নুর উদ্দিন সুমন ॥ হবিগঞ্জর চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্ত এলাকা দুধপাতিল গ্রামের মুহুরী ছড়া শাল বাগান থেকে তামান্না আক্তার প্রিয়া (১৪) কিশোরীকে হত্যার ঘটনায় পুলিশ সুপারের তত্বাবধানে হত্যার ক্লু উদঘাটন করেছে পুলিশ। চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ নাজমুল হক এর নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই শেখ আলী আজহারসহ একদল পুলিশ পাশ্ববর্তী উপজেলা বাহুবলের মিরপুর ইনিয়নের চন্দ্রচড়ি তার শশুর বাড়ি অভিযান চালিয়ে দুই সন্তানের জনক নিহত তামান্নার প্রেমিক আপন চাচা মৃত আব্দুল হাসিমের ছেলে আলমগীর(২৫) কে গ্রেফতার করেন। পরে হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে হাজির করেলে ঘাতক ১৬৪ ধারায় এ হত্যা কান্ডের দায় স্বীকার করে। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে তার বরাত দিয়ে ১০ অক্টোবর রাত ৯টায় ওসি শেখ নাজমুল হক জানান, হত্যার খবর পেয়ে হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যার এর নির্দেশে আমরা প্রযুক্তির মাধ্যমে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ঘাতক প্রেমিক আলমগীরকে তার শশুর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। আলমগীর পেশায় একজন রাজ মেস্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে মানিকগঞ্জ জেলা থেকে রাজের কাজ করে মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসত, হঠাৎ একদিন তার মেজু চাচির নাম্বারে ফোন করে আলমগীর, তখন ফোন রিসিভ করে তামান্না এসময় তার সাথে বেশ কয়েক মিনিট কথা হয় এর পর থেকে মাঝে মধ্যে চাচীর নাম্বারে ফোন দিয়ে কথাবলতো দুজনে। গোপনে চলতে থাকে তাদের প্রেম এক অপরকে কাছে পেতে মরিয়া হয়ে উঠে । তামান্নার মাতা সেলিনা বেগম ৩/৪বছর ধরে গৃহকর্মীর কাজে সৌদি আরব থাকেন। ঘরে তামান্নার পিতা ও ছোট একটি ভাই ছাড়া কেহ নাই। পিতা বেশিরভাগ বাহিরে থাকেন আর ছোট ভাই লেখা পড়ায়। আলমগীর সুযোগ সন্ধানে তার স্ত্রী সন্তানদের কাছে নাগিয়ে মানিকগঞ্জ থেকে গ্রামের বাড়ি আসতো তামান্নার কাছে। চলতো দৈহিক সম্পর্ক এক পর্যায়ে তামান্না ৩ মাসের অন্তসত্বা হয়ে পড়ে। আলমগীর অন্তসত্বার কথা শুনে সমস্যায় পড়ে যায় একদিকে তার স্ত্রী সন্তান অন্যদিকে তার অন্তসত্বার খবর। তারপরও আলমগীর তামান্নাকে ধর্য্য ধরার কথা বলে এবং তার স্ত্রী সন্তানদের একটি আলাদা ঘর বানিয়ে তামান্নাকে মানিকগঞ্জ নিয়ে যাবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। বিষয়টি মানতে নারাজ তামান্না এনিয়ে তাদের মধ্যে চলে মনোমালিন্য। অবশেষে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় চাপে পড়ে সমাজে থেকে রেহাই পেতে গর্ভপাত করাতে চেয়েছিল আলমগীর । তামান্না প্রেমিক আলমগীরকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে । ঘাতক আলমগীর তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। কিন্তু ঘটনারদিন বিয়ের কথা বলে বাড়ির পাশ্ববর্তী শাল বাগানে নিয়ে একাধিকবার শারিরীক সম্পর্ক করে তার কথায় রাজি না হওয়ায় শ্বাসরোধে হত্যা করে। হত্যাকান্ড সে একাই করেছে বলে জানায়। তার মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে সকাল ৭টা পর্যন্ত লাশ পাহাড়া দেয় যাহাতে শেয়াল কুকুরে লাশ না খায়। এরপর সে তার শশুর বাড়ি মিরপুরে পালিয়ে যায় । এমনই হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দেয় ঘাতক আলমগির । তামান্না হত্যার মূলে ছিল অন্ত:সত্তা। কারণ নিকটবর্তী চাচাত ভাই বোন প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তামান্না অন্ত:সত্তা হয়ে পড়ে। সমাজে লোকজনের কাছ থেকে রেহাই পেতে গর্ভপাত করার পরিকল্পনা করে। কিন্তু গর্ভপাত ঘটানোর তামান্না তার কথামতে রাজি না হওয়ায় সিদ্ধান্ত নেয় হত্যার। উলেখ্য (৮অক্টোবর) মঙ্গলবার ১১টায় দুধপাতিল মহুরী ছড়ার পাশে বন্দের বাড়ি পশ্চিমে সাল বাগানে একটি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে চুনারুঘাট থানার এসআই মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে একদল পুলিশ স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় মৃত দেহটি উদ্ধার করেন।এঘটনায় তামান্নার পিতা বাদী হয়ে ঘাতক আলমগীরকে আসামী করে চুনারুঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে হত্যার ক্লু উদঘাটন এবং আসামী গ্রেফতার করায় চুনারুঘাট থার ওসি শেখ নাজমুল হকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান এলাকাবাসী।
Leave a Reply