আতাউর রহমান ইমরান :- বেদখল হয়ে গিয়েছে লাখাই উপজেলার বুল্লা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সরকারী অফিস ভবন। বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির কার্যক্রমের অভাবে সরকারী রাজস্ব আয়ের বৃহৎ উৎস বলে পরিচিত এ বাজারটিতে এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বুল্লা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সংলগ্ন এক কক্ষ বিশিষ্ট পাকা অফিস ভবনটিকে মুদি মাল রাখার গুদাম হিসাবে ভাড়া দেয়া হয়েছে। অফিস ভবনের বারান্দাটি ও মুদিমাল বিক্রেতাদের নিকট ভাড়া দেয়া হয়েছে। সেখানে প্রতিদিন দোকানদারি করেন মুদি মালের ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জুবায়ের নামের এক ব্যবসায়ী অফিস ভবনটি ভাড়া নিয়েছেন। তিনি আবার এটিকে লেবু মিয়া, ফয়সল মিয়া ও সপন নামের ৩ মুদিমাল ব্যবসায়ীর নিকট ভাড়া দিয়েছেন।
জুবায়েরের সাথে কথা বলে জানা যায় এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে বিধায় তিনি ইজারাদারকে ভাড়ায় এটি নিয়েছেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইজারাদারের বক্তব্য নেয়ার জন্য মোবাইলে একাধিক বার কল দেয়া হলেও তার ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সরকারি অফিস ভবনের এ করুন দশা বুল্লা বাজার ব্যবস্থাপনার সামগ্রিক চিত্রটি ফুটিয়ে তুলে।
কাগজে-কলমে বুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কে সভাপতি করে নামকাওয়াস্তে বুল্লা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি রয়েছে। এ কমিটির নেই কোন কার্যক্রম। আইনানুযায়ী সরকারি ইজারা ডাকের ১৫ শতাংশ টাকা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে হাটবাজারের রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে ড্রেনেজ , ছাউনী ( শেড ) , ল্যাট্রিন , টিউবওয়েল স্থাপন, হাটবাজারের অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ সহ বাজার পরিচালনার জন্য ব্যয় করার নির্দেশনা রয়েছে।
কিন্ত কমিটির কার্যক্রমের অভাবে প্রতিবছর ইজারা হতে প্রায় ত্রিশ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় হলেও বাজারের রাস্তা ঘাটের বেহাল দশা হয়েছে। বাজারের ময়লা ফেলা হয় যত্রতত্র। সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও পাহারাদার নিয়োগ করার কথা রয়েছে।
পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ না করায় বাজার নোংরা হচ্ছে দিনের পর দিন। সাধারণ ব্যবসায়ীদের চাঁদার টাকায় পাহারাদার নিয়োগ করা হলেও নিয়মিত বেতনের সুব্যবস্থা না থাকায় বাজারের ব্যবসায়ীদের মালামাল চুরির ঘটনা বেড়ে গিয়েছে।
সরকারি ম্যানুয়াল অনুযায়ী বাজারের দৃশ্যমান স্থানে টোল আদায়ের হার লেখা সাইনবোর্ড টানিয়ে রাখার নিয়ম থাকলেও এটি মানা হচ্ছে না। বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির তদারকির অভাবে অনুমোদিত হারের অতিরিক্ত টোল আদায় হচ্ছে। হয়রানি হচ্ছে ক্রেতারা।
এসব নিয়ে প্রায়ই বাজারে টোল আদায় কারীদের সাথে ক্রেতাদের কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এসব সমস্যা নিয়ে বাজারের ব্যবসায়ী ও মালিকপক্ষের বেশ কয়েকজন জানান, এভাবে চললে ঐতিহ্যবাহী এ বাজারটি ধ্বংসের মুখে পড়বে।
উল্লেখ্য, হাট বাজার ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট হাট – বাজারের স্থায়ী দোকান মালিকগণ কর্তৃক তাদের মধ্যে হতে নির্বাচিত ১ জন প্রতিনিধিকে সদস্য সচিব বা সেক্রেটারি করে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা অথবা উপ – সহকারী কর্মকর্তা, মহিলা দোকানদারদের মধ্যে থেকে মনোনিত একজন প্রতিনিধি, উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তরের কমিউনিটি অর্গানাইজার, অস্থায়ী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীগণ কর্তৃক তাদের মধ্য হতে মনোনিত ২ জন প্রতিনিধি, স্থানীয় ভ্যান ও রিক্সা চালকগণ কর্তৃক নির্বাচিত ১ জন প্রতিনিধি ও বাস ও ট্রাক মালিক সমিতি কর্তৃক একজন মনোনিত প্রতিনিধিকে সদস্য হিসেবে রেখে বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করার কথা রয়েছে।
এ ব্যাপারে বুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোকন চন্দ্র গোপ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অফিসটি ভাড়া দেয়া হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই তবে এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে বলে জানি। অচিরেই এই অফিসটিকে সচল করে বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির অফিস হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। বাজারে চুরি ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে বাজারটিকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাধীনে এনে এ অফিস থেকে পরিচালনা করা হবে।
এ বিষয়ে লাখাই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মোঃ শরিফ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বুল্লা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সরকারী অফিস ভবন বেদখল হয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি বিষয়টি এরকম হয় তাহলে আমি এটিকে উদ্ধার করবো। আগামী ২৬ মার্চের পর বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে দেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
Leave a Reply