নিজস্ব প্রতিবেদনঃ
বিগত ১২ সপ্তাহ যাবত মজুরিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকার প্রতিবাদে মৌলভীবাজারের কালিটি চা-বাগানের শ্রমিকরা “ভূখা লংমার্চ ” করেন।এতে সংহতি প্রকাশ করেন গাজীপুর ও রাঙ্গিছড়া চা বাগানের শ্রমিক ও নেতৃবৃন্দরা।
১৯ এপ্রিল রবিবার চা শ্রমিরা মুখে কাপড় বেঁধে (মাস্ক হিসেবে),হাতে প্ল্যাকার্ড ও খালি থালা-বাসন নিয়ে তিন ফুট “সামাজিক দূরত্ব” বজায় রেখে নিজ চা বাগান থেকে পায়ে হেঁটে কুলাউড়া পর্যন্ত প্রতিবাদি লংমার্চ সম্পন্ন করেন।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কালিটি বাগানটি ‘জোবেদা টি কোম্পানি লিমিটেডের’ নামে সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছে। বাগানে মোট ৫৩৭ জন শ্রমিক দৈনিক ১০২ টাকা হারে মজুরি পাওয়ার কথা। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার তা পরিশোধের কথা থাকলেও ১২ সপ্তাহ ধরে কোন ধরনের প্রদান করা হচ্ছে না।
বাগান শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক উত্তম কালোয়ার বলেন, ‘শ্রমিকেরা এমনিতেই সামান্য মজুরি পান। এরপর ১২ সপ্তাহ থেকে কেউ সেই মজুরি পাচ্ছেন না। কাজ করেও মজুরি মিলছে না। ঘরে চাল-ডাল নেই তাই শ্রমিকদের উপোসে দিন কাটাতে হচ্ছে। বাগান কর্তৃপক্ষ আজ দিচ্ছি, কাল দিচ্ছি বলে সময়ক্ষেপণ করছে।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য লছমি নারায়ণ অলমিক বলেন শ্রমিকদের আগের মজুরিরও বেশ কিছু টাকা বকেয়া পড়ে আছে। অনেক শ্রমিক জরাজীর্ণ কাঁচাঘরে বাস করছেন। এসব ঘর মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। অবসরে যাওয়া শ্রমিকেরা তহবিলের টাকা পাচ্ছেন না। অথচ প্রত্যেক শ্রমিকের মজুরি থেকে সাত শতাংশ করে ভবিষ্যৎ তহবিলের টাকা কেটে রাখা হয়। এর সঙ্গে মালিকপক্ষ আরও সাত শতাংশ যোগ করে মোট ১৫ শতাংশ টাকা শ্রম অধিদপ্তরে জমা দেওয়া কথা। বাগান কর্তৃপক্ষ তা-ও করছে না।
ছাত্র-যুবক নেতা দয়াল অলমিক বলেন, বাগানে চিকিৎসক নেই। শ্রমিকেরা বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করালে বাগান কর্তৃপক্ষ বিলের টাকা দেয় না। বাগানে বিরাজমান এসব সমস্যার কথা তুলে ধরে এর প্রতিকার চেয়ে ৫ জানুয়ারি তাঁরা শ্রীমঙ্গলে শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
চা শ্রমিক সন্তান মোহন রবিদাস বলেন,একদিকে ১২ সপ্তাহ ধরে মজুরি বঞ্চিত অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঝুঁকিতে আছেন এই বাগানের শ্রমিকগণ। অবিলম্বে এই বাগানের সংকট নিরসন করা না গেলে শত শত চা শ্রমিকের জীবন বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।
মজুরি বন্ধের বিষয়ে কালিটি বাগানের ব্যবস্থাপক প্রণব কান্তি দাশ বলেন, কোম্পানির কাছ থেকে যথাসময়ে টাকা না পাওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।তিনিসহ বাগানের বিভিন্ন পর্যায়ের ১৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ১১ মাসের বেতন বন্ধ আছে।
Leave a Reply