নুর উদ্দিন সুমন : সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে নববধূকে গণধর্ষণ মামলার ৪ নম্বর আসামী অর্জুন লস্করকে হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে গ্রেফতার করছে পুলিশ। আজ ২৭ সেপ্টেম্বর, রবিবার সকালে তাকে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মনতলা সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে গ্রেপ্তারের অভিযানটি চালায় সিলেট জেলা পুলিশ। ধৃত অর্জুন লস্কর সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে। এর আগে মামলার অভিযুক্ত প্রধান আসামি ছাত্রলীগ নেতা এম. সাইফুর রহমানকে সকাল ৮টার দিকে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা নোয়ারাই খেয়াঘাট থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া সাইফুর রহমান সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার চান্দাইপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। এ নিয়ে এই ধর্ষণের মামলার ছয় আসামির মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এমসি কলেজের সাবেক এ শিক্ষার্থী কলেজের তত্ত্বাবধায়কের বাংলো দখল করে সেখানে বসবাস করতেন বলে জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এদিকে আসামিদের গ্রেফতারে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। জানা গেছে, আসামিদের ধরতে সীমান্ত এলাকায় সতর্কবার্তা পাঠানোর পাশাপাশি জেলা পুলিশ ও মহানগর পুলিশের আওতাধীন সব থানাকে সর্তক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণ মামলার আসামিদের গ্রামের বাড়িতেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আসামীদের আত্নীয় স্বজনদের বাড়ীসহ সম্ভাব্য বিভিন্নস্থানে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশের একাধিক টিম। ধর্ষণকারীদের গ্রেফতারের ইতিমধ্যে মহানগর পুলিশের সাতটি টিম বিভিন্ন ধাপে কাজ করে যাচ্ছে। এদিকে আরেক আসামি শাহ মাহবুবুর রহমান রনি হবিগঞ্জের বাগুনিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার নানার বাড়ি চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশি ইউনিয়নে। সে এক চেয়ারম্যান এর ভাগিনা। একটি সুত্র জানায়, উপজেলাটি সীমান্ত এলাকা হওয়ায় আত্মীয়দের সহায়তায় বাল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে চুনারুঘাট থানার(ভারপ্রাপ্ত ওসি) ইন্সপেক্টর তদন্ত চম্পক দাম বলেন, তথ্য সংগ্রহ চলছে সম্ভাব্য আত্মীয়দের বিষয়ে। বিষয়টি জাতীয় ইস্যু। রনিকে দেখামাত্র আটক করা হবে। এ বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, পুলিশ ধর্ষণ মামলার আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তাদের নানা বিষয় খোঁজ নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে মাঠে পুলিশের একাধিক টিমও কাজ করে যাচ্ছে। সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, সিলেট জেলা পুলিশের আওতাধীন সব থানাকে সর্তক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আসামিরা যাতে সীমান্ত এলাকা ব্যবহার করে পালাতে না পারে, সেজন্য সর্তক থাকতে বলা হয়েছে থানা পুলিশকে। উল্লেখ্য গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা নাগাদ কলেজের ফটকের সামনে বেড়াতে যাওয়া এক তরুণী ও তার স্বামীকে জোরপূর্বক কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়ে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ করেন একদল তরুণ। এ ঘটনায় সেদিন রাতেই ধর্ষণের শিকার তরুণীর স্বামী বাদী হয়ে সিলেটের শাহ পরান থানায় ছয় জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত তিন জনকে সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্তরা হলেন— সাইফুর রহমান (২৮), শাহ মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), অর্জুন লঙ্কর (২৫), মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫), রবিউল ইসলাম (২৫) ও তারেকুল ইসলাম (২৮)। এদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আসামিদের মধ্যে তারেক ও রবিউল বহিরাগত, বাকিরা এমসি কলেজের ছাত্র।
Leave a Reply