ডেস্ক নিউজঃ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক উম্মে সুলতানা পপিকে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিকালে ফেনীর সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নুসরাতের সহপাঠী পপি জানায়, নুসরাতকে পরীক্ষার হল থেকে তাঁর বান্ধবী নিশাতকে কেউ মারছে বলে মাদরাসা ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর অন্য সহযোগীরা মিলে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পপি নুসরাত হত্যাকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ থাকার কথা আদালতকে জানায়।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডে আটক উম্মে সুলতানা পপি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন পিবিআই’র চট্টগ্রাম বিভাগের স্পেশাল পুলিশ সুপার মো. ইকবাল।
তিনি বলেন, শুক্রবার দুপুর ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আদালতে জিজ্ঞাসাবাদে এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে পপি চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য দিয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তা উল্লেখ করা যাচ্ছে না।
তিনি জানান, অপর আসামি মো. জাবেদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।
এ হত্যাকাণ্ডে এজাহারনামীয় আসামি নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে জানায়, অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার ভাগ্নি উম্মে সুলতানা পপি ও মো. জাবেদ সরাসরি কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করে। আরেক আসামি জাবেদ নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় আর পপি হাত-পা চেপে ধরে ওড়না দিয়ে বেঁধে ফেলে। এসময় তাদের সঙ্গে আরো তিনজন ছিলো। নুসরাতকে হত্যাকাণ্ডের সময় পপিকে পরিচয় গোপন করে শম্পা নামে ডেকেছিল হত্যাকারীরা। নুসরাত মৃত্যু শয্যায় জবানবন্দিতে এ শম্পার নাম উল্লেখ করেছিল। এর আগে উম্মে সুলতানা পপিকে ১০ এপ্রিল সোনাগাজী থেকে আটক করা হয়।
এরপর ১১ এপ্রিল সুলতানা পপিকে ৫ দিনের রিমান্ড দেয়া আদালত। রিমান্ড শেষে সে আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হয়।
প্রসঙ্গত; গত ৬ এপ্রিল শনিবার সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় গেলে নুসরাত জাহান রাফিকে তার সহপাঠী উম্মে সুলতানা পপি মাদরাসার ঘুর্ণিঝড় শেল্টার ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে মুখোশপরা ৪/৫জন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। নুসরাত অস্বীকৃতি জানালে তারা গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামালা দায়ের করেন নিহত নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। মামলা দায়েরের পর থেকে এজাহারভুক্ত সব আসামি গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ পর্যন্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ৫ জন। এছাড়া ১৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড দেয়া হয়। সর্বশেষ এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়েছে সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি রুহুল আমিন।
এর আগে ২৭ এপ্রিল ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে যৌন নীপিড়নের অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করেছে পুলিশ। সে ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
সুত্রঃ ভোরের কাগজ
Leave a Reply