মোস্তাক আহাম্মদ মাসুম ॥ হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে ঈদের আগে কামার পাড়ায় কামার ও ঈদ উদ্যাপনকারীদের ব্যস্ততা বেড়েছে। শান দেওয়া নতুন দা, বটি, ছুটি ও চাকু সাজিয়ে রাখা হয়েছে দোকানের সামনে। ভেতরে চলছে কাজ। কেউ বারী হাতুরি দিয়ে পেটাচ্ছেন দগদগে লাল লোহার খন্ড, কেউ দিচ্ছেন শান, কেউ কেউ কয়লার আগুনে বাতাশ দিয়ে আগুন জ্বালাচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি চলছে এই ব্যস্ততা। চুনারুঘাটের বাল্ল সড়কের পাশের কামার পাড়ায় এ রকম চিত্রই দেখা যায়। কুরবানির সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে কামারদের ব্যস্ততা। শুক্রবার সরেজমিনে কামার পাড়ায় দেখা যায়, এই অসয্য গরমের মধ্যেও আগুনের কাছে বসে চলছে কাজ। দোকানগুলোতে বছরের অন্য সময় এত মানুষ না থাকলেও ঈদ সামনে রেখে দা-ছুরি, চাপাতিসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে লোকজন ভিড় করছেন। কেউ কেউ পুরনো সরঞ্জাম মেরামত অথবা শান দিয়ে নিচ্ছেন। বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দা আকৃতি ও লোহাভেদে ১শ থেকে ৫’শ টাকা, ছুরি ৫০ থেকে ৩শ টাকা, চাকু প্রতিটি সর্বোচ্চ ৫০ টাকা, গরুর হার কুপানোর চাপাতি প্রতিটি ২’শ থেকে ৪’শ টাকা এবং পুরনো যন্ত্রপাতি শান দিতে ৫০ থেকে ১’শ টাকা নেওয়া হচ্ছে। কামার পাড়ার হরেন্দ্র দেব বলেন, প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে হারিয়ে যেতে বসছে ঐতিয্যবাহী এই শিল্প। পাশাপাশি কয়লা আর কাচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের পরিমাণ কম হচ্ছে বলেও জানান তিনি। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রাংশের অভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চলছে। তিনি বলেন, বছরের অন্য সময়ে কাজ কম থাকে। কুরবানির ঈদ এলে কাজের চাপ বেড়ে যায়। দিন রাত কাজ করেও রেহাই পাওয়া যায়না। সুমন নামে এক ক্রেতা বলেন, কুরবানির সময়ই মূলত দা-ছুরিগুলো কাজে লাগে। বছরের অন্যান্য সময় এই দা-ছুরিগুলো বাড়িতে ফেলে রাখা হয়। এতে লোহার তৈরি এসব জিনিসে মরিচা পড়ে যায়। চুনারুঘাট সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিদ্যুৎ রঞ্জন পাল বলেন, আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে কামাররা মিশে আছে। আধুনিকতার সঙ্গে যেন এই কামাররা হারিয়ে না যায়, সেজন্য কয়লা ও কাচামালের দাম সহনীয় রেখে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারকে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে।
Leave a Reply