নুর উদ্দিন সুমন : জেলার বাহুবল সার্কেল প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল।বিশাল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিমন্ডলের এই সার্কেলের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ছিল পুলিশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ভূমি দখল, তুচ্ছ ঘটনায় খুন, জোয়ার আসর, গোষ্ঠীগত দ্বন্দ, রাজনৈতিক, অন্তর্দ্বন্দ,দেনা পাওনাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণে এই সার্কেলের এএসপির জন্য ছিল সীমাহীন চিন্তার বিষয়। এইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে খুব অল্প সময়ে নতুন প্রজন্মের পুলিশিং ব্যবস্থা চালু করেছেন বাহুবল সার্কেল ও সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: পারভেজ আলম চৌধুরী।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গোষ্ঠীগত দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ এবং আলোচিত ওয়ান টেন জোয়া বন্ধ । সন্ত্রাসী কার্যক্রম, মাদকসেবন, মাদক নিমূল,চুরি,ডাকাতি, ইভটিজিং বন্ধে অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন তিনি।অপরাধ সংক্রান্ত তদবিরকে বেশ কঠোরভাবে বন্ধ করেছেন।সাধারণ জনগণকে খুব কাছে থেকে আইনি সহযোগিতা প্রদানের লক্ষে ও অপরাধীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য এএসপির চেম্বার স্থাপন করেন তিনি।একই সাথে থানাগুলো কে দালালমুক্ত করে পুলিশের সাথে জনগণের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের পথ সুগম করেছেন। ৩৩তম বিসিএসের পুলিশ কর্মকর্তা পারভেজ আলম চৌধুরী ২০১৮ সালের ৭ মার্চ বাহুবল সার্কেলের এএসপি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। জুলাই ২০১৮ থেকে ৫ মে ২০২১ পর্যন্ত দুই উপজেলায় এরই মধ্যে ২০ টি ইউনিয়নে দুইশতাধিক বিরোধের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে আলেচিত দেড়শতাধিক বিরোধের নিষ্পত্তিও করে ফেলেছেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ এবং এর সাথে জড়িতদের আটক, আইন-শৃংখলা রক্ষা, অপরাধ দমন ও অপরাধীদের গ্রেফতার, মামলা গ্রহণের বিষয়ে সার্বক্ষনিক নজরদারি, সড়ক পথে শৃঙ্খলা রক্ষা, অসহায় মানুষের পাশে থেকে জনবান্ধব পুলিশিং গড়ে তুলা সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর সবচেয়ে বেশি নজর দিয়েছেন পারভেজ আলম চৌধুরী । তিনি যোগদানের পর পাল্টে যায় বাহুবল সার্কেলের চিত্র।তাঁর দূরদর্শিতার ফলে আটক হয়েছে দাগী অসংখ্য চোর ডাকাত। অপরাধ দমনে পুলিশী তৎপরতাকে তিনি হার্ড লাইনে রেখে থানা পুলিশকে আধুনিক রূপরেখায় পরিচালনা করেন। ফলে ক্লুবিহীন অপরাধের ঘটনাগুলোর রহস্য উন্মোচনে, অপরাধী সনাক্তকরণ, গ্রেফতারে ও অপরাধ দমনে তার কৌশল ও নির্দেশনা কার্যকর হতে দেখা যায়। এ ছাড়া তিনি যোগদানের পর থেকে দুইটি উপজেলার থানা এবং ফাঁড়ির ইনচার্জদের নিয়ে প্রায়ই জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় তদারকি, বাজার মনিটরিং ও গুজব ঠেকাতে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। ফলে পুলিশী হয়রানি থেকে সাধারণ মানুষের অনেকটাই মুক্তি মিলেছে। অন্যদিকে উপজেলার চরাঞ্চলের প্রাণক্ষয়ী টেঁটাযুদ্ধ বন্ধ করতে ব্যাপক পুলিশী তৎপরতা ছিল তার সময়ে। উদ্ধার করেছেন দেশীয় অস্রসহ টেঁটা। সংঘর্ষ হলেইে জীবনের ঝুকি নিয়ে ছুটে চলেছেন ঘটনার স্থলে নিয়ন্ত্রনও করেছেন ভয়বহ সংঘর্ষ। দুই উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক হওয়ায় কাজের স্বীকৃতি সরুপ পেয়েছেন জেলা পুলিশ সুপারের সম্মাননা। তাঁর এসব কাজের ধারাবাহিক সাফল্য স্বাক্ষী হয়ে থাকবে বাহুবলের ইতিহাসে। বাহুবল ও নবীগঞ্জে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, একটা সময় পুলিশের প্রতি নির্ভরশীলতার অভাবে অনেক মানুষেরই ছোটখাটো কোন বিষয় নিয়ে পুলিশের কাছে যেতে অনিহা ছিল। অনেকে নিরবে-নিভৃতে প্রভাবশালীদের ছোটখাটো জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে গেছেন। এতে করে অপরাধীদের অপরাধের মাত্রা ছাড়িয়েছিল। এসব সামাজিক সমস্যা নিরসনে সার্কেল এএসপি মো: পারভেজ আলম চৌধুরী তাঁর অফিস কক্ষে নিয়মিত সাধারণ মানুষের অভিযোগ শুনে এবং পরবর্তীতে এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ায় অপরাধীদের উৎসাহে অনেকটাই ভাটা পড়েছে । বাহুবলের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির পেছনে মো: পারভেজ আলম চৌধুরীর মত সৎ, দক্ষ, কর্তব্যপরায়ণ ও নির্ভীক সিনিয়র এএসপির কর্মকান্ড প্রশংসনীয় ছিল। এ ছাড়া করোনাকালীন সময়ে তার নেতৃত্বে অন্য এক মানবিক পুলিশ দেখেছে বাহুবল সার্কেলের জনসাধারণ।
খুব অল্প সময়ে তিনি কেড়েছেন বাহুবল বাসীর মন। যার আন্তরিকতা, দক্ষ ও সাহসিকতায় উজ্জল হয়েছে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি। সাধারণ জনগণের কাছে মো: পারভেজ আলম চৌধুরী যেন আস্থা ও ভরসার এক বাতিঘর । কাজের বলিষ্টতায় মানুষের মধ্যে আজীবন স্মরনীয় হয়ে থাকবেন তিনি। তৃপ্তির গর্বিত আওয়াজ তাকে নিয়ে অনেকের মাঝে। সেবার এক অনন্য আইকন হয়ে দাড়িয়েছেন পারভেজ আলম চৌধুরী । বাহুবল সার্কেলের সর্বজনের কাছে এক জননন্দিত নাম মো: পারভেজ আলম চৌধুরী । সহজ সরল নিরীহ জনগণের পুলিশি সেবা প্রাপ্তির সহজলভ্যতা এখন অত্র সার্কেলের মানুষের মুখে মুখে। তাঁর অসাম্য কর্মপ্রচেষ্টায় দেশ ও জাতির কাছে দৃশ্যমান। অন্যদিকে অপরাধীরা এই সৎ পুলিশ অফিসারের নাম শুনলেই ভয়ে আতঙ্কে উঠে। বিভাগীয় কার্যক্রমের বৃত্তের বাইরেও রয়েছে তাঁর নানাবিধ সামাজিক কর্মদ্যোগ। কর্মজীবনের শেষের দিকে বেশ কয়েকটি আলোচিত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উৎঘাটন করেন। তিনি মানুষের কাছে হয়ে উঠেছেন একটি আস্থা, ভালবাসা ও নির্ভরতার প্রতীক। একজন পুলিশ কর্মকর্তার মূল কাজ জনগণের সেবা করা। বিপদাপদে তাদের পাশে থেকে পুলিশের সকল কর্মকর্তা সে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু পারভেজ আলম চৌধুরী দায়িত্ব পালনে ছিল আলাদা কৌশল, সততা, নিষ্ঠা ও পরিস্থিতির ক্ষেত্র বোঝে সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহন। এএসপি পারভেজ আলম চৌধুরী সাধারণ মানুষের প্রত্যাশিত সেবাকে দ্রুত জনগণের দৌরগোঁড়ায় পৌঁছে দেন অনন্য কৌশলে। দূর্নীতি মুক্ত হয়ে জনবান্ধন ও মানবিক পুলিশং অব্যাহত থাকবে বলেই প্রত্যাশা করেছেন তিনি। বাহুবল সার্কেল হিসেবে মো: পারভেজ আলম চৌধুরী প্রশংসামূলক কর্মকান্ড দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। প্রসঙ্গত গত ২ মে পুলিশ সদর দফতরের এক আদেশে সিনিয়র এএসপি মো: পারভেজ আলম চৌধুরীকে সুনামগঞ্জ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। তার পদায়নের খবর জনসাধারনের মাঝে জানাজানি হলে তাকে নবীগঞ্জ বাহুবলের শিক্ষক, পুলিশ, সাংবাদিক, ডাক্তার, প্রতিবন্ধী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠ এবং সর্বস্তরের মানুষ বিদায় সংবর্ধনা দিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় জানান সেই জনপ্রিয় পুলিশ কর্মকর্তাকে। এমনকী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইস বুকে তার প্রশংসনীয় কর্মকান্ড তুলে ধরে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। এ কর্মকর্তার গণবিদায় সংবর্ধনা ইতিহাসের এই প্রথম বলে অনেকেই মন্তব্য করেন। গতকাল বাহুবল সার্কেলের সকল কার্যক্রম শেষ করে ভালবাসায় সিক্ত হয়ে আরেক নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেন।
এর আগে মো: পারভেজ আলম চৌধুরী তার ফেইসবুক আইডিতে লিখেছেন তা তুলে ধরা হল: “বিদায় প্রিয় হবিগঞ্জবাসী! প্রায় ৩ বছর ৩ মাস পর্বে যোগদান করেছিলাম বাহুবল সার্কেলে (বাহুবল মডেল থানা ও নবীগঞ্জ থানা) সার্কেল এএসপি হিসেবে। আজ এখান থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বিদায় নিচ্ছি। দীর্ঘ এই সময়কালে যেইসকল সিনিয়র স্যারদের শীতলছায়ায় ছিলাম তাদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানান। সেই সাথে বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান, বাহুবল নবীগঞ্জবাসীদের প্রতি ও বাহুবল এবং নবীগঞ্জ থানার অফিসার, ফোর্সদের প্রতি। তিনি বলেন, দাংঙ্গা প্রবণ বাহুবল নবীগঞ্জকে দাংগামুক্ত করার কমিটমেন্ট নিয়েই এই সার্কেলে যাত্রা শুরু করেছিলাম। কতটুকু পেরেছি জানিনা। তবে আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে চেষ্টা করেছিলাম। বিদায় ক্ষণে ব্যার্থতাই বেশি মনে হচ্ছে, ডিউটির প্রেসারের কারণে অনেকের অভিযোগ হয়তো ঠিকমতো সমাধান করে দিতে পারিনি, অনেকের প্রত্যাশা হয়তো অনেক বেশি ছিল সেই প্রত্যাশিত সেবাটুকু হয়তো দিতে পারিনি, এরকম অনেক ব্যার্থতাই আছে! এই ব্যার্থতা সবটুকু একান্তই আমার। তবে চেষ্টা করেছিলাম সাধ্যের চেয়েও বেশি দিয়ে।আপনাদের সহযোগিতাও পেয়েছিলাম প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। মনে পড়ে দাংঙ্গা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে অনেকবার নিজে রক্তাক্ত হয়েছিলাম তবুও ভয়ে পিছিয়ে আসিনি। কারন যদি কোন মায়ের কোল খালি হয়ে যায়! পরিবারের অভিযোগের তীর প্রতিক্ষণ ছিল আমার প্রতি তাদেরকে সময় না দেয়ার জন্য। তবুও চেয়েছিলাম আমার সর্বোচ্চ সময়টুকু বাহুবল নবীগঞ্জবাসীকে দেয়ার জন্য। আমার দুই থানায় চেষ্টা করেছিলাম দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে যাতে সাধারণ লোকজন অনায়াসে কোন ভয় ভীতি ছাড়াই তার অভিযোগ দিতে পারে। এটা নিশ্চিত করার জন্য আমাকে অনেক বেশি কঠোর হতে হয়েছিল তাতে অনেকেই কষ্ট পেয়েছিলেন আমি জানি। অনেক উদ্যোগ নিয়েছিলাম সাধারণ লোকজনের অভিযোগ খুব কাছ থেকে শুনার জন্য কিন্তু ট্রেইনিংসহ অনেক প্রতিবন্ধকতার জন্য হয়তো পুরোপুরি পারিনি। কতিপয় সিন্ডিকেট ছিল যারা সাধারণ নিরীহ লোকজনকে জিম্মি করে রেখেছিল, তাদের বাহিনী দিয়ে সবাইকে আতংকে রাখতো, আলাদা রাজত্বই ছিল তাদের। ভেঙ্গে দিয়েছিলাম তাদের সেই রাজত্ব, স্বস্থি ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম নিরীহ লোকদের। আপোষ করিনি কোন শক্তির কাছে। বড় বড় জোয়াড়িদের আস্তানা গুড়িয়ে দিয়েছিলাম। বাহুবল সার্কেলে যোগদান করে বলেছিলাম হয় আমি থাকবো নয় জোয়াড়ি, মাদক ব্যবসায়ীরা থাকবে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা স্যার অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন একজন ব্যাক্তিত্ব। স্যারের কাছ থেকেই আমার এই শক্তি পাওয়া। স্যারের সার্বিক নির্দেশনা এবং ছায়ার মতো পাশে থাকার ফলেই আমি লম্বা একটি সময় বাহুবল সার্কেলে কাজ করতে পেরেছিলাম। শ্রদ্ধাভরে স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বিদায় লগ্নে। সুনামগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) হিসেবে আমি যোগদান করতে যাচ্ছি। বিদায় ক্ষণে আপনাদের যে ভালবাসা দেখিয়েছেন আমার প্রতি আমি সত্যি খুব কৃতজ্ঞ। যদিও এই ভালবাসা পাওয়ার মতো যোগ্যতা আমার নেই। আপনাদের ভালবাসার ঋণ আমি কখনোই শোধ করতে পারবোনা। আমার আচরণে হয়তো অনেকেই কষ্ট পেয়েছিলেন, আশা করবো বিদায়লগ্নে সেই কষ্ট ভুলে যাবেন এবং আমার জন্য দোয়া করবেন। ভাল থাকুক প্রিয় বাহুবলবাসী, ভাল থাকুক প্রিয় নবীগঞ্জ বাসী.ভাল থাকুক হবিগঞ্জ। এটাই প্রত্যাশা এবং দোয়া করি।
Leave a Reply