স্টফ রিপোর্টার ॥ ডাক্তার উম্মে কাশমিরা। হাতে-পায়ে থাকে মোজা, পড়নে সাদা বোরকা, থাকে হিজাব। কথা বলেন না রােগীর কোন পুরুষ অভিভাবকের সাথে। তারপরও একাধিক চেম্বার করছেন বিরামহীনভাবে। রাত নেই, দিন নেই ২৪ ঘন্টা চেম্বার ও সিজারের অপারেশন থিয়েটার ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। সর্বশেষ গত বৃহপতিবার রাতে যোগ হয়েছে অপারেশন থিয়েটোরে বাচ্চা বদল। মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার মত এমন সংবাদে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন হবিগঞ্জের মানুষ। উদ্বেগ উৎকণ্ঠা তৈরী হয়েছে সর্বমহলে। জানা যায়, চুনারুঘাটের পূর্ব পাকুরিয়া গ্রামের মোঃ ওয়াসিম মিয়া পেশায় একজন গাড়ি চালক। গত বৃহস্পতিবার (৭জানুয়ারি) তার গর্ভবতী স্ত্রী সুমি আক্তারের সিজার করানোর জন্য হবিগঞ্জ শহরের কোর্ট স্টেশন এলাকায় দি জাপান বাংলাদেশ হাসপাতালে এক দালালের মাধ্যমে নিয়ে যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তি হয় ২৯ হাজার টাকায়। রাত ২টায় তার সিজার করানো হয়। সিজার করেন ডাক্তার উম্মে কাশমিরা। প্রায় ৩০ মিনিট পর হাসপাতালের একজন আয়া একটি ছেলে সন্তান সুমি আক্তারের স্বজনদের হাতে এনে দেন। কিছুক্ষণ পরই ওই শিশুকে ফেরত নিয়ে একটি মেয়ে সন্তান এনে দেয়া হয়। বলা হয় আগের সন্তান তোমাদের নয়, এই মেয়ে সন্তান তোমাদের। এতে কিংকর্তব্যবিমূর হয়ে পড়েন রোগীর স্বজনরা। এই অবস্থার মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ে নবজাতক শিশুটি। পরে বিনা চিকিৎসায় ওই নবজাতকের মৃত্যু হয়। এ সময় একটিবারের জন্য শিশুটিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি ডাঃ উম্মে কাশমিরা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উল্টো শিশুর স্বজনরা যাতে বের হতে না পারে এ জন্য হাসপাতালের গেইটে তালা দিয়ে রাখা হয়। এমন সংবাদ গত শনিবার স্থানীয় প্রকাশিত হলে নিন্দার ঝড় উঠে সর্বত্র। জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে প্রশাসনের প্রতি দাবী জানানো হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ডাঃ উম্মে কাশমিরা নিয়মিত সিজার করেন হবিগঞ্জ শহরের কোর্ট স্টেশন রোডস্থ দি জাপান বাংলাদেশ হাসপাতালে। উনার বিজ্ঞাপনে লেখা আছে তিনি ইবনে সিনা হাসপাতালের এক্স সিনিয়র কনসালটেন্ট। কয়েক বছর যাবত হবিগঞ্জে রোগী দেখছেন। হাতে-পায়ে থাকে কালো মোজা, পড়নে সাদা বোরকা, থাকে হিজাব। কথা বলেন না রোগীর কোন পুরুষ অভিভাবকের সাথে। শহরের বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে চেম্বার করছেন বিরামহীনভাবে। রাত নেই, দিন নেই ২৪ ঘন্টাই চেম্বার ও সিজারের অপারেশন থিয়েটারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। দীর্ঘদিন যাবত রোগী দেখছেন। এমন কয়েকটি হাসপাতালের পরিচালক জানান- উনার সাথে তাদেরও কথা হয় না। একান্ত প্রয়োজন হলে তার সহকারীর মাধ্যমে কথা আদান প্রদান হয়ে থাকে। এসব কারণে ডাঃ উম্মে কাশমিরাকে নিয়ে এমনিতেই কৌতুহল ছিল। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে যোগ হয়েছে অপারেশন থিয়েটারে বাচ্চা বদল। মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার মত এমন সংবাদে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন হবিগঞ্জের মানুষ। উদ্বেগ উৎকণ্ঠা তৈরী হয়েছে সর্বমহলে। পর্দার আড়ালে থাকা ওই মহিলা আসলেই ডাঃ উম্মে কাশমিরা কি না তাও খতিয়ে দেখতে প্রশাসনের প্রতি দাবী উঠেছে। হবিগঞ্জে ইতিপূর্বে প্রশাসনের অভিযানে একাধিক ভুয়া ডাক্তার গ্রেফতার হয়েছেন। তাই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন প্রশাসনের প্রতি এমনটাই প্রত্যাশা করছেন হবিগঞ্জের সচেতন মহল। এ ব্যাপারে দি জাপান বাংলাদেশ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফুল ইসলাম বলেন, ডাঃ উম্মে কাশমিরা ম্যাডাম সিজার করার পর ভুলবশত একজনের বাচ্চা আরেকজনের কাছে দেয়া হয়েছিল। শিশুটির মা-ই বলেছেন তাদের মেয়ে সন্তান হয়েছে। হাসপাতালের গেইটও তাদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছিল। তবে শিশুটি মারা যায়। এ ব্যাপারে ডাঃ উম্মে কাশমিরার সাথে যোাগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ফলে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
Leave a Reply