সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
জিজ্ঞাসাবাদের পর কারাগারে ব্যারিস্টার সুমন কারাগারে চুনারুঘাটে নিহত রাজু মিয়ার বাড়ি পরিদর্শন করলেন পুলিশ সুপার চুনারুঘাট থানায় ব্যারিস্টার সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদ ॥ নিরাপত্তা জোরদার চুনারুঘাট ও মাধবপুরে ৩ মাদক ব্যবসায়ী আটক মাধবপুরে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে নারীসহ আটক ৫ নবীগঞ্জে শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল চুনারুঘাটে সাবেক এমপির গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী আহত ॥ অতঃপর ফাঁকাগুলি মাধবপুরে ভারতীয় শাড়িসহ ৩ কোটি টাকার চোরাই পন্য জব্দ লাখাইয়ে বিনামূল্যে বিতরণকৃত ধান-বীজ দোকানে রাখার দায়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা চুনারুঘাটে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় সামাদ গ্রেপ্তার

লাখাইয়ের কলেজ ছাত্র হত্যার দায় স্বীকার প্রেমিকার”সারারাত শারীরিক সম্পর্ক করে দুর্বল উজ্জলকে ভোরে হত্যা

Reporter Name
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৯
  • ৪৬০ বার পঠিত

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ লাখাইয়ে প্রেমিকার হাতে প্রেমিক খুন হওয়ার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত কলেজ ছাত্রী ফারজানা ও তার বাবাকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী শেষে কারাগারে প্রেরন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজেস্ট্রিট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে দীর্ঘ ৬ ঘন্টা স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী শেষে পিতা ও কন্যাকে কারাগারে প্রেরন করা হয়। এর আগে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা দিয়ে ঘাতক প্রেমিকা কলেজ ছাত্রী ফারজানা আক্তার ও তার পিতা মঞ্জু মিয়াকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় তাদেরকে একনজর দেখার জন্য আদালত পাড়ায় উৎসুখ জনতার ভীড় জমায়। এ দিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফারজানার মা লাখাই থানায় আটক রয়েছে। অন্যদিকে নিহত উজ্জলের পিতা শাহ আলম বাদী হয়ে উল্লেখিতসহ আরো ৪-৫ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আমিনুল ইসলাম জানান, ঘাতকরা বিজ্ঞ আদালতে ঘটনার কথা স্বীকার করে লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে। তিনি আরো জানান, একাধিক মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক রাখায় ফারজানা আক্তার উজ্জল মিয়া (২২) কে ওই খুন করে তার ঘরের খাটের নিচে মাটি খুড়ে পুতে রাখে। এর পরদিন ফারজানা ঢাকায় তার পিতা মাতার কাছে চলে যায়। সেখানে গিয়ে এ হত্যার ঘটনা জানায়। ১০-১২ দিন পর তার পিতা-মাতা বাড়িতে এসে অন্যান্য আসামীদেরকে নিয়ে লাশ তুলে বস্তার ভিতরে ভরে বাড়ি থেকে ১ কিলোমিটার দুরে মেদি বিলে কচুরীফানার নিচে রেখে আসে। নিহত উজ্জল মাধবপুর উপজেলার সৈয়দ সঈদ উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ডিগ্রি ৩য় বর্ষের ছাত্র। অন্যদিকে ফারজানা আক্তার হবিগঞ্জ সরকারী বৃন্দাবন কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের ছাত্রী। এক বছর ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। ফারাজানা হাওরের মধ্যেখানে তার বাড়িতে একা বসবাস করত। পিতা-মাতা ও তার ছোট দুই বোন ঢাকাতে থাকতো। এই সুবাদে উজ্জল প্রায়ই ফারজানার বাড়িতে এসে তার সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। কোন-কোন দিন উজ্জল রাতে আসতো আর সকালে বাড়ী ফিরত। ২০ ফেব্র“য়ারী যখন তারা আমোদ ফুর্তিতে লিপ্ত ছিল। টিক সেই সময়ে উজ্জলের মোবাইলে অন্য নারীর একটি ফোন আসে। কথা বলার সময় ফারজানা বুঝতে পারে উজ্জলের আরো একাদিক মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাক-বিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে হাতা-হাতির ঘটনাও ঘটে। কিছুক্ষণ পর ফারজানা উজ্জলকে বিয়ের কথা বললে, তখন সে হেসে কৌতুক করে বলে ‘আমি যদিও তোমাকে বিয়ে না করি, তখন আমার বাবা তোমাকে বিয়ে করবে’। এতে ফারজানা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে, নিজেকে শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তার মন ঘুরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় ভন্ড প্রেমিককে হত্যা করবে।
পরিকল্পনা মোতাবেক প্রথমে শারিরিক সম্পর্ক করে উজ্জলকে দূর্বল করে ওই দিন গভীর রাতে শীল পাঠার পোতাইল দিয়ে নিমজ্জিত উজ্জলের মাথায় ও লজ্জাস্থানে আঘাত করে। এতে তার মৃত্যু নিশ্চিত না হলে দা-বঠি দিয়ে হাত পায়ের রগ কর্তন করে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে এবং তার এক চাচাকে নিয়ে লাশ ঘরের মাঠি খুড়ে লুকিয়ে রাখে। পর দিন সে তার পিতা মাতার কাছে চলে যায়।
ফারজানার পিতা মঞ্জু মিয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে জানায়, ‘আমি হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলাম না। আমার মেয়েকে বাচাঁতে হত্যাকান্ডের প্রমান লুকাতে আমিসহ অন্যান্যরা মৃত দেহ বস্তাবন্দি করে কাদে করে মেদি বিলে কচুরী ফানার নিচে রেখে আসি।
উল্লেখ্য, গত ২০ ফেব্র“য়ারি লাখাই উপজেলার মুড়াকড়ি গ্রামের শাহ আলমের পুত্র সৈয়দ সঈদ উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ৩য় বর্ষের ছাত্র উজ্জল মিয়া নিখোঁজ হয়। ২৬ ফেব্র“য়ারি লাখাই থানায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি জিডি করা হয়। এর পরি প্রেক্ষিতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করে এবং নিখোঁজ উজ্জলের মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে তারা নিশ্চিত হয় মোড়াকড়ি ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের মঞ্জু মিয়ার মেয়ে কলেজছাত্রী ফারজানা আক্তারের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যাহর নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম ও ওসি এমরান হোসেন এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আমিনুল ইসলামসহ একদল পুলিশ রবিবার সকালে ধর্মপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ফারজানা ও তার পিতাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করার পর গতকাল সোমবার সকালে ফারাজানা ঘটনার কথা স্বীকার করে। সোমবার দুপুরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ধর্মপুর গ্রাম থেকে ১ কিলোমিটার দূরে মেদি বিলের কচুরি ফানার নিচ থেকে উজ্জলের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এ সময় লাশের দুর্গন্ধে এলাকার মানুষ নাক টিপে ধরে। উৎসুক জনতাকে সামাল দিতে হিমশিম খায় পুলিশ। আটককৃত ফারজানার বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা সোমবার বিকেলে লাখাই থানায় প্রেসব্রিফিং করে জানান, উজ্জল ও ফারজানার মাঝে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। চাকুরির কারণে ফারজানার মা-বাবা ঢাকায় থাকেন। ফারজানা বাড়িতে একা থাকে। এ সুযোগে প্রায়ই তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক চলে আসছিল। আটক ফারজানা ধর্মপুর গ্রামের মঞ্জু মিয়ার কন্যা ও নিহত উজ্জল মোড়াকড়ি গ্রামের শাহ আলমের পুত্র।
লাখাই থানার ওসি এমরান হোসেন জানান, বাকী আসামীদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। এবং ফারজানার মা’ কে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2019 Prothomsheba
Theme Developed BY ThemesBazar.Com