শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন

উন্নত চিকিত্সার জন্য ওবায়দুল কাদের সিঙ্গাপুরে

Reporter Name
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০১৯
  • ৩৪৩ বার পঠিত

প্রথম সেবা ডেস্কঃ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে উন্নত চিকিত্সার জন্য সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শারীরিক অবস্থার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার পর ভারতের প্রখ্যাত কার্ডিওলজিস্ট ডা. দেবী শেঠির পরামর্শে তাকে বিদেশে পাঠানো হলো। হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর গত দুইদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ছিলেন ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল কাদেরকে বহনকারী এয়ার এম্বুলেন্সটি গতকাল রাত ৮টায় সিঙ্গাপুরের সেলেটর বিমানবন্দরে পৌঁছায়। বিমানবন্দর থেকে তাকে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলোজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও প্রিন্সিপাল ডক্টর ফিলিপ কোহ’র অধীনে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। আকাশ পথে ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক কোন অসুবিধা হয়নি। তার রক্তচাপ স্বাভাবিক আছে। এর আগে বিকাল সোয়া ৪টায় সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি।

ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তার সহধর্মিনী ইশরাতুন্নেছা কাদের এবং ব্যক্তিগত চিকিত্সক কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক ডা. আবু নাছের রিজভী রয়েছেন। ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরের পথে কাদেরকে দেখভাল করার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আছেন মাউন্ট এলিজোবেথ হাসপাতালের দুজন চিকিত্সক, একজন নার্স ও একজন টেকনিশিয়ান। রবিবার সন্ধ্যায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গেই ঢাকায় এসেছিলেন তারা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ভারতের প্রখ্যাত কার্ডিওলজিস্ট ডা. দেবী শেঠির বক্তব্য উদ্ধৃত করে সাংবাদিদের বলেন, ‘ওবায়দুল কাদেরকে চিকিত্সায় এখন পর্যন্ত যা কিছু করা হয়েছে, তা সঠিক।’ তিনি বলেন, তার (ওবায়দুল কাদের) শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে, তবে শঙ্কামুক্ত নন। আমরা ওবায়দুল কাদেরের চিকিত্সার সর্ব শেষ অবস্থা পর্যবেক্ষণে ডা. দেবী শেঠির পরামর্শের অপেক্ষা করছিলাম। ডা. শেঠি সোমবার দুপুর পৌনে ১টায় বিএসএমএমইউ’র সিসিইউতে এসে পৌঁছান এবং চিকিত্সাধীন ওবায়দুল কাদেরের স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উন্নত চিকিত্সার লক্ষ্যে তাকে বিদেশে হূদরোগ সংক্রান্ত বিশেষায়িত কোন হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। ইতিমধ্যেই সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের হূদরোগ বিশেষজ্ঞ একটি দল ওবায়দুল কাদেরকে নেওয়ার জন্য ঢাকায় অবস্থান করায় ওই হাসপাতালের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করেই তাকে সেদেশে পাঠানো হয়।’ ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিমুক্ত কিনা একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, তার ডায়াবেটিস অনিয়মিত পরীক্ষা করা হতো। আগেও হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। এরপর ঠিকভাবে শরীর চেকআপ করা হয়নি। তার রক্তে ইনফেকশনের ব্যাপার আছে। সেটাও বেড়ে গেছে। তাকে শিফট করার এখনই ভালো সময়। ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘ভারতের নামকরা হূদরাগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠি ওবায়দুল কাদেরকে দেখেছেন। সর্বশেষ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার পর তিনি মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন। দেবী শেঠি বলেছেন, আপনারা যে চিকিত্সা দিয়েছেন, চমত্কার চিকিত্সা হয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকা হলেও একই চিকিত্সা হতো। এই রোগে এর বেশি কিছু করা সম্ভব না। দেবী শেঠীর বাংলাদেশে আসার প্রক্রিয়াটা মোটেই সহজ ছিলো না। এক রাষ্ট্র থেকে আরেক রাষ্ট্রে যাবেন দেবী শেঠী, ভিসা তো লাগবেই। বাংলাদেশে যেতে হবে সেটা দেবী শেঠী জেনেছেন সোমবার ভোরে। দেবী শেঠী থাকেন ভারতের বেঙ্গালুরুতে। ভোর থেকেই তাকে বাংলাদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে তুমুল ব্যস্ততার মধ্যে পড়েন কলকাতার উপ-হাইকমিশনের কর্মকর্তারা। প্রথমবার নিয়মের ঊর্ধ্বে উঠে কনস্যুলার মনসুর আহমেদ বিমানবন্দরে গিয়ে বাংলাদেশের ভিসা প্রসেসের সব কাজ সম্পন্ন করেন। এমন ঘটনা কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের জন্য প্রথম।

সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরের স্বাস্থ্যের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে ডা. সৈয়দ আলী আহসান বলেন, তার রক্তের পিএইচ মোটামোটি স্বাভাবিক, ব্লাড সুগার আগে ২৬ ছিল, ইনসুলিনের মাধ্যমে কমানো হয়েছে। তবে ভেন্টিলেশন এখনও খোলা যাবে না। কেননা তিনি সিওপিডি রোগী। যারা ধুমপান করে তারা সাধারণত সিওপিডি রোগী হয়। তাই এটা খুলতে আরো সময় লাগবে। প্রেসার স্বাভাবিক থাকলেও মাঝে মধ্যে বাড়ছে। ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্সের যে বিষয়টি ছিল, সেটাও এখন নরমাল। তিনি বলেন, এখন তিনি (কাদের) নড়াচড়া করছেন। ডা. আহসান বলেন, তার অবস্থা স্টেবল রয়েছে, উন্নতির দিকে যাচ্ছে। তবে হূদযন্ত্র স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। বিএসএমএমইউ’র উপ-উপাচার্য ডা. শহীদুল্লাহ শিকদার, কার্ডিলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. সৈয়দ আলী আহসান ও আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা রোকেয়া সুলতানাসহ মেডিকেল টিমের অন্য সদস্যরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘এখন সবাই রেডি আছি। সিঙ্গাপুরের টিমের ওপর নির্ভর করছে কখন সেখানে যাবেন। যত দ্রুত সম্ভব তাকে নিয়ে যাওয়া হবে।’ এর আধা ঘণ্টার মাথায় বিকাল পৌনে ৩টায় করোনারি কেয়ার ইউনিটের সুবিধা সম্বলিত একটি অ্যাম্বুলেন্স ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে পুলিশি পাহারায় বিমানবন্দরের পথে রওনা হয়। আগেই পুরো রাস্তা খালি করে দেওয়ায় বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ২০ মিনিট। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকাল সোয়া ৪টায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজোবেথ হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান এবং পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী এনামুল হক শামীম ও দলের উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বিমানবন্দরে দলের সাধারণ সম্পাদককে বিদায় জানাতে উপস্থিত ছিলেন।

ইউ আর ভেরি লাকি, মিসেস কাদেরকে ডা. শেঠী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিত্সাধীন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে চিকিত্সা পেয়েছেন তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ডা. দেবী শেঠী। এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রী ইশরাতুন্নেসা কাদেরকে উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ইউ আর ভেরি লাকি (আপনি খুবই ভাগ্যবান)।’ শুরুতে ডা. দেবী শেঠী সব রিপোর্ট দেখেন। এনজিওগ্রাম দেখার পর কিছুক্ষণের জন্য তাকে পর্যবেক্ষণে রাখেন। পরে তিনি (ডা. শেঠী) বলেন, তার যা চিকিত্সা প্রয়োজন সবটাই করা হয়েছে। এখন চাইলে আপনারা তাকে শিফট করতে (দেশের বাইরে) পারেন। শেঠি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের রক্তচাপ ভালোর দিকে এবং তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ডা. শেঠি বলেন, অবস্থা রবিবারের চেয়ে ভাল। তবে শঙ্কামুক্ত নয়। এখানকার চিকিত্সকগণ যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। পরে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, আমাদের এখানে চিকিত্সা ভালো হচ্ছে তা ডা. দেবী শেঠীও বলেছেন। তবে সরকার প্রধানের পক্ষ থেকে দেবী শেঠীকে নিয়ে আসার একটি একটি নির্দেশনা ছিল। যে কারণে তিনি এসেছেন। তিনি নিজেই নিজস্ব প্লেনে করে চলে আসেন।

আগেই ভর্তি হতে অনুরোধ করেছিলাম, রাজি হননি

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে চিকিত্সকরা হাসপাতালে ভর্তি হতে এর আগেও অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু তিনি রাজি হননি। তখন বলেছিলেন ‘আমি ভালো আছি।’ অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, আগে থেকেই তার অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিক এবং উচ্চ রক্তচাপ ছিল। আগেও একবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। এ সময় তাকে স্টেনটিং করার পরামর্শও দেওয়া হয়। গত ২০ ডিসেম্বর তিনি এখানে আসেন, একটা মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে বলা হয়েছিল ভর্তি থাকার জন্য। কিন্তু তিনি তখন ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের কথা বলেছিলেন। এরপরও তার সঙ্গে দেখা হলে তাকে অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু তিনি বলেছিলেন, আমি ভালো আছি।

ভেন্টিলেশন খোলার ইশারা দেন কাদের

ওবায়দুল কাদের ভেন্টিলেশন খোলার ইশারা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিত্সকরা। অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আলী আহসান বলেন, রবিবারের চেয়ে তার অবস্থা স্ট্যাবল, তবে শঙ্কামুক্ত নয়। সকাল থেকে তিনি তাকাচ্ছেন এবং ইশারা করছেন। কয়েকবার ভেন্টিলেশন খোলার ইশারা দিয়েছেন। এর মানে তিনি স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে চাচ্ছেন। এটা ভালো লক্ষণ। তাকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে তিনি যন্ত্রণামুক্ত থাকতে পারেন।
সুত্রঃ প্রথম আলো

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2019 Prothomsheba
Theme Developed BY ThemesBazar.Com