শেখ মোঃ হারুনুর রশিদ,চুনারুঘাট।। চুনারুঘাটের কৃতিসন্তান,সারা বাংলার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াকু সৈনিক,সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন
আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন এর এক প্রতিবেদন তুলে ধরে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন।
এ বিষয়ে রিট আবেদন করতে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চের অনুমতি নিয়েছেন।
আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড কাউন্সিলের সভাপতি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে।
আবেদনে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না, এ মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। রুলে বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় যেসব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে গর্ভবতী নারীদের অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশন বা সি সেকশন করে সেগুলো নিষিদ্ধে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
গত ২১ জুন বিবিসির প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন যুক্ত করে এই আবেদন করা হয়। বিবিসির সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ বলছে বাংলাদেশে গত দুই বছরে শিশু জন্মের ক্ষেত্রে সিজারিয়ানের হার বেড়েছে ৫১ শতাংশ।
বিষয়টিকে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার উল্লেখ করে সংস্থাটি বলছে, এতে বাবা-মায়েদের সন্তান জন্মদানে ব্যাপক পরিমাণে খরচের ভার বহন করতে হচ্ছে।
সিজারিয়ানে সন্তান জন্মদানে রয়েছে নানা রকম ঝুঁকি, বলছে সেভ দ্য চিলড্রেন। সংস্থাটি তার কয়েকটি দিক তুলে ধরেছে প্রতিবেদনে।
সংস্থাটি বলছে মা ও শিশু উভয়কেই এমন অস্ত্রোপচার ঝুঁকিতে ফেলে।
শিশু জন্মে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের ফলে প্বার্শ্বপতিক্রিয়া ও মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, অঙ্গহানি, জমাট রক্ত ইত্যাদির কারণে মায়েদের সুস্থতা ফিরে পেতে প্রাকৃতিক প্রসবের তুলনায় বেশী সময় লাগে।
এছাড়া সিজারিয়ানের কারণে প্রাকৃতিক জন্মের লাভজনক দিকগুলোও নষ্ট হতে পারে।
যেমন- শিশু মায়ের প্রসবের পথ দিয়ে যদি স্বাভাবিকভাবে বের হয় তাহলে তার শরীর কিছু ভালো ব্যাকটেরিয়া গ্রহণ করতে পারে। এসব ব্যাকটেরিয়া শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে।
অস্ত্রোপচারের ফলে এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সে যেতে পারে না। যার ফলে এই ভালো ব্যাকটেরিয়া সে পায় না।
এছাড়া মায়ের বুকের দুধ পান করার জন্য মায়ের সঙ্গে শিশুর যে শারীরিক নৈকট্যে আসা দরকার,সিজারিয়ান হলে সেটি প্রয়োজনের তুলনায় দেরিতে হয়। কারণ মায়ের সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য শিশুকে তখন কিছু সময় দুরে রাখা হয়।
একদম শুরুর দিকে মায়ের বুকের দুধের বাড়তি উপকারিতা রয়েছে। তা থেকে সে বঞ্চিত হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে
২০১৮ সালে বাংলাদেশি বাবা-মায়েরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানে খরচ করেছেন প্রায় চার কোটি টাকার বেশি। জনপ্রতি গড়ে তা ছিল ৫১ হাজার টাকার ও বেশি। সিজারিয়ানে সন্তান জন্মদানের হার বাংলাদেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মারাত্মক হারে বেশি।
বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে যত শিশু জন্ম নেয় তার ৮০ শতাংশই হয় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে।
সংস্থাটি আরও বলছে, ২০১৮ সালে যত সিজারিয়ান হয়েছে তার ৭৭ শতাংশই চিকিৎসাগতভাবে অপ্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু তারপরও এমন সিজারিয়ান হচ্ছে।
প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, ২০০৪ইং সাল থেকে ২০১৬ইং সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রসবকালীন অস্ত্রোপচার ৪ থেকে ৩১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
সেভ দ্য চিলড্রেন এমন অপ্রয়োজনীয় প্রসবকালীন অস্ত্রোপচার ঠেকাতে ডাক্তারদের উপর নজরদারির পরামর্শ দিচ্ছে।
এমন প্রবণতার জন্য সংস্থাটি আংশিকভাবে বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবাখাতের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছে।
সংস্থাটি বলছে,কিছু অসাধু চিকিৎসক এর জন্য দায়ী,যাদের কাছে সিজারিয়ান একটি লাভজনক ব্যবসা।
বাংলাদেশে সেভ দ্য চিলড্রেনের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং নবজাতক ও মাতৃ-স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. ইশতিয়াক মান্নান বলছেন, ‘চিকিৎসক এবং চিকিৎসা সুবিধা আসলে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে না গিয়ে অস্ত্রোপচার করতে অনুপ্রাণিত করে’।
ড. মান্নান আরও বলছেন, অস্ত্রোপচারের এই জনপ্রিয়তা এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে,দিনকে দিন মায়েরা আরও বেশি এই অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের দিকে ঝুঁকছেন এবং বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
Leave a Reply