শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৯ পূর্বাহ্ন

হবিগঞ্জে জ্যোতির্বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দীপেন ভট্টাচার্য্য বক্তৃতা শুনে॥ বিজ্ঞান চর্চায় আগ্রহ বেড়েছে হবিগঞ্জের শিক্ষার্থীদের

Reporter Name
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৯
  • ৩২৫ বার পঠিত

হবিগঞ্জ সংবাদদাতাঃ নাসার সাবেক জ্যোর্তি বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দীপেন ভট্টাচার্য্য বলেছেন, জ্যোতির্বিজ্ঞান বুঝতে হলে বায়ূমন্ডলের উপরে যেতে হবে। বিভিন্ন নক্ষত্রের পতন থেকে আমরা মূল্যবান খনিজ পদার্থ পেয়েছি। বিজ্ঞান কোন সময় থেমে থাকে না। প্লুটোকে আমরা এক সময় গ্রহ বলেছি। এখন আমরা তাকে গ্রহ বলিনা। আমার মনে হচ্ছে প্লুটোকে আবার আমরা গ্রহ বলতেও পারি। আমরা বিভিন্ন গ্রহে প্রাণের অনুসন্ধান করছি। এখনও পাওয়া যায়নি। তবে কোথাও থাকতে পারে। এক সময় হয়তা সেখানে মানব বসতিও গড়ে উঠতে পারে। পৃথিবিতে বর্তমানে মানুষ আছে ৮ বিলিয়ন। এটি বেড়ে হতে পারে ১২/১৩ বিলিয়ন। তবে এক সময় ঠিকই কমে তা ৫ বিলিয়নের আশে পাশে থাকবে। বর্তমানে এশিয়া ও আফ্রিকাতে মানুষ বেশী বাড়ছে। বাংলাদেশেও ২০৫০ সালের পর মানুষ কমতে থাকবে।
শনিবার দুপুরে হবিগঞ্জ টাউন হলে ‘আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের টুকিটাকি’ বিষয়ক একক বক্তৃতা এবং বিজ্ঞান বিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠানে তিনি একথাগুলো বলেন। তিনি বলেন, দেশে যারা শিক্ষা নিয়ে গবেষনা এবং কাজ করছেন তাদের অনেক স্বক্ষমতা আছে। তাদেরকে কাজে লাগাতে হবে। কেন আমাদের লোকেরা পদ্মা সেতু আর যমুনা সেতু করতে পারছে না তা আমার বোধগম্য নয়। ড. দীপেন ভট্টাচার্য্য প্রায় ৩ ঘন্টা একক বক্তৃতা এবং বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এটি সকলের অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত হয়ে উঠে।
মহাকাশ গবেষনা মানব জীবনের মান উন্নয়নে কোন ভূমিকা রাখতে পারে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, জ্ঞান সব সময় মানুষের কল্যাণে আসে। তা যেভাবেই আহরণ করা হউক না কেন। কোন কিছু জানাটাই মানব কল্যাণ। দৃশ্যমান আলোয় বাংলাদেশ থেকে গবেষনা করা কঠিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে শীতে আকাশে কোয়াশা আর গরমে বৃষ্টি থাকে। ফলে মহাকাশ গবেষনা করা এখানে কঠিন। তবে বর্তমানে অনেক ডাটা উন্মুক্ত হওয়ায় যে কোন স্থান থেকে এ নিয়ে গবেষনা করা সহজ ও সাশ্রয়ী হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯শ শতকের প্রথম দিকে আমরা জানতাম না ছায়াপথ ছাড়াও আরো গ্যালাক্সি আছে। ১৯২৪ সালে আমরা সেটি জানতে পারি। তবে এর সবকিছু আইনস্টাইন থেকে এসেছে তা সঠিক নয়। তিনি ব্ল্যাকহোল বিশ্বাস করতে না। যদিও তার থিওরি থেকেই ব্ল্যাকহোল আবিস্কার হয়েছে।
এ সময় ড. দীপেন এর উদ্দেশ্যে হবিগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আগত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা প্রশ্ন করলে তিনি তার উত্তর দেন। এই সাড়া দেখে তিনি অবিভুত হয়ে যান এবং সবার উত্তর দেন। এই অনুষ্ঠানে এসে অনেকের মাঝেই জৌতির্বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান চর্চার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে বলে হাত তোলে তাদের অনুভুতি ব্যক্ত করেন। এ সময় তিনি বলেন, গ্র্যাজুয়েট এর নিচে বিদেশে লেখাপড়ার জন্য না যাওয়াটাই ভাল। এর ছেয়ে দেশে পদার্থ বিজ্ঞান অথবা ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার পর এ বিষয়ে এমফিল করে এবং ছোট ছোট প্রজেক্ট এর কাজ করে বিদেশে গিয়ে লেখাপড়া করলে সফল হওয়া সহজ।
অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ, খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার ও তারুণ্য সোসাইটি। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলুল হক, বাপার সভাপতি অধ্যাপক ইকরামুল ওয়াদুদ, সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল, সহ-সভাপতি তাহমিনা বেগম গিনি, এডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, তানসেন আমীন, শেখ আলফাজ উদ্দিন,রোকেয়া আক্তার, সুধাংশু কর্মকার, রুমা মোদক, বাদল রায়, নুরউদ্দিন জাহাঙ্গীর, ডা: এস এম আল-আমিন সুমন, সিদ্দিকী হারুন, ডা: আলী আহসান চৌধুরী পিন্টু, আমিনুর ইসলাম চৌধুরী তুহিন, আবিদুর রহমান রাকিব প্রমুখ।
পরে প্রধান অতিথি ড. দীপেন ভট্টাচার্য্যরে হাতে শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেয়া হয়। শুরুতে ড. দীপেন ভট্টাচার্যের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করেন হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র তাহসিন বিলওয়াল আরিয়ান। প্রসঙ্গত, অধ্যাপক ড. দীপেন ভট্টাচার্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট ইনস্টিটিউটের গবেষক ছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার রিভারসাইড ক্যাম্পাসে (ইউসিআর) গামা রশ্মি জ্যোতির্বিদ হিসেবে ২০ বছর কাজ করেছেন। বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ার মরেনো ভ্যালি কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক। তিনি বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। বাংলা ভাষায় তাঁর বেশ কয়েকটি কল্প উপন্যাস ও গল্প প্রকাশিত হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2019 Prothomsheba
Theme Developed BY ThemesBazar.Com