ডেস্ক রিপোর্ট:নিউজিল্যান্ডে ক্রাইস্টচার্চ ট্র্যাজেডিতে ভাগ্যগুণে বেঁচে গেছেন পক্ষাঘাতগ্রস্ত ফরিদ উদ্দিন। তবে পৃথিবীতে নেই তার প্রিয়তমা স্ত্রী হুসনে আরা পারভীন (৪২)। স্বামীকে হুইল চেয়ারে করে জুমার নামাজ পড়তে আল-নূর মসজিদে নিয়ে গিয়েছিলেন স্ত্রী। স্বামী ফরিদ উদ্দিন প্রাণে রক্ষা পেলেও অজ্ঞাত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন হুসনে আরা পারভীন। পারভীন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা সদর ইউনিয়নের উত্তর মিরেরচর গ্রামের হাজী মকরম আলীর পুত্র ফরিদ উদ্দিন আহমদের স্ত্রী। হুসনে আরার পৈতৃক বাড়ি গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের জাঙ্গালহাটা গ্রামে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ৪৯ জনের মধ্যে ৩ জন হচ্ছেন বাংলাদেশি। আর ওই ৩ জনের একজন হচ্ছেন পারভীন। এ ঘটনায় পারভীনের স্বামী ও পিতার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
পারভীনের পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ফরিদ উদ্দিন প্রায় ১৫ বছর আগে এক সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন। তখন থেকে তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত। সেই থেকে স্বামীর পাশে ছায়া হয়েছিলেন হুসনে আরা পারভীন। প্রতি শুক্রবার স্বামীকে জুমার নামাজে মসজিদে নিয়ে যেতেন তিনি। একইভাবে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে স্বামীকে নিয়ে ক্রাইস্টচার্চে ডিন্স এভিনিউর হেগলি ওভাল মাঠের নিকটবর্তী আল-নূর মসজিদে যান হুসনে আরা পারভীন। সেখানে দুটি মসজিদ রয়েছে। অপর মসজিদ লিনউডে নারীরা নামাজ আদায় করেন। তাই, পারভীন তার স্বামীকে আল নূর মসজিদে রেখে লিনউড মসজিদে চলে যান। কিছু সময় পর গোলাগুলির শব্দ শুনে আল নূর মসজিদে স্বামীকে খুঁজতে যান পারভীন। ওই সময় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তাকে লক্ষ্য করে গুলি করলে তিনি ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন।
স্বামীকে খুঁজতে গিয়ে সন্ত্রাসীর গুলিতে হুসনে আরা পারভীন মারা গেলেও বেঁচে গেছেন তার স্বামী ফরিদ উদ্দিন আহমদ। মসজিদে থাকা অন্যান্য মুসল্লিরা ফরিদ উদ্দিনকে মসজিদ থেকে বের করে নেওয়ায় তিনি বেঁচে গেছেন।
খুন হওয়া হুসনে আরা পারভীনের স্বজন এইচ আর শাকিল জানান, স্বামী, একমাত্র মেয়ে ও দুই ভাই-বোনের সাথে দীর্ঘদিন ধরে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে বসবাস করে আসছেন পারভীন।
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি এমদাদুর রহমান মিলাদ জানান, হুসনে আরা পারভীনের মৃত্যুর বিষয়টি বিকেলে জানতে পেরেছেন বিশ্বনাথে থাকা তার স্বজনরা।
নিহতের ভাসুর মঈন উদ্দিন জানান, গতকাল শুক্রবার বিকেলে টেলিফোনে ভাইয়ের সাথে কথা বলে জানতে পারেন হুসনে আরা পারভীন সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। ফরিদ পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগী হওয়ায় জুম্মার নামাজ আদায় করার জন্য হুইল চেয়ারে করে তাকে মসজিদে নিয়ে যান হুসনে আরা পারভীন। দীর্ঘ প্রায় ২৮ বছর ধরে ফরিদ উদ্দিন নিউজিল্যান্ডে আছেন। তিনি প্রথমে ভিজিট ভিসায় নিউজিল্যান্ডে যান এবং পরে সে দেশের নাগরিকত্ব লাভ করেন। ফরিদ উদ্দিন সেখানে মুসলিম কমিউনিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। প্রতি শুক্রবার ফরিদ আল-নূর মসজিদের ইমামের আরবী খুতবা পাঠ এর সময় (ইংরেজিতে) অনুবাদ করে মুসল্লিদের শুনান। ১৯৯৪ সালে ফরিদ উদ্দিন আহমদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন হুসনে আরা পারভীন। বিয়ের কয়েক বছর পর তারা চলে যান নিউজিল্যান্ডে। ২০০৯ সালে সর্বশেষ তারা বাংলাদেশে এসেছিলেন। মূলত ফরিদ উদ্দিন অসুস্থ হওয়ার পর থেকে দেশে যোগাযোগ কমে গেছে। হুসনে আরার মৃত্যুতে তার স্বামী ও বাবার বাড়িতে শোকের মাতম চলছে।
Leave a Reply