ফেলেন ৭/৮ জন সদস্য। তারা রং বেরঙ্গের টিকেট নিয়ে সবার কাছে ছুটে যান ‘যদি লাইগা যায়’ শ্লোগান নিয়ে র্যাফেল ড্র-এর টিকেট বিক্রির জন্য। কে কত বেশি এবং কার কাছে বেশী বিক্রি করবেন এ নিয়ে রীতিমত প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়। এভাবেই টিকিট বিক্রির মধ্য দিয়ে বাসগুলো চলে যায় রাঙাউটি রিসোর্টের কাছে। কিন্তু সেখানে রাস্তার কাজ শুরু হওয়ায় বেশ কিছু জায়গা পায়ে হেটে যেতে হয়। হাতের কাছেই সাজানো গোছানো রিসোর্টের হাতছানি থাকায় কেউ সেটিকে আর পরিশ্রম মনে করেননি। অল্প সময়ের মাঝেই সবাই চলে যান রিসোর্টে।
রাঙাউটি রিসোর্টের ফুলেল চত্বর আর শিশুদের জন্য থাকা বিভিন্ন রাইডে দৌঁড়ে চলে যায় শিশুরা। ছন দিয়ে তৈরি রিজার্ভেশন করা কটেজে চলে যান মহিলারা। মনোরম লেকের পাড়ে থাকা চেয়ারে বসে পুরুষরা মেতে উঠেন আড্ডায়। তবে ছবি তেলা এবং সেলফিতে ব্যস্ত থাকেন সবাই। কেউ কেউ চলে যান সুইমিং পুলে। আবার ২ কিলোমিটর লম্বা লেকে স্পিডবোড নিয়ে বেড়িয়ে যান অনেকেই। এমনিভাবে দুপুর ঘনিয়ে আসলে বুফে সিস্টেমে খাবার গ্রহণ করেন সবাই। এর পর ক্লাব প্রেসিডেন্ট হারুনুর রশিদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হয় বাজেট অধিবেশন।
রাঙাউটি রিসোর্টের সবুজ চত্বরে সাজানো চেয়ারে এই অধিবেশনে শুরুতেই ২০১৯ সালের বাজেট উপস্থাপন করেন ক্লাব সেক্রেটারী সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন। বাজেটে তিনি বিভিন্ন উৎস থেকে ২৮ লাখ টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন। ব্যয় হবে ২৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা। ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৭৬৪টাকা থাকবে উদ্বৃত্ত। বাজেটের আকার হল ৩২ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৪ টাকা।
এবারের বাজেটে স্মরণিকা প্রকাশ, খেলাধুলার আয়োজন এবং মিলাদ মাহফিল কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি কল্যাণ তহবিল জোরদার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও ক্লাবের উন্নয়নে যারা অবদান রাখবেন তাদেরকে স্বীকৃতি দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সাংবাদিকতার পেশাগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক রিপোর্টিং এ পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত এই সভায়। দীর্ঘ আলোচনায় অংশ নেন এবং বিভিন্ন প্রস্তাব দেন অধিকাংশ কাব সদস্য।
সভা শেষে আয়োজন করা হয় খেলাধুলা। ৫টি ইভেন্টে ক্লাব সদস্য, তাদের স্ত্রী-সন্তান এবং আত্মীয়-স্বজন অংশ নেন। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল মহিলাদের মিউজিক্যাল পিলো। খেলা শেষেই শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ক্লাবের সদস্যদের স্ত্রী, সন্তান এবং অতিথি শিল্পীরা অংশ নেন এতে।
যাওয়ার সময় যাত্রাপথে যে টিকিট বিক্রি হয়েছিল তার সমাপ্তি পর্ব র্যাফেল ড্র দিয়েই শেষ হয় আনন্দঘন এই অনুষ্ঠানমালা। যদি লাইগা যায় শ্লোগানের স্বার্থকতা মেলে এইখানে। ৬০টির মত পুরস্কার থাকায় বিজয়ের আনন্দ পান সিংহভাগ টিকেট ক্রেতা। তবে কেউ পুরস্কার না পেলেও খালি হাতে ফিরেননি। ফিরতি পথে বাসে উঠার পরই ক্লাব সদস্যদের হাতে চলে যায় একটি করে উপহার। সন্ধ্যার পর বাস তিনটি যখন ছাড়ে তখন সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কমলা দেয়া হয় সবার হাতে। কমলালেবুর খোসা ছড়ানোর মাঝেই ঘুরতে থাকে গাড়ীর চাকা। আর এভাবেই শেষ হয় আনন্দঘন পিকনিকের।
বাজেট সভায় অংশগ্রহণ ও বক্তৃতা করেন মনসুর উদ্দিন ইকবাল, সফিকুর রহমান চৌধুরী, শামীম আহছান, এডভোকেট আব্দুল হাই, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা রফিক, ইসমাইল হোসেন, মোঃ ফজলুর রহমান, মোহাম্মদ নাহিজ, শোয়েব চৌধুরী, চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদ, টিপু চৌধুরী, এডভোকেট নির্মল ভট্টাচার্য্য রিংকু, এডভোকেট শাহ ফখরুজ্জামান, রাসেল চৌধুরী, শরীফ চৌধুরী, আব্দুল হালীম, নুরুজ্জামান ভূইয়া মামুন, আবু হাসিব খান চৌধুরী পাবেল, শাকীল চৌধুরী, এস এম সুরুজ আলী, মোহাম্মদ নূর উদ্দিন, এমদাদুর রহমান সোহেল, নূরুল হক কবির, আশরাফুল ইসলাম কোহিনুর, মুজিবুর রহমান, ফয়সল চৌধুরী, মোঃ ছানু মিয়া, আব্দুর রউফ সেলিম, বদরুল আলম, জাকারিয়া চৌধুরী প্রমুখ। এছাড়া ক্লাবের সহযোগী সদস্য হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এবং বাদল কুমার রায় সপরিবারে পিকনিকে অংশ নেন। শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন আব্দুর রউফ সেলিম।
Leave a Reply