সৈয়দা নাজনীন আহমেদ সিলভী ঃ– হবিগঞ্জের চুনারুঘাট বঙ্গবন্ধুর জন্ম বার্ষিকীতে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৯৯তম জন্ম বার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস পালন করেছে উপজেলা প্রশাসন । এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রোববার সকাল ১০টার দিকে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন উপজেলা প্রশাসন, পরে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাহী কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন ইকবাল এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুনারুঘাটের কৃতি সন্তান সাংস্কৃতিক মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব মস্তোফা মোর্শেদ, চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ কেএম অাজমিরুজ্জামান, উপজেলা মমাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সামছুল হক, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাসুদ রানা, সমাজ সেবা অফিসার বারেন্দ্র রায়, উপজেলা ইন্জিনার মিশুক কুমার দত্তসহ সর্বস্তরের মানুষ। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত এই নেতা ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান ও শেখ সায়েরা খাতুনের কোল জুড়ে বাঙালির বহু শতাব্দীর পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনে শান্তি ও মুক্তির বার্তা নিয়ে সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় এই বয়সী অনেক রাজনেতিক এবং বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিত্বের নেতৃত্ব এবং স্ব-স্ব কর্মকান্ডে নিয়োজিত থাকার নজির থাকলেও বাঙালীর জাতির পিতাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মাত্র ৫৫ বছর বয়সে প্রাণ দিতে হয়েছে। শুরুতে তিনি ছিলেন দুরন্ত খোকা, কিশোর-মুজিবুর। অনেকের কাছে মুজিব ভাই। এরপর মুজিবুর রহমান, অথবা শেখ মুজিবুর রহমান। তার পর বহুদিন ধরে মানুষের মুখে মুখে তার নাম ছিল ‘শেখ সাব’। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন পরিচয় ‘বঙ্গবন্ধু’। একাত্তরের পর তিনিই স্বাধীন দেশের স্থপতি ‘জাতির পিতা’। তিন দশক সময়কালের মধ্যে এভাবেই ঘটেছিল তার অবস্থানের উত্তরণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদানের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু ১৯৪৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের টিকেটে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ এসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন। ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবন সোচ্চার এই অবিসংবাদিত নেতাকে রাজনৈতিক জীবনে বহুবার কারাবরণ করতে হয়।
তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬-দফা ও পরবর্তীতে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ করেন। তার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ধাপে-ধাপে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্ততি নিতে থাকে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হলেও তৎকালীন পাকিস্থানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তাস্তর না করে বাঙালি জাতির ওপর নানা নির্যাতন শুরুকরে। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। যা গত বছর ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার এ অন্তভুক্তির মাধ্যমে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে।
Leave a Reply