ডেস্ক নিউজঃ প্রতিবছর যোগ্যতা প্রমাণ করে এমপিও নবায়নের শর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা হবে। আবেদনের তথ্য মিথ্যা প্রমাণ হলে এমপিও সুবিধা বাতিলের শর্ত রেখে প্রকাশ করা হবে গেজেট। এমন শর্তে এমপিওভুক্তির তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুশাসনের জন্য পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন দেশে ফেরার পর জারি হতে পারে গেজেট। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে নন-এমপিও সব প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে এমপিওভুক্তি এবং দ্রুত এমপিওভুক্তির গেজেট প্রকাশের দাবিতে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার আমাদের সময়কে জানান, এমপিওভুক্তির দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান শিক্ষকরা। তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচির পরিবর্তে দুই দিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে দাবি আদায় না হলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হবে। তিনি বলেন, আমরা (ফেডারেশন) শুরু থেকেই দাবি জানাচ্ছি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে এমপিওভুক্তির জন্য। যে পর্যন্ত আমাদের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্ত করা না হবে, সে পর্যন্ত অবস্থান করে যাব। গণঅবস্থান কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে শত শত শিক্ষক-কর্মচারী অংশ নেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একবার এমপিওভুক্তি হলে আজীবন এমপিও সুবিধা পেয়ে থাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু নানা সময়ে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্তি হলেও একাডেমিক মান বৃদ্ধি করেনি। লেখাপড়ার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। শিক্ষক-কর্মচারীরা মাসের পর মাস এমপিও সুবিধা নেন। এ কারণে সরকার নতুন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। ফের প্রতিবছর এমপিও সুবিধা পেতে হলেও শর্ত পূরণ করেই নবায়ন করতে হবে।
এতে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা শিক্ষার্থী ভর্তি, পাঠদানের মানোন্নয়নে প্রতি মনোযোগী হবেন বলে মনে করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এমপিওভুক্তি গেজেট প্রকাশে বিলম্ব হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানা গেছে, কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের স্বীকৃতির তথ্য জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে বলে প্রমাণ পায়। এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের কাগজপত্র ফের অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের কারণে এমপিওভুক্তির গেজেট প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে। চূড়ান্ত গেজেটে শর্ত থাকবে, ‘এমপিওভুক্তির আবেদনের সময় দাখিলকৃত কোনো কাগজপত্র তথ্য-উপাত্ত মিথ্যা প্রমাণিত হলে বাতিল করা হবে এমপিও সুবিধা’।
নতুন করে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ জানিয়ে নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন কর্মকর্তা আমাদের সময়কে জানান, এমপিওভুক্তির গেজেট প্রকাশ হলে যেন কোনো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে প্রশ্ন না ওঠে। প্রক্রিয়াগত কোনো কাজ প্রশ্নবিদ্ধ হোক, তা চায় না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গেজেট প্রকাশে যে কদিন বিলম্ব হচ্ছে, তাতে কোনো সমস্যা নেই। কারণ চলতি বছরের জুলাই থেকেই এমপিওর সুবিধা দেওয়া হবে। চূড়ান্ত তালিকা প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন। তারা ফিরলে গেজেট জারি করা হবে।
সূত্রমতে, অন্তত অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র যাচাইকালে তাদের স্বীকৃতির তথ্য জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এমপিওভুক্তির নীতিমালায় স্বীকৃতির ওপর ২৫ নম্বরের একটি সুবিধা রয়েছে। এর জন্য তথ্য জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে ৫৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের জন্য ব্যবহার করা হয় বিশেষ সফটওয়্যার। এমপিওভুক্তির নীতিমালা ২০১৮-এর ১৪ ধারা অনুযায়ী, যেসব প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণ করেছে তারা এমপিওভুক্তির যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে। তবে কিছু উপজেলায় একটিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।
এক্ষেত্রে নীতিমালার ২২ নম্বর ধারা প্রয়োগ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এ ধারা হচ্ছে শিক্ষায় অনগ্রসর, ভৌগোলিকভাবে অসুবিধাজনক, পাহাড়ি, হাওর-বাঁওড়, চরাঞ্চল, নারী শিক্ষা, সামাজিকভাবে অনগ্রসর গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় শর্ত শিথিল করা যেতে পারে।
নীতিমালার ১৪ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, এমপিওভুক্তি পেতে চার ধাপে স্কোরিং নম্বরের কথা উল্লেখ করা হয়। মোট থাকবে ১০০ নম্বর। এর বিভাজন হচ্ছে-প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি ২৫ নম্বর। প্রতি দুই বছরের জন্য ৫ নম্বর এবং ১০ বা এর চেয়ে বেশি বছর হলে পাবে ২৫ নম্বর। শিক্ষার্থী সংখ্যায় থাকবে ২৫ নম্বর। কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী থাকলে ওই প্রতিষ্ঠান পাবে ১৫ নম্বর এবং এর পরবর্তী ১০ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য পাবে ৫ নম্বর। পরীক্ষার্থীর সংখ্যায় ২৫ নম্বর। কাম্য সংখ্যার জন্য ১৫ নম্বর, কাম্য সংখ্যার পরবর্তী প্রতি ১০ জনের জন্য ৫ নম্বর। উত্তীর্ণের পরিসংখ্যানেও ২৫ নম্বর। কাম্য হার অর্জনের ক্ষেত্রে ১৫ নম্বর, পরবর্তী প্রতি ১০ শতাংশের জন্য ৫ নম্বর।
সুত্রঃ আমাদের সময়
Leave a Reply