বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন

কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী কিংবদন্তি কালপুরুষ

Reporter Name
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৯
  • ৪১৬ বার পঠিত

আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীঃ-ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী আমার জন্মদাতা, আমার ধমনিতে প্রবাহমান রক্তদ্বারায় যার ঐতিহ্য। জন্মসূত্রে অর্জিত এই ঐতিহ্য গৌরবের ও রক্তের বিশুদ্ধতার। গৌরব হয় যখন বলি, পিতা আমার এক ‘বিজয়ী বীর’। বায়ান্নের ভাষাআন্দোলনে হবিগঞ্জে গ্রেফতাকৃত ভাষা সৈনিক বৃন্দাবন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রনেতা। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে সবকিছুকে পিছনে রেখে মায়ার বন্ধন ছিড়ে, দৃঢ় প্রত্যয়, একটি স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য জীবনকে বাজি রেখে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। যে যুদ্ধ সাম্যের, স্বাধীনতা, একটি ভূখন্ডের স্বীকৃতি অর্জনের লক্ষে, তাই জাতীয় পতাকা’র লাল বৃত্তটি দেখলে মনে যে শক্তি অনুভব করি, তা ভালবাসা’য়রূপান্তরিত হয় দেশপ্রেমে। তাতে যেন খোঁজে পাই, বাবার বলিষ্ঠ কন্ঠে উচ্চারিত ‘জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু’ মূখরিত শ্লোগান। ‘জয় বাংলা’কে শুধু একটি শ্লোগান হিসাবেই আব্বা ধারণ করেননি। বিশ্বাস করেছেন, দায়িত্ব আর কর্তব্যে। বাংলাকে শ্রেষ্ঠতর করবার প্রত্যয়ে স্বাধীন বাংলাকে শ্রেষ্ঠত্ব দিতে বঙ্গবন্ধুই একমাত্র নেতা, যিনি তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে মুক্তিকামী মানুষের স্বপ্নের বাস্তবিক রূপ দিতে যোগ্যতম একমাত্র নেতা।আর এই বিশ্বাস থেকেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস এতো যতœ করে তিনি তার সন্তানদের’কে জানাবার তাগিত অনুভূব করেছেন। শহীদ তাজ উদ্দীন আহমেদসহ জাতীয় চার নেতাা সাথে মানিক চৌধুরী’র রাজনীতিক মেলামেশা ছিল অত্যন্ত আন্তরিক ও সহমর্মিতার। দেশ স্বাধীন হবার পর, বঙ্গবন্ধুযুদ্ধবিধস্ত বাংলার মাটিতে, ‘সোনার বাংলার’ গড়বার মহাকর্মযজ্ঞ পরিচালনা করেছিলেন। সোনার বাংলা’য় ক্ষুদামুক্ত বাংলাদেশ গড়বার প্রথম প্রদক্ষেপ সবুজ বিপ্লব প্রকল্পের দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন, মানিক চৌধুরীর প্রথম নিবার্চিত এলাকা মাধাবপুরের মাটিতে। মানিক চৌধুরী’র সফলতায়, বঙ্গবঙ্গু মানিক চৌধুরীকে সম্মানিত করেছিলেন ‘বঙ্গবন্ধু কৃষিপদক’ (১৯৭৪) প্রদান করে। তখন মানুষের ক্ষদা নিবারণ করাই ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রথম সংগ্রাম। যুদ্ধ বিধস্ত বাংলাদেশে অন্ন্যহীন মানুষের মুখে মোটা চালের ভাত নিশ্চিত করার সংগ্রামই ছিল স্বদ্য স্বাধীন বাংলার মুকুট বিহীন নেতা শেখ মুজিুবুর রহমানের। সেই সংগ্রামের একজন সহযোদ্ধা ছিলেন মানিক চৌধুরী। মনের শক্তি, অন্তরের গহীনে সুভাষিত বিশ্বাস সততার শুদ্ধতায় পিতার সন্তান হিসাবে গৌরবের সবচাইতে বড় স্থান, নিখাত দেশপ্রেম। আমার দেশ, মা-মাটি, মাতৃভাষা অলঙ্কৃত এক অমূল্য মনিহার। নীতিবান চরিত্রে নির্লোভ এক ব্যক্তিত্ব, যার সবগুলো গুণ প্রকৃতগতভাবেই কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরীর মধ্যে ছিল প্রবলভাবে। গভীর থেকে গভীরতম স্বত্তায়। বাবা বিশ্বাস করতেন, রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা হবে ‘ভালর চেয়ে আরো ভালর সাথে’। গোটা জীবন দিয়ে মানবকল্যাণে স্বাক্ষর রেখেছেন। রাজনীতি বলতে মানিক চৌধুরী মানবসেবাকে’ই মনে করতেন। গ্রামের মানুষের জীবনমানউন্নয়ন, তাদের মানবিক উৎকর্ষ ক্ষেত্রটিকে তার রাজনীতি’তে বেশি দৃর্শ্যমান হয়েছে।

দলীয় পদ বা রাষ্ট্রীয় পদের ক্ষমতার পোষাককে কখনওই আলিঙ্গন করেননি, মানিক চৌধুরী। বরং হৃদয়ঙ্গন করেছেন মানুষের বিশ্বাস, আস্তা আর ভালবাসা’কে। মানিক চৌধুরীর জীবনে প্রাপ্তির খাতায় মানুষের অফুরন্ত ভালবাসায় ভরপুরইতিহাস। যা হবিগঞ্জ জেলার সজ্জন মানুষের মুখে এখনও আলেচিত হয়।আব্বা না ফেরার দেশে শান্তির আচ্ছাদনে, গত ২৭টি বছর ধরে ঘুমিয়ে আছেন। কিন্তু তার রেখে যাওয়া ভালবাসার ক্ষেত্রগুলো আমাকে বিষণভাবে আলোতিক করে। আব্বা বই পড়তে খুব ভালবাসতেন। জেলখানায় বন্ধি অবস্থায় ছোট ছোট নোট বুকে লিখেছেন, তার স্মৃতি কথা। সেখান থেকেই জানা, পচাত্তরের ১৫ই আগস্ট ছিল চরম অন্যায়ের একটি অধ্যায়। যখন বঙ্গবন্ধু ও তার গোটা পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার নিমর্ম ইতিহাস লিখা হয়েছিলো। এ ছিলো বাঙ্গালী জাতির কালো অধ্যায়। এই ঘটনা যে গোটা জাতিকে কলঙ্কিত করবে তা সেইদিনই বুঝতে পেরেছিলেন, কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী। তাইতো তৎকালীন সময়ের একজন সংসদ সদস্য হিসাবে খন্দকার-মোস্তাকের মন্ত্রী সভার সদস্য হওয়ার প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে মানিক চৌধুরী নেমে পড়েছিলেন রাজপথের প্রতিবাদের মিছিলে। প্রতিবাদী হয়েছিলেন, সেই কঠিনতম সময়ে যার জন্য বিনাবিচারে তাকে চার (০৪) বছর কারাবরণ করতে হয়। বঙ্গবন্ধুকে আব্বা খুব ভালবাসতেন। বঙ্গবন্ধু আব্বাকে ‘কালো মানিক’ বলে ডাকতেন। গায়ের রং-এ কালো হলেও মানিক চৌধুরী’র অন্তর ছিলো সাহস, উদারতা আর প্রাণশক্তিতে ভরপুর। আব্বা ভাল গাইতেও পারতেন। ভূপেন হাজারিকা’র কন্ঠে ‘মানুষ মানুষের জন্য’এই গানটি ছিল তার প্রিয় গান। আত্মমানবতার জয়ধ্বনী তিনি ভিতর থেকে অনুভব করেছেন। নিপীড়িত মানুষের খুব কাছের বন্ধু ছিলেন মানিক চৌধুরী। সু-লেখকও ছিলেন তিনি। মানুষকে এবং তার আশপাশের সমাজটি নিবিড়ভাবে দেখতে ভালবাসতেন। তার লেখা বই,‘গ্রাম-বাংলার রাজনীতি’‘বিশ্ব সৃষ্টির দিকে’ বইগুলো সেই সময়ে পাঠকবৃন্দ’কে মূগ্ধ করেছে। মানিক চৌধুরী শুধু নামেই নয়, ব্যক্তিত্বে এক অন্যন্য কিংবদন্তি কালপুরুষ। একজন আদর্শবান, সাহসী মানুষ। ভাষা সৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী পৃথিবীতে এসেছিলেন শুধুই দেবার জন্য, নেবার জন্য নয়। এমনই এক পিতার ঔরসে আমার জন্ম, যার গোটা জীবন প্রাণপ্রাচুর্য্য,ে ত্যাগ, সাহস আর বিশ্বাসতায় ভরপুর ছিলো। তাই নিজেকে যেমন সুভাগ্যবান মনে করি। তেমনি বিশ্বাস করি, তার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজগুলো এগিয়ে নিতে হবে চরম প্রতিকূলতায় অনেক ধৈর্য্য ও নিরবতায়। সকলের কাছে আমার প্রয়াত পিতা-মরহুম কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী’র জন্য দোয়া কামনা করছি। এবং ২৮মত মৃত্যুবার্ষিকীতে আব্বার রেখে যাওয়া স্মৃতির প্রতি জানাই, আমাদের বিনম্নশ্রদ্ধা আর ভালবাসা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2019 Prothomsheba
Theme Developed BY ThemesBazar.Com