নিজস্ব প্রতিনিধি : সিলেটের এমসি কলেজে গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ৬ ছাত্রলীগ নেতার পরিচয় পাওয়া গেছে। এর মাঝে একজন হবিগঞ্জ সদর উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নের বাগুনিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শাহ জাহাঙ্গীর মিয়ার পুত্র শাহ মাহবুবুর রহমান রনি। যদিও দীর্ঘদিন কলেজে কমিটি না থাকায় সে সহ অন্যদের কোন পদ-পদবী নেই। কিন্ত কলেজের রাজনীতি এসব নেতারা সক্রিয় ছিলেন। রনি শায়েস্তাগঞ্জ একাডেমী থেকে এসএসএসি পাশ করে শাবিপ্রবিতে ইন্টারমিডিয়েট, অর্নাস করে এমসি কলেজে স্নাতকোত্তর করছে। পড়ালেখায় মেধাবী হলেও ছোটবেলা থেকেই ছিল উগ্র মেজাজের। তার পিতা ও অন্য দুই ভাই সহজ সরল প্রকৃতির হলেও সে তাদের কিছুই পায়নি। এলাকায় এলে ছাত্রলীগের প্রভাব দেখাতো।
জানা গেছে, প্রতি মাসে লাখ টাকা বাড়ীতে দিত রনি। গত ঈদে রনি ৩০ হাজার টাকার পোষাক কিনে ফেসবুকে পোষ্ট দিয়েছিল। তার ঘরে এখনো ২৫ জোড়া জুতা রয়েছে দামি ব্যান্ডের। এ ছাড়া ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়ে তার দাপট ছিল শায়েস্তাগঞ্জে। কিছুদিন আগে ২ লাখ টাকা দিয়ে মোটর সাইকেল কিনেছিল, যা দিয়ে সিলেটে যাওয়া আসা করত।
জনি ও সানি নামের দুই ভাইয়ের মাঝে সেই বড়। বাবা শাহ্ জাহাঙ্গীর বিভিন্ন মাজারপ্রেমি ছিলেন, ফলে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। আর এ সুযোগ কাজে লাগায় রনি। সে সিলেট থেকে চাকুরীবিহীন মাসে মোটা অংকের টাকা বাড়ি দিত। দোকান পাঠ ও রাস্তাঘাটে অবৈধ টাকার গরম দেখাত। ঘটনার পর থেকে সেসহ অন্যরা পলাতক আছে। পুলিশ সে ও তার সহযোগীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ধর্ষিত তরুণী তার স্বামীকে নিয়ে সিলেটের এমসি কলেজের ঘুরতে আসেন। ঘুরার এক পর্যায়ে রাত ৮ টার দিকে তরুণীর স্বামী সিগারেট খাওয়ার জন্য এমসি কলেজের গেইটের বাইরে বের হন। এসময় কয়েকজন যুবক তরুণীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যেতে চান। এতে তরুণীর স্বামী প্রতিবাদ করলে তাকে মারধোর শুরু করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এক পর্যায়ে তরুণী ও তার স্বামীকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এমসি কলেজের হোস্টেলে নিয়ে যান। সেখানে স্বামীকে বেঁধে ছাত্রলীগের তিন-চারজন নেতাকর্মী তরুণীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন।
এসময় তাদের সাথে থাকা ৯০ টি মডেলের একটি কারও ছিনিয়ে নিয়ে যান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে কারটি তাদের জিম্মায় নেয়। এবং তরুণীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে প্রেরণ করে।
এদিকে বিষয়টি প্রচারের পর হবিগঞ্জে নিন্দার ঝড় বইছে। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা শুনার পরেই তার এলাকায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। উঠেছে নিন্দার ঝড়। লোকজন রীতিমতো ফুঁসে উঠেছেন। এলাকার কিছু মানুষের সাথে কথা বললে বিষয়টি নিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এসময় তারা বলেন, এ ঘটনাটি ছাড়াও রনির বিরুদ্ধে আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। তার ধারা বিভিন্ন সময়েই এলাকার মানুষ নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে। এই অপরাধীর জন্য এলাকাবাসী লজ্জিত। এসময় তারা রনিকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার দাবী জানান।
এলাকাবাসী বলেন, অপরাধী যে দলেরই হোক, অপরাধ করলে শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে বলে মনে করছেন অনেকে। একজন গৃহবধূকে ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠের ছাত্রাবাসে ধর্ষণ করে তারা কলেজকে কলুষিত করেছে।
Leave a Reply