চুনারুঘাটের পানছড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাহাড়ি টিলা কেটে অবাধে চলছে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। দিনের পর দিন অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে ওই এলাকার রাস্তাঘাট। শুধু তাই নয় টিলা কেটে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে আশ্রয়ন এলাকাসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ। পানছড়ি আশ্রয়ণ কেন্দ্রটি চুনারুঘাট উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের রঘুনন্দন পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত।
এদিকে, বিষয়টি জানার পর ১২অক্টোবর শুক্রবার রাতে তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) নুসরাত ফাতিমা ও ওসি শেখ নাজমুল হকসহ একদল পুলিশ মিলে পানছড়ি এলাকায় অভিযান চালান। অভিযানের সময় ৮টি ড্রেজার মেশিন ও বিপুল পরিমাণ পাইপ জব্দ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ সময় অভিযানের টের পেয়ে চিহ্নিত বালু খেকোরা পালিয়ে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আশ্রয়ণ এলাকার প্রতিটি টিলায় টিলায় ড্রেজার মেশিন স্থাপন করেছে বালুবজারা। এ মেশিনের পাইপ টিলার নিচে প্রবেশ করে রাখা হয়েছে। আর এর মাধ্যমে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। পরে একের পর এক ট্রাক্টর বোঝাই করে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বালুর স্তুপগুলো। আর এতে করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বালুখেকো ওই চক্রটি।
সূত্র জানায়, বালু উত্তোলনকারীরা খুবই ভয়ানক প্রভাবশালী। তাদের প্রভাবের কাছে এখানকার সবাই দুর্বল। পরিদর্শনকালে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে জানতে নাম প্রকাশে ইচ্ছুক কাউকে পাওয়া যায়নি। এর কারণ হচ্ছে, বালুর তথ্য প্রদানকারীর জীবনে নেমে আসতে পারে চরম বিপর্যয়। তাই ভয়ে কেউ নাম প্রকাশ করে কোনো তথ্য দিতে নারাজ। এখানের বাসিন্দারা রীতিমতো আতঙ্কিত।
নাম না প্রকাশের শর্তে কেউ কেউ বলেন, ২০০০ সালে প্রায় ৫০ একর জমিতে এ আশ্রয়ণ কেন্দ্রটি ৫০০ পরিবার নিয়ে যাত্রা করে। টিলায় টিলায় তাদের বসবাস। এরপর থেকে তারা জ্বালানি কাঠ (লাকড়ি), সবজি চাষ, গাড়ী চালকসহ বিভিন্ন পেশায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তারা ছাড়াও এ পাহাড়ে আরো বহু পরিবার বসবাস করছে বলেও জানান তারা।
তারা জানান, বালুখেকো চক্রের সদস্যরা এখানে পাহাড়ি এলাকায় প্রায় অর্ধশতাধিক ড্রেজার মেশিন স্থাপন করে রেখেছে। এগুলো দিয়ে প্রতিদিন টিলা ও টিলার আশপাশ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এভাবে বালু উত্তোলন করায় অনেক স্থানে টিলা এখন পুকুর হয়ে গেছে। আরো বহু টিলা রয়েছে হুমকীতে।
কাদামাখা রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘দরিদ্র পরিবারের সন্তান বলেই এখানে বসবাস করতে হচ্ছে। আর এ রাস্তা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে।’
এলাকাবাসী জানান, ফারুক নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি বালু ব্যবসায়ী চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তবে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার কিছু জমি রয়েছে। আর কিছু জানা নেই।
এ ব্যাপারে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ভারপ্রাপ্ত) নুসরাত ফাতিমা বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে তারা কঠোর এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছেন। পানছড়িতে ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
Leave a Reply