বাহুবলে দুই সন্তানকে নিয়ে মাথাগোঁজার ঠাঁই পেলেন বাহুবলের সিমু: ডিআইজির ঈদ বস্ত্র প্রদান ও ঘরের চাবি হস্তান্তর।
নুর উদ্দিন সুমন : দীর্ঘদিন থাকার জন্য একটা পাকা ঘর নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত ছিলনা সিমু আক্তারের। পরিবারের টানাপোড়েনের কঠিন দুঃসময়ে সিমু দুশ্চিন্তাগ্রস্থ চেহেরায় ফিরে এলো হাসির ঝিলিক। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন গৃহহীন সকল মানুষকে দেওয়া হবে জায়গাসহ পাকা বাড়ি। তারই অংশ হিসাবে বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপির সার্বিক সহযোগিতায় সিলেট রেঞ্জ কর্তৃক বাহুবল থানার ব্যাস্থাপনায় গৃহহীন তালিকায় উঠে আসে অসহায় সিমুর নাম ।
বাহুবল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি রাকিবুল ইসলাম খান তাঁদের জন্য মিরপুর ইউনিয়নের বশিনা গ্রামে ব্যবস্থা করেন দুই শতক জমি। সেই জমিতে দুইটি বেড রুম, একটি বারান্দা, রান্নাঘরসহ নির্মাণ করা হয় দৃষ্টিনন্দন বাড়ি। বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানসহ বৈদ্যুতিক পাখা, বাতি লাগানো হয়। ঘরের পাশে বৃক্ষরোপণ করেন রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলি । এছাড়া গত ১০ এপ্রিল সারা দেশে পুলিশ বাহীনির সহায়তায় নির্মিত বাড়ীগুলো উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রবিবার (পহেলা মে) বাহুবলের মিরপুর ইউনিয়নের বশিনা সিমু আক্তারের জন্য নির্মিত ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন পিপিএম । সাথে ছিলেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলি সহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণ। পরে ডিআইজি মফিজ উদ্দিন ও হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ নির্মিত ঘরের আঙ্গিনায় বৃক্ষরোপণ করেন এবং ভবিষ্যতে জীবিকা নির্বাহের জন্য কিছু হাঁস-মুরগী ও ঈদ উপহার তুলে দেন।
দৃষ্টিনন্দন বাড়ি পেয়ে খুশিতে আত্মহারা সিমু আক্তার বলেন, ঘর পেয়ে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পুলিশ প্রধান আইজিপি, সিলেটেরেঞ্জ ডিআইজি মফিজ উদ্দিন, হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার, বাহুবল মডেল থানা পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আজ আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন আলোর মুখ দেখেছে। দুই সন্তানকে নিয়ে মাথাগোঁজার ঠাঁই পেয়েছি, এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর হতে পারেনা। আমি খুব অসহায় , আমার দুইটি কন্যা সন্তান। তারা ছোট থাকাকালীন আমার স্বামী প্রায় ১৪ বছর পুর্বে আমাকে ফেলে চলে যায়। আমি আমার আত্নীয় স্বজনদের বাড়ি বাড়ি থেকে আমার দুইটি কন্যা সন্তানকে অনেক কষ্ট করে লালনপালন করেছি। ছিলনা মাথা গোঁজার ঠাঁই, এই অসময়ে পুলিশ অভিভাবকের মতো আমার পাশে দাঁড়িয়েছে, অবশেষে বাহুবল থানার মাধ্যমে আমি একটি পাকা ঘর পেয়েছি।তিনি আরও বলেন, ঈদের ১ দিন পুর্বে নতুন ঘরে থাকতে পারব কখনোই কল্পনা করতে পারিনা । আজ আমি নতুন ঘরে দুই সন্তানকে নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারব। অসহায় সিমুর পিত্রালয় বশিনা গ্রামেই দৃষ্টিনন্দন এই ঘর নির্মাণ করে পুলিশ। এতে রয়েছে রান্নাঘর, ও বৈদ্যুতিক সংযোগও। বাহুবল সার্কেল মো: আবুল খয়ের এর সঞ্চালনায় পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলির সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি শতাধিক দুঃস্থ ও সুবিধাবঞ্চিতদের হাতে ঈদ উপহার তুলে দেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট রেঞ্জ কার্যালয়ের পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম, সুপার জেদান আল মুসা, হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( প্রশাসন) শৈলেন চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) মাহমুদুল হাসান, হবিগঞ্জ সদর সার্কেল মাহফুজা আক্তার শিমুল, বানিয়াচং সার্কেল পলাশ রঞ্জন দে, বাহুবল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) রাকিবুল ইসলাম খান, ইন্সপেক্টর ( তদন্ত) প্রজিত কুমার দাশ, পুটিজুরী ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোবারক হোসেন, শ্রমিক নেতা মো: আসকার আলী, বাহুবল সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজমল হোসেন চৌধুরী, মিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: শামীম আহমেদসহ রাজনৈতিক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং জেলা পুলিশের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ, গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় প্রধান অতিথি সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন পিপিএম বলেন,
আজকের এই গৃহহীনদের ঘর ও ঈদবস্ত্র বিতরণ সবই নিঃস্বার্থে করা হচ্ছে। পুলিশ সবসময় জনগণের পাশে থেকে কাজ করছে, পুলিশের মূল কাজ হল আইন শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ বিষয়ক তদন্ত করা, সমাজ ও মানুষের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, তিনি পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেন, বিনা স্বার্থে বিনা চিন্তায় মানুষের সেবা দিতে হবে, জনসাধারণের কথা রিসিভ করতে হবে, মানুষ বিনা কারণে থানায় যায় না বিপদে পরেই থানায় যায়, মানুষ যে দ্রুত গতিতে থানায় যাবে, আবার থানা পুলিশের সেবাও দ্রুত গতিতে মানুষের মাঝে পৌঁছে দিতে হবে। তিনি বাহুবলের ওসি ও অফিসারদের উদ্দেশ্যে বলেন, কোন নির্যাতনকারী যদি নিরীহ ব্যক্তিকে আঘাত করে রক্তাক্ত করে রক্তের দাগ শুকানোর আগেই যেন নির্যাতিতকে গ্রেফতার করতে হবে, মামলা হওয়ার পরে দাঁড়িপাল্লা নিয়ে বসলে হবে না, বাদী পক্ষের পাল্লা ভারী না বিবাদী পক্ষের পাল্লা ভারী, তাহলে যে পক্ষের পাল্লা ভারী আমি সেদিকে চলে গেলাম সেটা কোন আইনে লিখা নাই, আইনের পাল্লা হল সব সময় ভারী, নৈতিকতা হল সব সময় ভারী, হিতাহিত জ্ঞান হল ভারী,মানবতা হল ভারী, পুলিশ মানবতার জন্য কাজ করবে, নিঃস্বার্থভাবে কাজ করবে, বিনা স্বার্থে কাজ করবে, পুলিশ সবসময় জনগণের পাশে থেকে কাজ করছে, কেউ অনিয়ম করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
Leave a Reply